ছাত্রলীগ এখন কেবল ছাত্রসমাজের কাছে এখন আতঙ্কের নাম নয়, গোটা দেশের নিকট আতঙ্কের নাম। হত্যা ছাড়াও চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অপহরণ, নির্যাতন, এমনকি ধর্ষণসহ আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে৷ এবার লক্ষ্মীপুরে রাস্তায় ফেলে স্বামীসহ অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে।
রাস্তায় সাইড না দেওয়ায় ইমন হোসেন নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীর নেতৃত্বে তাদের পেটানো হয়। বর্তমানে তারা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তারা হলেন— উপজেলার লাহারকান্দি ইউনিয়নের পশ্চিম সহিদপুর গ্রামের বাসিন্দা সালাহ উদ্দিন ও তার স্ত্রী নাছিমা আক্তার। নাছিমা ইউনিয়নের বাইশমারা ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট শাখার অফিস সহকারী। অভিযুক্ত ইমন পৌরসভার লাহারকান্দি এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে ও ১২ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী।
আহতরা জানান, বিকেলে কর্মস্থল থেকে নাছিমাকে নিয়ে স্বামী সালাহ উদ্দিন মোটরাসাইকেলযোগে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। পথে বাইশমারা এলাকায় বিপরীত দিক থেকে মোটরসাইকেলে আসছিলেন ইমন। এ সময় তাকে সাইড না দেওয়ায় সালাহ উদ্দিনের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করেন ঝগড়া শুরু করেন। একপর্যায়ে ইমন তাকে কয়েকটি কিল-ঘুষিও মারেন। আশপাশের লোকজন এসে ঝগড়া থামিয়ে দুজনকে মিলিয়ে দেন। এতেও ইমন শান্ত না হয়ে অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করেন।
এদিকে সেখান থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে ইমন মোটরসাইকেল নিয়ে তাদের তাড়া করেন। পরে লক্ষ্মীপুর-রামগতি সড়কের নুড়ি গাছতলা এলাকায় গিয়ে তাদের মোটরসাইকেল ফের গতিরোধ করেন। এ সময় ইমন ও তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন কিশোর তাদের ওপর হামলা করে। দুজনকেই রাস্তায় ফেলে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটায় হামলাকারীরা। একপর্যায়ে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে তারা পালিয়ে যান।
আমার বোন ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। অমানবিকভাবে ইমন তাকে মেরেছে। ইমন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
নাছিমা আক্তার বলেন, ‘তুচ্ছ ঘটনায় আমাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করেছে। আমি শরীরে মারাত্মক ব্যথা পেয়েছি। স্বামীর হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম হয়েছে। হামলাকারীরা আমার ব্যাগ থেকে ৬৮ হাজার টাকা, একজোড়া কানের দুল ও গলার চেইন নিয়ে গেছে।’
নাছিমার ভাই জহির উদ্দিন বলেন, ‘আমার বোন ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। অমানবিকভাবে ইমন তাকে মেরেছে। ইমন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ১০-১৫ জনের বখাটে গ্রুপ নিয়ে সে সবসময় চলাচল করে। নাছিমার কাছে ব্যাংকের টাকা ছিল। তারা হামলা চালিয়ে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে গেছে।’
তবে গণমাধ্যমের চেষ্টা করেও ইমন হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে তিনি ছাত্রলীগ পরিচয়ে দিয়ে দলবদ্ধভাবে এলাকায় চলাফেরা করেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর পৌর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আবদুল খালেককে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা কামাল বলেন, ঘটনাটি নিয়ে থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একের পর এক সংঘর্ষ ও খুনের ঘটনাসহ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য বারবার আলোচনায় আসে ছাত্রলীগ। মাদক ব্যবসা, টেন্ডার-বাণিজ্য, পুলিশকে মারধরসহ একের পর এক নানা অভিযোগ উঠেছে সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। ছাত্রলীগ যে আদর্শ ও নীতিতে একটি সংগঠনে রুপ নিয়েছিল সেই আদর্শ এখন আর নেই। বিশ্লেষকরা বলেছেন, আদর্শের চর্চা না থাকার ফলে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নেতারা দুর্নীতিসহ নানান অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পড়ছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দৌরাত্ম্য দিনদিন চাউর হয়ে উঠছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে ক্ষমতার চূড়ান্তে বসবাস করেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ও সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আগ্রহবোধ না করায় তাদের দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে চলেছে। ছাত্রলীগের এই আইনের উর্ধে চলে যাওয়ার পেছনে অবশ্য রাজনৈতিক নেতা কুৎসিত হাতের ভূমিকা রয়েছে। তারা বলেন, ছাত্রলীগ সংগঠনটির ছাত্রদের ধীরে ধীরে উগ্র এবং একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীতে রুপদানের পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক নেতাদের অনৈতিক মদদ ও উস্কানি। এ বিষয়ে প্রশাসনের জরুরি পদক্ষেপ হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৩১
আপনার মতামত জানানঃ