দেশের বিভিন্ন মাদ্রাসায় বহু ছেলেশিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। আর এর জন্য দায়ী হচ্ছেন কখনো খোদ মাদ্রাসার শিক্ষক তথা মাদ্রাসাসংশ্লিষ্টরা।
দিনাজপুর সদর উপজেলার সোনাপীর দারুল উলুম কওমি মাদ্রাসার এক ছাত্রকে (১৪) ধর্ষণের অভিযোগে ওয়াক্কাস আলী (২৭) নামে এক শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (২৯ জুলাই) বিকেল ৫টার দিকে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত ওয়াক্কাস আলী দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার কাজল গ্রামের তাবেজ আলীর ছেলে ও দিনাজপুর শহরের সর্দারপাড়া সোনাপীর দারুল উলুম কওমি মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সোনাপীর দারুল উলুম কওমি মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের অধ্যায়নরত এক ছাত্রকে চলতি বছরের ২ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টার দিকে মাদ্রাসাশিক্ষক ওয়াক্কাস আলী তার কক্ষে ডেকে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করেন। পরে তাকে বিষয়টি অন্য কাউকে না জানানোর জন্য হুমকি দেন।
পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি জানতে পারলে মাদ্রাসার মুহতামিম আফজাল হোসেনকে অবগত করে বিচার দাবি করেন। পরে গত ২৮ জুলাই পরিবারের পক্ষ থেকে কোতোয়ালি থানায় মামলা করলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক ওয়াক্কাস আলীকে গ্রেপ্তার করে।
দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) গোলাম মাওলা বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ওই ছাত্রকে ফরেনসিক রিপোর্টের জন্য এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
মাদ্রাসাশিক্ষক ওয়াক্কাস আলী তার কক্ষে ডেকে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করেন। পরে তাকে বিষয়টি অন্য কাউকে না জানানোর জন্য হুমকি দেন।
দেশের মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষার্থীদের ওপর যৌন নির্যাতনের খবরে শিউরে উঠছে সারা দেশ। যদিও মাদ্রাসাগুলোতে ক্রমবর্ধমান এই ধর্ষণ নিয়ে মাথাব্যথা নেই সরকারের। দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোও সরব নয়। নেই বার্ষিক কোন প্রতিবেদন। তাই এই সব নির্যাতনের প্রকৃত চিত্র থেকে যাচ্ছে অজানা।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের পর শিক্ষার্থীরা লজ্জা, ভয়, নানান কিছুর কারণে তা প্রকাশ করে না। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে সবথেকে কম কথা বলা হয়। এর কারণ হয়তো সেক্স, অপ্রাপ্তবয়স্ক ভুক্তভোগী এবং ধর্মের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে মানুষের অন্ধবিশ্বাস।
মাদ্রাসা শিক্ষক কর্তৃক একের পর এক শিশু ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা মাদ্রাসা বিষয়ে দেশবাসীর নিকট এক নেতিবাচক মনোভাব তৈরী হয়েছে।
বিভিন্ন সংবাদ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে জানা যাচ্ছে, আবাসিক মাদ্রাসাগুলোতে ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আর এদের বেশির ভাগই সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশ থেকে আসা। সাধারণ শিক্ষার ব্যয় বহন করতে না পেরে অনেক অভিভাবকই সন্তানদের মাদ্রাসায় পাঠিয়ে থাকেন। ধর্মীয় চেতনা থেকেও শিক্ষার্থীদের মাদ্রাসায় পাঠানো হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হুট করেই এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্ষণ বেড়ে যায়নি। এসব প্রতিষ্ঠানে যৌন নির্যাতনের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। তবে এসব ঘটনা নিয়ে এক ধরনের নীরবতা লক্ষ করা যাচ্ছে সবার মধ্যেই। কেমন একটা রাখঢাক অবস্থা। কিছু দেখিনি, জানি না, বা কোনো অভিযোগ পাইনি, এমন ভান করছেন সবাই। সরকার খুব বেশি কথা বলছে না। ওদিকে মাদ্রাসাগুলোর কর্তৃপক্ষ ও শীর্ষস্থানীয় আলেমরা বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। উভয় পক্ষ মনে করছে, এ বিষয় নিয়ে খোলামেলাভাবে কথা বললে দেশের ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে। কিন্তু চুপ থাকা বা নীরবতা সমস্যার সমাধান বয়ে আনবে না। বরং পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহতার দিকে নিয়ে যাবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১২৫৬
আপনার মতামত জানানঃ