প্রতি মাসে কম বেশি সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে। প্রাণ ঝরছে অনেক মানুষের। গত জুন মাসে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪৬৭টি। নিহত হয়েছেন ৫২৪ এবং আহত ৮২১ জন। এরমধ্যে নারী ৬৮ শিশু ৭৩।
সারাদেশে সংগঠিত দুর্ঘটনার মধ্যে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। বিভাগে শুধুমাত্র জুন মাসে ১১৭টি দুর্ঘটনায় ১৩৯ জন নিহত হয়েছে। গত মাসে রাজধানী ঢাকায় ১৪ টি দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত ও ৬ জন আহত হয়েছে। এর আগের মাসে (মে ২০২২) সড়ক দুর্ঘটনায় ৬৪১ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
আজ সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে সংগঠনটি।
নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমানের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সড়ক দুর্ঘটনায় গত জুন মাসে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৭ দশমিক ৪৬ জন করে নিহত হয়েছে।
মে মাসে প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছিল ২১ জন। মে মাসের তুলনায় জুন মাসে প্রাণহানি বেড়েছে কমেছে। দুর্ঘটনায় ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষ নিহত হয়েছেন ৪১৩ জন, যা মোট নিহতের ৭৮ দশমিক ৮১ শতাংশ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪৬৭টি। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো ৮২১ জন মানুষ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২০৪ জন চালক ও আরোহী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ৩৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
দুর্ঘটনায় ১০৭ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২০ দশমিক ৪১ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৮৬ জন, যা মোট নিহতের ১৬ দশমিক ৪১ শতাংশ। এ সময়ে ৮টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহত হয়েছেন এবং ৩ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ১৮টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত এবং ৪ জন আহত হয়েছে।
গত মাসে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু হার সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে। এ বিভাগে দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৫ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ আর প্রাণহানি হয়েছে ২৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। এছাড়া রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৫ দশমিক ৪১ শতাংশ ও প্রাণহানি ১৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ ও প্রাণহানি ১৬ দশমিক ২২ শতাংশ। খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ, প্রাণহানি ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৯ শতাংশ, প্রাণহানি ৮ দশমিক ২০ শতাংশ, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ২ দশমিক ৭৮ শতাংশ, প্রাণহানি ২ দশমিক ৬৮ শতাংশ, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ, প্রাণহানি ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৬ দশমিক ৪২ শতাংশ, প্রাণহানি ঘটেছে ৬ দশমিক ১০ শতাংশ।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে- ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ ২৬.২২%, ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি-তেলবাহী ট্যাঙ্কার-প্রিজনভ্যান-সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাক ৪.২৮%, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-জিপ-পুলিশ পিকআপ, আর্মি ট্রাক ৩.৬৫%, যাত্রীবাহী বাস ৯.৮৩%, মোটরসাইকেল ২৬.৭৩%, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা-হিউম্যান হলার) ১৮.৭৮%, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন-(নসিমন-ভটভটি-টমটম-মাহিন্দ্র-চান্দের গাড়ি) ৬.৪৩%, বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-প্যাডেল ভ্যান ২.৯% এবং অন্যান্য (ডাম্পার-ড্রামট্রাক-রোড রোলার-ইটভাঙ্গার গাড়ি) ১.১৩%।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৭৯৩ টি। (ট্রাক ১৩০, বাস ৭৮, কাভার্ডভ্যান ২৪, পিকআপ ৫৪, ট্রলি ১১, লরি ৫, ট্রাক্টর ১৩, তেলবাহী ট্যাঙ্কার ২, প্রিজনভ্যান ২, ঢাকা সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাক ১, মাইক্রোবাস ৮, প্রাইভেটকার ১৩, অ্যাম্বুলেন্স ৪, জীপ ২, পুলিশ পিকআপ ১, আর্মি ট্রাক ১, মোটরসাইকেল ২১২, থ্রি-হুইলার ১৪৯ (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা-হিউম্যান হলার), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৫১ (নসিমন-ভটভটি-মাহিন্দ্র-টমটম-চান্দের গাড়ি), বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-প্যাডেল ভ্যান ২৩ এবং অন্যান্য ৯ টি (ডাম্পার, ড্রামট্রাক, রোড রোলার, ইট ভাঙ্গার গাড়ি)।
সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৫.৭৮%, সকালে ৩৩.৮৩%, দুপুরে ২৪.৪১%, বিকালে ১৫.৬৩%, সন্ধ্যায় ৫.৩৫% এবং রাতে ১৪.৯৮%।
এসব সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য প্রধান কিছু কারণ চিহ্নিত করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। এগুলো হলো, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ ও যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএয়ের সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।
সড়কে দুর্ঘটনা রোধে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে সংগঠনটি। এগুলো হলো, দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বাড়ানো, চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, বিআরটিএয়ের সক্ষমতা বাড়ানো, পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের ওপর ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্ব রাস্তা (সার্ভিস রোড) তৈরি করা, পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করা, গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, রেল-নৌপথ সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে সড়ক পথের উপর চাপ কমানো, টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করা।
এসডব্লিউ/এসএস/১৮২৫
আপনার মতামত জানানঃ