গাঁজার নানা উপকারিতা ও অপকারিতার কথা আমরা শুনেছি। এটি যেমন নেশাদ্রব্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তেমনি ব্যবহৃত হয় ওষুধের উপকরণ হিসেবেও।
চিকিৎসায় গাঁজার ব্যবহার নিয়ে বর্তমানে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা সবসময়ই একটা জুতসই মতামত দেন। তাই বিশ্বব্যাপী গাঁজা নিয়ে থাকা বিরুপ ধারণা পাল্টে যাচ্ছে মানুষের।
নতুন একটি গবেষণা জানাচ্ছে গাঁজার ফুলও অবসন্নতার চিকিৎসায় কার্যকর সমাধান হতে পারে।
চলতি বছরের এপ্রিলে কার্গার জার্নালে প্রকাশিত হয় গবেষণা নিবন্ধটি। এটি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নিউ মেক্সিকোর গবেষক দল। মনোরঞ্জন ও চিকিৎসা উভয় কাজে ব্যবহৃত গাঁজার ফুল কীভাবে অবসন্নতা সারাতে পারে তা জানতেই ছিল এ অনুসন্ধান।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ছিলেন ১,২২৪ জন। ২০১৬ সালের ৬ জুন থেকে ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট পর্যন্ত নিজেরাই শুকনো গাঁজার ফুল পুড়িয়ে তার ধোঁয়া সেবন করেন এসব ব্যক্তি। এসব সেবনের তথ্য তারা গবেষক দলকে জানান রিলিফ নামের একটি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গাঁজা সেবনের পর ৯১.৯৪ শতাংশের মধ্যে অবসন্নতা অনেকখানি কমে গেছে।
ইন্ডিকা, সাটিভা বা হাইব্রিড যেকোনো ধরনের গাঁজাই এনে দিয়েছে এ সুফল। তবে মিশ্রিত গাঁজার ধোঁয়া সেবনে এই উপসর্গের উল্লেখযোগ্য নিরাময় ঘটেছে। ভেপারাইজার ও পাইপ দুই পদ্ধতিতেই গাঁজা সেবন করেছিলেন গবেষণায় অংশ নেওয়ারা।
গবেষণার ফলাফল অনুসারে, অংশগ্রহণকারীদের মাত্র ২৪ শতাংশেরও কম গাঁজা সেবনের ফলে অবসন্নতার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মতো অনুভূতির শিকার হন। ফলে গবেষকরা এই উপসংহার টানেন যে, গাঁজার প্রভাব ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ব্যক্তিভেদে একেক রকম হতে পারে। এজন্য দায়ী হতে পারে কোনো ব্যক্তির খাদ্যাভ্যাস, আন্ত্রিক প্রক্রিয়া অথবা গাঁজা গাছের গুণাগুণের পার্থক্য।
গাঁজা সেবনের পর ৯১.৯৪ শতাংশের মধ্যে অবসন্নতা অনেকখানি কমে গেছে।
উপসর্গ নিরাময়ের সাথে ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা বা বয়সের তেমন পার্থক্য দেখা যায়নি। তবে নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে অবসন্নতা কাটিয়ে ওঠার হার বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে।
প্রচলিত বিশ্বাস এই যে, গাঁজা সেবনে অবসাদ বাড়ে। এতে সেবনকারীর কর্ম তৎপরতা কমে যায়। মানুষ উদ্দেশ্যহীন আচরণ করে, হারায় সমাজে টিকে থাকার প্রতিযোগী সক্ষমতা। সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল এই বিশ্বাসের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে।
এর আগে নিউ মেক্সিকো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষকের সাম্প্রতিক একটি গবেষণা বলছে, যাঁরা গঞ্জিকা সেবন করেন, তারা সাধারণত অনেক বেশি সহমর্মী ও নির্লোভ।
খ্যাতনামা একটি বিজ্ঞানপত্রে প্রকাশিত হয়েছে নিউ মেক্সিকো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের এই গবেষণা।
গবেষণাটি বলছে, যারা নিয়মিত নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে গঞ্জিকা সেবন করেন, তাদের অন্যদের প্রতি সহমর্মিতা বোধ অনেকটাই বেশি। অন্যরা যাতে ভাল থাকেন তা নিশ্চিত করতে অনেক বেশি সচেষ্ট তারা। পাশাপাশি এই ধরনের মানুষের অর্থলিপ্সাও কম বলে জানান, প্রধান গবেষক জেকব ভিজিল।
গাঁজাকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। সাধারণত মারিজুয়ানা, গঞ্জিকা, গাঞ্জা, সিদ্ধি এসব নামেই বেশি পরিচিত। মূলত গাঁজা উদ্ভিদের এক ধরনের প্রস্তুতি যা ‘সাইকোঅ্যাক্টিভ ড্রাগ’ এবং ঔষধ হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪২৩
আপনার মতামত জানানঃ