কামরুল হাসান মামুন
পৃথিবীতে এমন কোন দেশ দেখেছেন যেই দেশ অর্থবিত্তে উন্নত হয়েছে এবং একই সাথে বিশ্বদরবারে ক্ষমতাবান হয়েছে কিন্তু সেই দেশে ওয়ার্ল্ড রেঙ্কিং-এ ১ থেকে ৩০০-র মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় নাই? আমেরিকা বিশ্বে সবচেয়ে ধনী এবং ক্ষমতাবান কারণ ওয়ার্ল্ড রেঙ্কিং-এ ১- থেকে ৫০০-র মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিশ্ববিদ্যালয় আমেরিকার। ওয়ার্ল্ড রেঙ্কিং-এ দ্বিতীয় স্থানে ইংল্যান্ড এবং তারাই দ্বিতীয় সেরা বিশ্ব মোড়ল। ৫০ লক্ষ মানুষের ছোট্ট একটি দেশ সিঙ্গাপুর এত শক্তিশালী এবং ওয়ার্ল্ডে এত সম্মান পায় কারণ তাদের বিশ্বের ১১তম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় আছে। চীন এত দ্রুত উন্নত হচ্ছে কারণ তাদের বিশ্ব রেঙ্কিং-এ ১ থেকে ৫০ এর মধ্যে সেরা ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। অনেক কিছুর ব্যতিক্ৰম আছে কিন্তু এটির কোন ব্যতিক্ৰম নাই। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার্ল্ড রেঙ্কিং ম্যাটার্স! এটিকে ইগনোর করার কোন উপায় নাই।
রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের জন্মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল ভূমিকা। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানও ভালো ছিল। ১৯৭০-৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মান যদি আজকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানের সমান হতো এই দেশ স্বাধীন হতো কিনা আমার সন্দেহ আছে। কারণ আজকের ছাত্র শিক্ষকরা দেশের চেয়ে দলের স্বার্থ এবং সমষ্টির লাভের চেয়ে নিজের লাভের কথা অনেক বেশি ভাবে। মোটা দাগে বলা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা গ্রাজুয়েটরাই বাংলাদেশকে চালায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মান যত ভালো হবে টোটো ভালো গ্রাজুয়েট তৈরী হবে। যত ভালো গ্রাজুয়েট তৈরী হবে তত ভালো দেশ চলবে। বিশ্ব রেঙ্কিং-এ ১ থেকে ৮০০ এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় নাই বলেই আজকের বাংলাদেশে সকল ক্ষেত্রে এত দুরবস্থা, এত অরাজকতা। এই ২১শ শতাব্দীতে এসেও আমাদের রাজধানীর ট্রাফিক সিগন্যালকে স্বয়ংক্রিয় করতে পারলাম না। অসভ্যতা আর ব্যর্থতার লিস্ট করলে অনেক লম্বা হয়ে যাবে। বাংলাদেশ যারা চালাচ্ছে তাদের অবস্থা জানতে ঢাকা শহরের রাস্তা, কিংবা বিমানবন্দর, কিংবা পাসপোর্ট অফিস কিংবা সরকারি ব্যংক, অফিস এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে যান টের পাবেন। আর এত দুরবস্থা বলেই এই দেশে কেউ থাকতে চায় না। অর্থ সম্পদ কিংবা জ্ঞান বুদ্ধি থাকলেই বিদেশে চলে যাওয়ার ধান্দা করে।
তাহলে বাংলাদেশকে সুন্দর, গোছানো এবং সর্বক্ষেত্রে সভ্য বানাতে হলে বিশ্ব রেঙ্কিং-এ ১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থাকতে হবে। সেই লেভেলের বিশ্ববিদ্যালয় বানাতে হলে টার্গেট করে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় বিশাল বরাদ্দ দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র শিক্ষক রাজনীতিকে জাতীয় রাজনীতির বাহিরে রাখতে হবে। ছাত্ররা কেবল ছাত্র কেবল ছাত্রদের জন্য, শিক্ষার জন্যই রাজনীতি করতে পারে। বিশ্ব রেঙ্কিং-এ ১ থেকে ৩০০ থাকা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কি ছাত্র রাজনীতি আছে? যদি সামান্য থেকেও থাকে সেটা আছে ছাত্রদের জন্য রাজনীতি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বুইড়াদের জন্য রাজনীতি কেউ করে না। আমাদের ছাত্র রাজনীতি মানে কি? আমাদের ছাত্ররা যারা রাজনীতি করে তারা ছাত্রদের দুরবস্থা থেকে মুক্তির জন্য রাজনীতি করে না। তারা রাজনীতি করে কাউকে ক্ষমতায় নেওয়ার জন্য কিংবা কাউকে ক্ষমতায় জোর করে হলেও রাখার জন্য। ছাত্ররা যে মানবেতর জীবন যাপন করছে, সরকার যে এত কম বরাদ্দ দিচ্ছে এটা নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই। বরং আমি আশ্চর্য হয়ে দেখি যে গতবার জিডিপির ২.০৮% থেকে কমিয়ে এইবার ১.৮৮% দিয়েছে এবং তা সত্বেও সেই স্বল্প বরাদ্দকেই স্বাগত জানিয়ে মিছিল করে। সত্যিই সেলুকাস কি বিচিত্র এই দেশ!
আপনার মতামত জানানঃ