চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে করা মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্রলীগ কর্মীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব ৭।
গতকাল শুক্রবার(২২ জুলাই) রাতে রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ওই ছাত্রীর মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে তিনজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের কর্মী। বাকি দুজন বহিরাগত ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতির অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আজ শনিবার(২৩ জুলাই) সকালে বিষয়টি জানিয়েছেন র্যাব ৭ হাটহাজারী কোম্পানি কমান্ডার মাহফুজুর রহমান।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. আজিম, নুর হোসেন শাওন, নুরুল আবছার বাবু, মেহেদী হাসান হৃদয়, মাসুদ রানা। তাদের মধ্যে মেহেদী, আজিম ও নুরুল আবছার বাবু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের কর্মী। মেহেদী ইংরেজি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ, আজিম ইতিহাস বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও নুরুল আবছার বাবু নৃবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
এ ছাড়া বাহিরাগত শাওন হাটহাজারী কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী ও মাসুদ হাটহাজারী কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানান, ‘এত রাতে বাইরে কেন’ জানতে চেয়ে মারধর শুরু করে। তখন ছাত্রীটির বন্ধু বাধা দিলে তাকে এলোপাথাড়ি কিল-ঘুসি, লাথি মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে। এক পর্যায়ে আসামিরা ভুক্তভোগী ও তার বন্ধুকে জোর করে বেগম ফজিলাতুন নেছা হলের পেছনে নিয়ে যায়। এসময় জিজ্ঞেস করে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন সেশনে ও বিভাগে পড়াশুনা করেন। আসামিরা ওই ছাত্রীকে এসময় যৌন হয়রানি করে এবং ভিডিও ধারণ করে।
‘এত রাতে বাইরে কেন’ জানতে চেয়ে মারধর শুরু করে। তখন ছাত্রীটির বন্ধু বাধা দিলে তাকে এলোপাথাড়ি কিল-ঘুসি, লাথি মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে।
র্যাব আরও জানায়, আসামিদের একজন হুমকি দেয়; তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক না করলে ধারণকৃত ভিডিও ভাইরাল করে দেবে। তারা ওই ছাত্রী ও তার বন্ধুকে প্রায় এক ঘণ্টা আটক করে দুটি মোবাইল সেট ও নগদ ১৩ হাজার ৭০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়।
র্যাব জানায়, ঘটনার পর ছাড়া পেয়ে ওই ছাত্রী তাৎক্ষণিক পুরো ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানায়। এরপর ঘটনাটি চারদিকে জানাজানি হলে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার শুরু থেকেই তদন্ত শুরু করে র্যাব-৭।
১৭ জুলাই (রোববার) রাত সাড়ে ৯টায় ক্যাম্পাসে পাঁচ তরুণের হাতে এক ছাত্রী যৌন নিপীড়ন ও মারধরের শিকার হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় পাঁচ তরুণ ওই ছাত্রীকে বেঁধে বিবস্ত্র করে মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করেন। এ সময় তার সঙ্গে থাকা এক বন্ধু প্রতিবাদ করলে তাকেও মারধর করা হয়। ছিনিয়ে নেওয়া হয় মোবাইল ফোন।
পরে এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দিলে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ছাড়া জড়িত পাঁচজনকে আসামি করে থানায় মামলাও করেন ওই শিক্ষার্থী।
এদিকে, যৌন নিপীড়নের এ ঘটনার জেরে ছাত্রীদের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এরই মাঝে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রীদের হলে প্রবেশের ব্যাপারে সময়সীমা বেঁধে দেয়। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন করে ক্ষোভ দেখা দেয়। ছাত্রী হেনস্তা এবং নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে বৃহস্পতিবার দিনভর শিক্ষক, সাধারণ শিক্ষার্থী, ছাত্রলীগ এবং প্রগতিশীল ছাত্রজোট মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল করে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আগেও বেশ কিছু শিক্ষার্থী যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। এমনকি সাম্প্রতিক সময়েও বিশ্ববিদ্যালয়টির একাধিক ছাত্রী যৌন নিপীড়ন ও হেনস্তার শিকার হয়েছেন। বেশির ভাগ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা শাস্তি পায়নি। ক্যাম্পাসের ভেতরে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় অভিযোগ ওঠে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের কর্মীদের বিরুদ্ধেও। কিন্তু এ নিয়ে কোনো ভূমিকাই রাখতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আমাদের রাষ্ট্রজুড়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি বিরাজ করছে। এই ধরনের ঘটনায় অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। ভুক্তভোগীরা বিচার পাচ্ছেন না। এই বিচারহীনতার সংস্কৃতির প্রভাব পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও। এ কারণে এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা, আগের সব ঘটনাকে ছাপিয়ে গেছে। ভুক্তভোগীকে বিচারের আশায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এটা সেই বিচারহীনতার সংস্কৃতির ফলাফল।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৫২
আপনার মতামত জানানঃ