পাহাড়ে–সমতলে যারা প্রাণ–প্রকৃতি রক্ষা করে চলেছেন, তারা এখন নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার। এখন পর্যন্ত কোনো ঘটনার বিচার হয়নি। ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের নিরাপত্তা নেই। পার্বত্য অঞ্চলে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হচ্ছে। গণমাধ্যমেও সব খবর আসে না।
সাম্প্রতিক সময়ে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষদের ওপর হামলা, হত্যা ও বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিচার চেয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে কয়েকটি ছাত্র সংগঠন।
আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও বাংলাদেশ ত্রিপুরা খ্রিষ্টান স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
রাঙামাটির বিলাইছড়িতে ত্রিপুরা জাতিসত্তার তিনজনকে হত্যা, খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে ৩৭টি পরিবারের বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট, টাঙ্গাইলের মধুপুরে গারোদের হত্যার হুমকির প্রতিবাদে এ আয়োজন করা হয়।
তারা বলছে, পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৫ বছরে এক দিনের জন্যও সেখানে শান্তি আসেনি। বর্তমান সরকার দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকলেও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ওপর হওয়া কোনো নির্যাতনের বিচার হয়নি। পার্বত্য অঞ্চল ‘ভাগ করো ও শাসন করো’ নীতিতে পরিচালিত হচ্ছে। ক্ষুদ্র জাতিসত্তারা কোনো অশান্তি চায় না।
বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলিক মৃ বলেন,বর্তমান সরকার নিজেদের ক্ষুদ্র জাতিসত্তাবান্ধব বলে দাবি করে, কিন্তু তারা তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করেনি। একের পর এক সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার, কোনো বিচার হয়নি।
পাবর্ত্য শান্তিচুক্তির সঠিক বাস্তবায়ন, সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় এবং ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের দেওয়া নির্বাচনী ইশতেহারের বাস্তবায়নের দাবি জানায় এসব ছাত্র সংগঠন। এ ছাড়া দাবি মানা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে বিক্ষোভ সমাবেশে বলা হয়।
পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৫ বছরে এক দিনের জন্যও সেখানে শান্তি আসেনি। বর্তমান সরকার দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকলেও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ওপর হওয়া কোনো নির্যাতনের বিচার হয়নি।
আদিবাসী যুব ফোরামের সভাপতি অনন্ত ধামাই বলেন, যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন, তারাই অশান্তি করছেন। পাহাড়িরা এবং ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষেরা কোনো অশান্তি চায় না।
সরকার পরিবর্তিত হয়, কিন্তু ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠনের ঢাকা মহানগরের সভাপতি ডন জেত্রা।
তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের কদর বেড়ে গেলেও নির্বাচনের পর তাদের কথা কেউ ভাবেন না।
বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বুশ নকরেক বলেন, মানুষ খুন হচ্ছে, বসতবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, রাষ্ট কোথায়? রাষ্ট্র আদিবাসীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ।
বিক্ষোভ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ত্রিপুরা খ্রিষ্টান স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের ঢাকা মহানগর শাখার গৌরব ত্রিপুরা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ঢাকা মহানগরের রেং ইয়ং ম্রো প্রমুখ।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর হয়। স্বাক্ষরিত এই চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান হয়েছিল। তবে পরবর্তী সময়ে চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়ায় দিনে দিনে অশান্ত হয়ে ওঠে পাহাড়।
আদিবাসীবিষয়ক গবেষকরা বলেন, পাহাড়ের মূল সমস্যা ভূমি সমস্যার নিষ্পত্তি না হওয়া। ক্ষুদ্র নৃ-তান্ত্রিক জনগোষ্ঠীরা দিনদিন ভূমিহারা হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে তাদের ভূমি হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। চিম্বুক পাহাড়ও দখল হয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ে ফাইভ স্টার হোটেলসহ সব ধরনের ট্যুরিজম বন্ধ করে ইকো ট্যুরিজম গড়ে তোলা প্রয়োজন।
শান্তিচুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হলে পাহাড়ে শান্তি ফিরবে এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা। সেই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো তৎপর হওয়ার দাবি তাদের।
বিশ্লেষকরা বলেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর পাহাড়ের অবৈধ অস্ত্র থাকা যেমন বেআইনি; তেমনি পার্বত্য শান্তিচুক্তির যথাযথ বাস্তবায়নও কাম্য। পাহাড় থেকে অস্ত্র উঠে গেলে যেমন শান্তি ফিরে আসবে, তেমনি পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন হলেই তার অনেকাংশে সমাধান হয়ে যাবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭১৪
আপনার মতামত জানানঃ