উজবেকিস্তানের কারকালপাকস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রত্যাহারের একটি সংবিধান সংশোধনীর বিষয় জনসমক্ষে প্রকাশের পর অঞ্চলটিতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটায় অঞ্চলটিতে কারফিউ জারি করা হয়েছে।
উজবেকিস্তানের সংবিধানে কারাকালপাকস্তান প্রদেশকে স্বায়ত্তশাসন দেয়া আছে। উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিওয়েভ সম্প্রতি সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদটি বাতিলের পরিকল্পনা করেন। প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে স্থানীয় জনগণ। প্রাদেশিক রাজধানী নুকুসে শুক্রবার বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। একপর্যায়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিক্ষুব্ধরা।
নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ঘটনায় ১৮ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন অন্তত ২৪৩ জন। উজবেকিস্তান কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে
রাশিয়ার বার্তা সংস্থা রিয়া নভোস্তি রাষ্ট্রীয় প্রসিকিউটর অফিসের কর্মকর্তা আবরর মামাতোভকে উদ্ধৃত করে জানায়, নুকুসে ব্যাপক সংঘর্ষের সময় গুরুতর আঘাতে ১৮ জন মারা গেছে।
উজবেকিস্তানের ন্যাশনাল গার্ড জানিয়েছে, শুক্রবার বিক্ষোভের সময় ৫১৬ জনকে আটক করা হয়েছিল। তাদের অনেককেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা এদিন স্থানীয় সরকারি ভবনগুলো অবরুদ্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন।
রিপাবলিক অব কারাকালপাকস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রধান সুলতানবেক জিয়ায়েভ নিউজ ওয়েবসাইট দারিও ডট ইউজেডকে বলেছেন, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে আহতদের দিয়ে নুকুসের হাসপাতালগুলো ভরে গেছে।
কারাকল্পকস্তানে মূলত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বসবাস। সেখানে উজবেকের চেয়ে বেশি প্রচলিত কাজাখ ভাষা। সেখানকারই স্বশানের অধিকার খর্ব করতে চেয়েছিলেন দেশের প্রেসিডেন্ট যা ভাল চোখে দেখেননি স্থানীয় বাসিন্দারা।
গত শুক্রবার প্রশাসনিক রাজধানী নুকাসের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সরকারি ভবনে আগুন লাগিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। রাস্তায় জ্বালিয়ে দেওয়া হয় প্রচুর গাড়ি। ভেঙে ফেলা হয় ব্যারিকেড। পুলিশ-জনতা সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। আহত অনেককে হাসপাতালে ভর্তি।
মধ্য এশিয়ার দেশ উজবেকিস্তানে ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষের বসবাস। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার যে সহিংসতা হয়েছে, তা উজবেকিস্তানে গত প্রায় দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ।
অরল সাগরের তীরে কারাকালপাকস্তান অঞ্চলের অবস্থান। সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী কারাকালপাকদের বসবাস এখানে। তারা যে ভাষায় কথা বলেন, তার সঙ্গে উজবেকের চেয়ে কাজাখ ভাষার মিল বেশি পাওয়া যায়।
বিক্ষোভের মুখে গত শনিবার উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিয়োয়েভ সংবিধানে সংশোধনী আনার পরিকল্পনা বাতিল করেন। শনিবার উত্তর–পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশটিতে এক মাসের জরুরি অবস্থাও ঘোষণা করেন তিনি।
সাংবিধানিক সংশোধনীর অংশ হিসেবে কারাকালপাকস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রত্যাহার করার একটি পরিকল্পনা প্রকাশিত হওয়ার পর অঞ্চলটিতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
প্রেসিডেন্ট মিরজিওয়েভের দাবি, প্রস্তাবিত সংস্কারের বিষয়ে ভুল-বোঝাবুঝির কারণে এমন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে কারাকালপাকস্তানের অবস্থা অপরিবর্তিত থাকবে এবং সংশোধনীর চূড়ান্ত প্রস্তাব গণভোটের জন্য রাখা হবে।
একই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট সতর্ক করে বলেছেন, ‘যারা শান্তি ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪০৪
আপনার মতামত জানানঃ