বাহামা উপকূলে নৌকাডুবে অন্তত ১৭ অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা সবাই হাইতির নাগরিক। বাহামা সরকারের পক্ষ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। খবর বিবিসির।
বাহামার প্রধানমন্ত্রী ফিলিপ ডেভিস বলেছেন, ধারণা করা হচ্ছে নৌকায় ওই ব্যক্তিরা মিয়ামি, ফ্লোরিডা ও যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অভিবাসনপ্রত্যাশী এসব ব্যক্তি গাদাগাদি করে নৌকায় রওনা হয়েছিলেন। নৌকাটি থেকে এক নারীসহ ২৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে একটি শিশুও রয়েছে। উদ্ধার অভিযান চলছে। তবে এখনও একজন নিখোঁজ রয়েছেন।
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, স্থানীয় সময় রোববার রাত ১টার দিকে ৬০ জন যাত্রী নিয়ে নৌকাটি হাইতি থেকে যাত্রা শুরু করে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে দুজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তারা দুজনই বাহামার নাগরিক।
ভঙ্গুর অর্থনৈতিক অবস্থা চলছে হাইতিতে। এ দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করছে বহু মানুষ। এমন প্রেক্ষাপটে বাহামার উপকূল দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেক মানুষ।
এদিকে ইতালির দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকা থেকে পাঁচজনের লাশসহ প্রায় ৭০০ অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার ইতালির কোস্টগার্ডের এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ইতালির ক্যালাব্রিয়া উপকূল থেকে ১২৪ মাইল দূরে একটি মাছ ধরার নৌকায় ৬৭৪ অভিবাসীর বেশিরভাগকে পাওয়া গেছে। অন্যদের পানি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
ভঙ্গুর অর্থনৈতিক অবস্থা চলছে হাইতিতে। এ দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করছে বহু মানুষ। এমন প্রেক্ষাপটে বাহামার উপকূল দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেক মানুষ।
ইতালির কোস্টগার্ড, একটি বাণিজ্যিক জাহাজ এবং ফাইন্যান্স পুলিশের তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযানে অভিবাসীরা উদ্ধার হয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উদ্ধারকৃত অভিবাসীদের রোববার সকালের দিকে বন্দরনগরী সিসিলি এবং ক্যালাব্রিয়ায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সিসিলির মেসিনা শহরের হাসপাতালের মর্গে মৃতদেহ পাঁচটি আনা হয়েছে।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ইতালিতে ৩৪ হাজারের বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী এবং অভিবাসী পৌঁছেছেন। যা গত বছরের একই সময়ের সাড়ে ২৫ হাজারের তুলনায় বেশি।
ইউক্রেন সংঘাতের কারণে সৃষ্ট খাদ্য ঘাটতিতে আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্য থেকে নতুন করে ইউরোপমুখী অভিবাসীদের ঢলের হুমকি দেখা দিয়েছে। চলতি বছর ইউরোপযাত্রার অন্যতম সমুদ্রপথ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে দেড় লাখের বেশি অভিবাসী পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রোববার সকালের দিকে নরওয়ের পতাকাবাহী জাহাজ ওশান ভাইকিং লিবিয়া উপকূলের কাছে আন্তর্জাতিক জলসীমায় একটি রাবারের নৌকা ভাসতে দেখে। পরে সেই নৌকা থেকে ৫৭ শিশুসহ ৮৭ জনকে উদ্ধার করা হয় বলে এক টুইট বার্তায় জানানো হয়েছে।
এর আগে শনিবার পৃথক ঘটনায় জার্মানির একটি বেসরকারি সংস্থার তল্লাশি ও উদ্ধারকারী জাহাজ সি-ওয়াচ ভূমধ্যসাগরে চারটি নৌকা ভাসতে দেখে। এসব নৌকা থেকে কয়েকজন ছোট শিশু এবং দুই গর্ভবতী নারীসহ ৪০০ জনের বেশি অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়।
সি-ওয়াচের মতে, সমুদ্রে ঢেউ এবং বাতাসের তীব্রতা না থাকায় ইতালীয় উপকূলে অভিবাসীরা সহজেই পৌঁছাতে পেরেছেন।
প্রায়ই সংবাদ শিরোনাম হয় দালালের হাত ধরে ইতালি ও স্পেন প্রবেশের চেষ্টায় ভূমধ্যসাগরে ডুবে শত শত অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু। খবর আসে, আমেরিকায় যাওয়ার পথে বনে-জঙ্গলে দালালের অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তারা। ইউরোপে ঢোকার আশায় বলকানের বরফঢাকা জঙ্গলে হাজারো মানুষ মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে অপেক্ষায় থাকার সংবাদও আসে।
ভালো পারিশ্রমিকের আশায় কয়েক বছর ধরে পাচারকারীদের সহায়তায় লিবিয়া যাচ্ছেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। সেখান থেকেই ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকে। এরপরও ঝুঁকিপূর্ণ এ প্রবণতা বন্ধ হয়নি। এ ছাড়া প্রতারণার শিকার হয়ে লিবিয়ায় মানবপাচারকারীদের হাতে বহু অভিবাসনপ্রত্যাশী আছেন আটক অবস্থায়।
বিশ্বে করোনার আগমনের পর থেকে যে কোনো কারণেই এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়া কঠিনতর হয়ে উঠেছে। অভিবাসনপ্রার্থী মানুষের জন্য প্রায় আরও অসম্ভব হয়ে উঠেছে অনুমোদন পাওয়া। এজন্য অনেকেই ঝুঁকছে অনৈতিক প্রক্রিয়ায় অভিবাসনের প্রতি। আর এভাবে দেশান্তরি হতে গিয়ে অনেকেই মৃত্যুর মুখে পড়ছে, কেউবা হচ্ছেন নিখোঁজ।
গত বছর স্পেনে পৌঁছানোর চেষ্টা করা অভিবাসন প্রত্যাশীদের মধ্যে ৪ হাজার ৪০০ জনের বেশি সমুদ্রে হারিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছে ওয়াকিং বর্ডার নামের একটি পর্যবেক্ষণকারী গোষ্ঠী। নিখোঁজ এ অভিবাসন প্রত্যাশীদের মধ্যে অন্তত ২০৫টি শিশুও আছে বলে জানিয়েছে তারা।
জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম)-এর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর মধ্য ভূমধ্যসাগরীয় পথে অসংখ্য নৌকা দুর্ঘটনা ও জাহাজডুবির ঘটনায় অন্তত দেড় হাজার শরণার্থী ডুবে গেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৩৪
আপনার মতামত জানানঃ