গুম-খুনসহ বিচারবহির্ভূত হত্যার বিষয়ে কথা বলায় মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর নিবন্ধন বাতিল করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এনজিও বিষয়ক ব্যুরো।
১৯৯৪ সালের অক্টোবরে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটির নিবন্ধন ২০১৫ সালের মার্চে শেষ হয়। তারা ১০ বছর মেয়াদ বাড়ানোর জন্য এনজিও ব্যুরোর কাছে আবেদন করেছিল। তবে রোববার(০৫ জুন) তাদের এ আবেদন নামঞ্জুর করে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো। এতে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বাতিল হয় তাদের নিবন্ধন।
এনজিও ব্যুরোর জারি করা আদেশে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন কাজে নিয়োজিত হওয়াসহ বেশ কয়েকটি কারণে ‘অধিকার’-এর নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। সেই কারণগুলো হচ্ছে নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য এবং নতুন আইন অনুযায়ী আরোপিত বর্ধিত ফি ও ভ্যাট না দেওয়া, বৈদেশিক অনুদানে বাস্তবায়িত প্রকল্পের আটটি আর্থিক নিরীক্ষা প্রতিবেদনের (অডিট রিপোর্ট) ওপর আপত্তির কোনো জবাব বা ব্যাখ্যা না দেওয়া, অধিকার ডট ওআরজি নামের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ইস্যু তৈরি এবং তিনটি প্রকল্পে আর্থিক লেনদেনে অসঙ্গতি বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের বিষয়ে যথাযথ জবাব না দেওয়া।
অধিকারের আবেদন নিষ্পত্তির এ আদেশে বলা হয়, বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন আইন ২০১৬ এর ধারা ৪ (৪) মোতাবেক সংস্থা কর্তৃক দাখিলকৃত নিবন্ধন নবায়নের আবেদনপত্রে অসঙ্গতি থাকা, বিভিন্ন সময় চাওয়া তথ্যাদির সঠিক জবাব বা ব্যাখ্যা ও কাগজপত্র দাখিল না করা, রাষ্ট্রের সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে এমন কাজে সম্পৃক্ত থাকার কারণে সংস্থার কার্যক্রম সন্তোষজনক নয়। তাই দাখিলকৃত নিবন্ধন নবায়নের আবেদনটি বিবেচনা করার কোনো সুযোগ নেই। নবায়নের আবেদনটি নামঞ্জুর করা হলো।
এনজিও ব্যুরো সূত্রে জানা গেছে, গুম-খুনসহ বিচারবহির্ভূত হত্যার বিষয়ে অধিকার তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে যে তথ্য উপস্থাপন করেছে, তাতে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নিদারুণভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য এনজিও ব্যুরো ব্যক্তির নাম ও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা চায়। তবে মামলার কারণ দেখিয়ে সংস্থাটি কোনও তথ্য প্রকাশ করেনি।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিগত এক দশকে দেশ এমন অবস্থার সাক্ষী যেখান থেকে গণতন্ত্র ক্রমেই সরে গেছে। এমন এক শাসনব্যবস্থার সাক্ষী হয়েছে, যা গণতন্ত্রের যেকোনো রূপ থেকেই অনেক দূরে। ক্ষমতাসীনরা বলপ্রয়োগের ওপরেই আরও নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। দেশ শাসনে এখন বলপ্রয়োগের বাহিনীগুলোই প্রাধান্য পাচ্ছে। বিগত দুই নির্বাচনের মাধ্যমে শাসনব্যবস্থায় জবাবদিহির বিষয়টি অনেক দূরে চলে গেছে। যদিও এগুলোকে ‘নির্বাচন’ বলা যায় কি না, তাও একটি প্রশ্ন।
আরও বলেন, সুষ্ঠূ ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে জবাবদিহির যে প্রক্রিয়া, তা যখন কার্যত অবসিত হয়েছে, তখন আরও বেশি দরকার হয়ে পড়েছে রাষ্ট্রের বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে জবাবদিহির চেষ্টা করা। কিন্তু, গুমের বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (এনএইচআরসি) কথা বলতে পারার ব্যর্থতার মাধ্যমেই জবাবদিহি না থাকায় তৈরি হওয়া সংকটের গভীরতা বোঝা যায়।
তারা বলেন, গুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলার সময়ে এটা গুরুত্ব দেওয়া দরকার যে, গুমের বিষয়টি শাসনব্যবস্থা ও জবাবদিহির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত; আর এটা খুব স্পষ্টভাবে বলা যে, রাষ্ট্রকে অবশ্যই এর দায় নিতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯০৬
আপনার মতামত জানানঃ