‘মেটাভার্স’ শব্দটি মূলত ভার্চ্যুয়াল দুনিয়া। এটি এমন ত্রিমাত্রিক ভার্চ্যুয়াল দুনিয়া, যেখানে অনেক মানুষ একসঙ্গে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যুক্ত হতে পারেন। প্রত্যেকের ত্রিমাত্রিক আভাটার বা অবতারের মাধ্যমে ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায় পারস্পরিক যোগাযোগ হয়ে থাকে। ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ বলেছেন, ফেসবুকসহ তার প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য সেবার ভবিষ্যৎ হলো এই মেটাভার্স। তাই তিনি ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠানের নাম বদলে রেখেছেন ‘মেটা’। ধারণা করা হচ্ছিল, নাম পরিবর্তন করে দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে যাবে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু মেটা এখন বেশ কিছু বাধার মধ্যে পড়েছে।
কোম্পানির ইতিহাসে বড় ধরনের আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা। গত কয়েক মাসের বিজ্ঞাপন সেলস কমে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে জানিয়েছে মেটার মুখপাত্র।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানা যায়, গত তিন মাসেই মেটার মোট সম্পত্তির ১ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ২৮ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে পরিণত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, টিকটকসহ অন্যান্য প্ল্যাটফর্মগুলোতে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এমনটা হয়েছে।
মেটার ইতিহাসে এই প্রথম রাজস্ব পতনের ঘটনা দেখা গেলো। সম্প্রতি তাদের তৃতীয় ত্রৈমাসিকের রিপোর্টে এই দুঃসংবাদটি দেখা যায়। মূলত মুদ্রাস্ফীতির কারণে ডিজিটাল অ্যাড সেলে এই বিপর্যয়টি ঘটে।
মেটা জানায়, তৃতীয় ত্রৈমাসিকে এই পতন হতে পারে ২৬ বিলিয়ন এবং ২৮.৫ বিলিয়ন ডলার। এদিকে রিফিনিটিভের আইবিইএস এর ডাটা অনুযায়ী বিশ্লেষকরা ধারণা করছে এর পরিমাণ ৩০.৫২ বিলিয়ন ডলার।
কোম্পানির ইতিহাসে বড় ধরনের আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা। গত কয়েক মাসের বিজ্ঞাপন সেলস কমে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে জানিয়েছে মেটার মুখপাত্র।
রেফিনিটিভ জানায়, অনেকটাই অ্যাড সেল নির্ভর পুরো রেভিনিউ দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে এক শতাংশ কমে হয়েছে ২৮.৮ বিলিয়ন ডলার। যা গত বছর দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ছিল ২৮.৯ বিলিয়ন ডলার। এদিকে ব্যবহারকারীর বৃদ্ধি নিয়েও মিশ্র ফল দেখা গেছে। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী পাওয়া গিয়েছে ২.৯৩ বিলিয়ন যা বছরের হিসেবে এক শতাংশ বৃদ্ধি। এদিকে দৈনিক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১.৯৭ বিলিয়ন।
অবশ্য নতুন মুদ্রা বিনিময় হার থেকে মেটা আশা করছে তৃতীয় ত্রৈমাসিকে এর রেভিনিউ ছয় শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। সব মিলিয়ে মেটা এখনও আশা করছে অনলাইন অ্যাড সেলই তাদের ভবিষ্যৎ। আবার একই সময়ে গুগলের রেভিনিউ বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরদিকে স্ন্যাপ এবং টুইটারের সংবাদ ভালো নয়। আগামী ত্রৈমাসিকেও ভালো খবর আসবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে বলে জানায় সংবাদ মাধ্যমটি।
অর্থনৈতিক চাপ ছাড়াও মেটার মূল ব্যবসায় আরেকটি চাপের কারণ হয়েছে টিকটক। আবার গত বছর অ্যাপলের বিজ্ঞাপনের ওপরে প্রাইভেসি কন্ট্রোলের কারণেও চাপের মুখে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এদিকে মেটাভার্সের সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যারের দিকেও যথেষ্ট বিনিয়োগ করতে হচ্ছে তাকে। তবে কিছুটা আশার আলো দেখিয়েছে রিল নামে তাদের শর্ট ভিডিও পণ্যটি। এটি আপাতত বছরে এক বিলিয়ন ডলার রেভিনিউ আনছে।
বিশ্বের বিজ্ঞাপনী বাজারের মোট ২০ শতাংশ ফেসবুকের দখলে। প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থান ধরে রাখলেও মহামারির পর ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়া কমিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া অনলাইন বিজ্ঞাপনী বাজারে ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাবও পড়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মেটা প্রধান মার্ক জাকারবার্গ জানিয়েছেন, আগামী বছর প্রতিষ্ঠানটি নিয়োগের ক্ষেত্রে আরও সচেতন হবে। বেশি বেশি নতুন লোক কোম্পানিতে নিয়োগ না করে, নতুন নতুন খাতে বিনিয়োগ করা হবে। বিশেষ করে ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি প্ল্যাটফর্ম বা তথাকথিত মেটাভার্স প্রজেক্টে বিনিয়োগ বাড়াবে।
গত জুন পর্যন্ত ফেসবুকে প্রতিদিন গড়ে ১ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন মানুষ লগ ইন করছেন। সেখানে কয়েক মাস আগে গড়ে ২ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন মানুষ প্রতিদিন লগইন করেছেন।
প্রতিষ্ঠানটি বছরের মাঝামাঝি এসে ৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য হারিয়েছে। এ নিয়ে মার্ক জাকারবার্গ বলেন, ‘সত্যিকার অর্থেই মেটা একটি চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিস্থিতির পরিবর্তনের পথ খুঁজে বের করছি। বিনিয়োগের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’
বিশ্লেষকরা বলেন, ‘মেটাভার্সের সুবিধা বা অসুবিধাগুলোর এখনো প্রমাণ মেলেনি। কারণ এটি নতুন ও জটিল প্রযুক্তি। কিছু গবেষণায় এর নেতিবাচক দিক সামনে এসেছে। জানা গেছে, মেটাভার্স অসামাজিক আচরণ বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই মানুষ শেষ পর্যন্ত মেটাভার্সকে গ্রহণ করবে নাকি প্রত্যাখ্যান করবে, তা দেখতে হবে।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৩৭
আপনার মতামত জানানঃ