ইসরায়েলকে বর্ণবাদী রাষ্ট্র ঘোষণার দাবি জানিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের উল্লেখযোগ্য অংশ ক্রমাগত দখল করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আফ্রিকার এই দেশটির সরকার।
দক্ষিণ আফ্রিকার অভিযোগ, পশ্চিম তীর ভূখণ্ডে নতুন বসতি গড়ে তোলা ‘আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের উজ্জ্বল উদাহরণ’।
আলজাজিরা জানিয়েছে, রাজধানী প্রিটোরিয়ায় অনুষ্ঠিত আফ্রিকায় ফিলিস্তিনি মিশন প্রধানদের দ্বিতীয় বৈঠকে দক্ষিণ আফ্রিকার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা মন্ত্রী নালেদি পান্ডর ইসরায়েলকে বর্ণবাদী রাষ্ট্র ঘোষণার দাবি জানান।
নালেদি পান্ডর বলেন, ফিলিস্তিনিদের বর্তমান অবস্থার সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী নিপীড়ন ও নির্যাতনের নিজস্ব ইতিহাসের অভিজ্ঞতার মিল রয়েছে। নিপীড়িত দক্ষিণ আফ্রিকান হিসেবে আমরা জাতিগত বৈষম্য, নিপীড়ন ও বঞ্চনার প্রভাবগুলো নিজেরাই অনুভব করেছি। ফিলিস্তিনিদের আরেকটি প্রজন্ম এখন সেই পরিস্থিতিতে থাকলেও আমরা তাদের পাশে দাঁড়াতে পারছি না।
নিপীড়িত দক্ষিণ আফ্রিকান হিসেবে আমরা জাতিগত বৈষম্য, নিপীড়ন ও বঞ্চনার প্রভাবগুলো নিজেরাই অনুভব করেছি। ফিলিস্তিনিদের আরেকটি প্রজন্ম এখন সেই পরিস্থিতিতে থাকলেও আমরা তাদের পাশে দাঁড়াতে পারছি না।
তিনি আরো বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বাস করে, ইসরায়েলকে একটি বর্ণবাদী রাষ্ট্র হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা উচিত এবং দেশটি প্রয়োজনীয় শর্তগুলো পূরণ করে কি না তা যাচাই করার জন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের একটি কমিটি গঠন করা উচিত।
এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার এই ফোরামে যোগ দিয়েছিলেন ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ মালকি। মঙ্গলবারের অধিবেশনের পর রাষ্ট্র পরিচালিত দক্ষিণ আফ্রিকান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের (এসএবিসি) সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
সেখানে মালকি বলেন, ‘যদি বিশ্বে এমন কোনো দেশ বা (একাধিক) দেশ থেকে থাকে যারা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রাম এবং দুঃখ-কষ্ট বুঝতে পারে, তাহলে সেসব দেশ হলো আফ্রিকা মহাদেশের এবং আফ্রিকার জনগণ।’
এর আগে ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলি নীতি বর্ণবাদী বলে জানিয়েছিল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নতুন এক রিপোর্ট সংস্থাটি জানায়, ইসরায়েলের ভেতর এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ব্যাপারে ইসরায়েলের নীতি, আইন, আচরণ ‘আ্যাপারথাইড’ অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদের সমতুল্য।
রিপোর্টে আরও বলা হয়, ইসরায়েল এমন একটি নির্যাতনমূলক প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা কায়েম করেছে যা প্রয়োগ করে ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর ওপর কর্তৃত্ব ফলানো যায়।
ওই রিপোর্টে বলা হয়, ‘ইসরায়েলের ইহুদিদের স্বার্থে ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্যাতন এবং তাদের ওপর কর্তৃত্ব ও প্রাধান্য বজায় রাখতে ইসরায়েল রাষ্ট্র একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা কায়েম করেছে।’
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক আইনে এ ধরনের ‘অ্যাপারথাইড’ অর্থাৎ নির্যাতন এবং বৈষম্যমূলক আইনের মাধ্যমে একটি জনগোষ্ঠীর ওপর অন্য জনগোষ্ঠীর কর্তৃত্ব এবং শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়।
ইসরায়েল ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ওপর ‘পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ’ কায়েমের চেষ্টা করছে। ফিলিস্তিনে দখলদারত্ব অবসানের কোনো ইচ্ছাই নেই ইসরায়েলের। এনিয়ে চলতি বছরের রমজান মাস থেকে ইসরায়েল–অধিকৃত ফিলিস্তিনের মাটিতে বড় ধরনের উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলি সেনাদের হাতে গত বছরের (২০২১) চেয়ে চলতি বছরের (২০২২) প্রথম ছয় মাসে বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৬ শতাংশ বেশি।
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনের বরাতে এ তথ্য জানায় ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক স্থানীয় কার্যালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে নিহত হয়েছিলেন ৪১ জন।
জাতিসংঘ বলছে, ২০২১ সালে ইসরায়েলের সেনাদের হাতে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ছিল ৭৮। আর ২০২০ সালে ২৪ জন।
আন্তর্জাতিক আইন পরিপন্থি এ কাজ করার জন্য প্রতিবেদনে আইডিএফ, বর্ডার পুলিশ এবং পুলিশের মতো ইসরায়েলের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬২৪
আপনার মতামত জানানঃ