উত্তর কোরিয়ায় করোনা (কোভিড-১৯) মহামারির পাশাপাশি অন্ত্রের অজ্ঞাত আরেকটি রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার দেশটি এ কথা জানিয়েছে। এতে কোভিড-১৯ সংক্রমণে ধুঁকতে থাকা দেশটির স্বাস্থ্য খাত আরও চাপে পড়বে। খবর রয়টার্সের।
এমন সময় নতুন এই রোগের প্রাদুর্ভাবের কথা জানানো হলো, যখন প্রথমবারের মতো কোভিড-১৯ সংক্রমণের ব্যাপকতা মোকাবিলা করছে উত্তর কোরিয়া।
উত্তর কোরিয়া যেন রহস্যে ঘেরা এক দেশ। দেশটির নেতা কিম জং–উন মুখ না খুললে কারও জানার উপায় নেই ভেতরে কী ঘটছে। একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার খবর ছাড়া দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে খুব বেশি মুখ খোলে না উত্তর কোরিয়া। দীর্ঘদিন জনসম্মুখে না আসার সময় কিম জং–উন অসুস্থ ছিলেন কি না, তা নিয়েও ছিল রহস্য। রহস্য ছিল উনের বোনের নেতৃত্বে আসা নিয়েও। ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকার শত শত দেশ যখন করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত ছিল তখনো বিশ্ব জানতে পারেনি উত্তর কোরিয়ায় ঠিক কী ঘটছে।
করোনা এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। এ সময় আর করোনা সংক্রমণ নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত নয় বিশ্ববাসী। করোনা যখন তুঙ্গে উত্তর কোরিয়া তখন দাবি করেছিল, দেশে কোনো সংক্রমণ নেই। সীমান্ত বন্ধ করে সংক্রমণ ঠেকিয়ে দিয়েছে বলে দাবি করে উত্তর কোরিয়া। তবে করোনার শেষদিকে এসে হঠাৎই উত্তর কোরিয়া রহস্য ভেঙেছে। গত সপ্তাহে প্রথম করোনা সংক্রমণের খবর জানিয়েছে উত্তর কোরিয়া। আর রাতারাতি সেটা ১০ লাখে পৌঁছে গেছে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিকে ‘বিপর্যয়’ হিসেবে অভিহিত করে প্রকাশ্যে ঘোষণাও দিয়েছেন উন।
তবে সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, গত কিছুদিন ধরে দেশের দক্ষিণ প্রান্তে এক নতুন মহামারি শুরু হয়েছে। পাকস্থলীতে সংক্রমণ ঘটছে। কীভাবে এর মোকাবিলা করা যায়, তা নিয়ে চিন্তিত দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম কেসিএনএ জানায়, ‘একিউট এন্টেরিক’–এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের যত দ্রুত সম্ভব সারিয়ে তুলতে চিকিৎসা সহায়তা হিসেবে গতকাল বুধবার পশ্চিমাঞ্চলীয় বন্দর নগরী হায়েজুতে ওষুধ পাঠিয়েছেন উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং-উন।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বা রোগটির ধরন নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। তবে অন্ত্রসম্পর্কীয় রোগ হিসেবে পরিচিত এন্টেরিক।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, জীবাণু থেকে ‘একিউট এন্টেরিক’ রোগ ছড়ায়। দূষিত খাবার ও পানি, আক্রান্ত রোগীর সরাসরি সংস্পর্শে এলে অথবা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আক্রান্ত প্রাণী কিংবা এর পরিবেশের সংস্পর্শে এলে জীবাণুর মাধ্যমে রোগটি ছড়াতে পারে।
প্রতিবেদনে কেসিএনএ জানায়, শুরুর দিকেই এই প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দিয়েছেন কিম। রোগটি ছড়িয়ে পড়া সম্পূর্ণভাবে দমিয়ে রাখতে সন্দেহভাজন আক্রান্ত ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিতে নির্ভুল পদক্ষেপ নিতে বলেছেন তিনি।
হামারিসংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার মাধ্যমে আক্রান্তের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন উত্তর কোরীয় নেতা।
এমন সময় নতুন এই রোগের প্রাদুর্ভাবের কথা জানানো হলো, যখন প্রথমবারের মতো কোভিড-১৯ সংক্রমণের ব্যাপকতা মোকাবিলা করছে উত্তর কোরিয়া। গত মাসে দেশটি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। টিকা ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অপ্রতুলতা নিয়েও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
আজ আরও ২৬ হাজার মানুষের জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছে উত্তর কোরিয়া। এপ্রিলের শেষ দিক থেকে এখন পর্যন্ত জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪০ লাখ ৫৬ হাজারে গিয়ে ঠেকেছে। এই মহামারিতে এখন পর্যন্ত ৭৩ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছে।
পিয়ংইয়ং প্রতিদিনই জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা জানিয়ে আসছে। তবে তাদের কোভিড রোগী বলা হচ্ছে না। কোভিড শনাক্তে টেস্টিং কিটের অভাবেই এমনটা হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। সরকারি গণমাধ্যমে প্রকাশিত রোগীর প্রকৃত সংখ্যা নিয়েও বিশেষজ্ঞদের সংশয় রয়েছে।
উত্তর কোরিয়া বলছে, কোভিড সংক্রমণের ঢেউ কমে আসার লক্ষণ দেখা গেছে। তবে চলতি মাসের শুরুতে পিয়ংইয়ংয়ের করা এই দাবি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। জাতিসংঘের সংস্থাটি বলছে, পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে বলেই তারা মনে করছে।
সরকারি সংবাদসংস্থা জানিয়েছে, কিম জং উন তার পরিবারের জন্য সঞ্চিত ওষুধের একটি বড় অংশ মহামারি মোকাবিলার জন্য পাঠিয়ে দিয়েছেন। মূলত উত্তর কোরিয়ার দক্ষিণ অংশে ওই ওষুধ পাঠানো হয়েছে। দেশের দক্ষিণ অংশ কৃষির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে বেশি ফসল উৎপন্ন হয় সেখানে। সেখানেই এই রোগের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি বলে জানা গেছে। তবে এখনো পর্যন্ত কতজনের মৃত্যু হয়েছে, তা জানানো হয়নি।
সংবাদসংস্থার দাবি, কিম জানিয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব এই মহামারি আটকাতে হবে। সে জন্য আক্রান্ত ব্যক্তিদের আইসোলেশনে পাঠানো হচ্ছে। রোগীদের রক্তের নমুনা জিনম টেস্টের জন্যও পাঠানো হচ্ছে।
এদিকে উত্তর কোরিয়ায় ব্যাপক খাদ্য সংকটও শুরু হয়েছে। ফসলের উৎপাদন এর অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে উত্তর কোরিয়ার পরিস্থিতি ভয়াবহ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। দক্ষিণ কোরিয়া জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে। প্রাথমিকভাবে তাদের ধারণা, কলেরা এবং টাইফয়েড জাতীয় কোনো সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে উত্তর কোরিয়ায়।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪০০
আপনার মতামত জানানঃ