মানবসভ্যতার বিকাশের পিছনে বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের গুরুত্ব অপরিসীম। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা এবং বিনোদন মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদা মেটাতে এই বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। প্রায় ৩০ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে আবির্ভূত বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সূর্যের আলোকে জৈবিক শক্তিতে রূপান্তর শুরু করেছিল।
প্রাণী জগতের সব সদস্যই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সেই জৈবিক শক্তি ব্যবহার করেই তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে। জীববিজ্ঞানীরা এই উদ্ভিদজগতের সদস্যদের তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করেছেন। যেমন- গুল্ম, লতা এবং বৃক্ষ। এই তিন ধরনের মধ্যে বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদই আমাদের বেশি পরিচিত। আমাদের পৃথিবীতে কিছু অভিনব চেহারা এবং বৈশিষ্ট্যধারী উদ্ভিদ রয়েছে।
রেকর্ডধারীরা কেবল মানুষের মধ্যেই পাওয়া যায় না। উদ্ভিদ বিশ্বের প্রতিনিধিদের নিজস্ব রেকর্ডও রয়েছে। কিছু নমুনা তাদের প্রতিযোগীদের তুলনায় দ্রুত, লম্বা এবং শক্তিশালী হতে দেখা যায়।
অস্ট্রেলিয়ার উপকূলে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উদ্ভিদের খোঁজ পেয়েছেন গবেষকরা। এটির আকার নিউইয়র্কের ম্যানহাটন শহরের চেয়েও ৩ গুণ বড়। খবর বিবিসির
এটি মূলত সি-গ্রাস বা সাগরের ঘাস। এটি রিবন উইড বা ফিতা ঘাস নামেও পরিচিত। অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম উপকূলে বিশাল এই সি–গ্রাস রয়েছে।
গবেষকেরা বৃহত্তম উদ্ভিদের বিষয়টি নিশ্চিত হতে সি–গ্রাসটির জিনগত পরীক্ষা করেছেন। তাদের দাবি, অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম উপকূলে পানির নিচে যে বিশাল তৃণভূমি রয়েছে, তা আদতে একটি উদ্ভিদ। একটি একক বীজ থেকে সাড়ে চার হাজার বছর ধরে এই বিশাল তৃণভূমি তৈরি হয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, অন্তত সাড়ে চার হাজার বছর আগে একটি বীজ থেকে পুরো উপকূলে ছড়িয়ে পড়ে এই সি গ্রাস। এটি প্রায় ২০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। রিবন উইড নামক আগাছা নামেও পরিচিত এরা। সাধারণত অস্ট্রেলিয়ার উপকূলের কিছু অংশে এ-জাতীয় উদ্ভিতের দেখা মেলে।
গবেষক দলটি পার্থ শহর থেকে ৮০০ কিলোমিটার উত্তরে শার্ক বে উপসাগরের জলজ উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণা করার সময় দুর্ঘটনাক্রমে এই উদ্ভিদটি আবিষ্কার করেন। উপসাগর থেকে এর অঙ্কুর সংগ্রহ করেছেন তারা।
এটি মূলত সি-গ্রাস বা সাগরের ঘাস। এটি রিবন উইড বা ফিতা ঘাস নামেও পরিচিত। অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম উপকূলে বিশাল এই সি–গ্রাস রয়েছে।
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানান, সামুদ্রিক এই ঘাস প্রায় ২০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত।
এই উদ্ভিদটি রিবন উইড (ফিতা আগাছা) নামেও পরিচিত, যা সাধারণত অস্ট্রেলিয়ার উপকূলের কিছু অংশে পাওয়া যায়। এর জেনেটিক বৈচিত্র্য বোঝার জন্যই দলটি সেখানে গিয়েছিল।
গবেষকরা উপকূল জুড়ে ছড়িয়ে থাকা উদ্ভিদটি থেকে অঙ্কুর সংগ্রহ করেছেন। এ ছাড়াও, প্রতিটি নমুনা থেকে একটি ‘ফিঙ্গারপ্রিন্ট’ তৈরির জন্য ১৮ হাজার জেনেরিক মার্কার পরীক্ষা করেছেন।
গবেষণা–সংক্রান্ত নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে প্রসিডিংস অব দ্য রয়্যাল সোসাইটি বি সাময়িকীতে। গবেষণা নিবন্ধের প্রধান লেখক জেন এজলো বলেন, তৃণভূমির সি–গ্রাসের সংখ্যা জানতে গবেষণা চালাতে গিয়ে তারা চমকে গেছেন। কারণ, পুরোটাই মাত্র একটি উদ্ভিদ। শার্ক বে’র ১৮০ কিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত একটি উদ্ভিদ! এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহত্তম উদ্ভিদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উদ্ভিদটি এর দৃঢ়তার জন্যও পরিচিত। উপসাগরের বিভিন্ন স্থানে পরিবর্তনশীল অবস্থার সঙ্গে এটি বেড়ে ওঠে।
গবেষক এলিজাবেথ সিনক্লেয়ার বলেন, ‘এটি সত্যিই টেকসই বলে মনে হচ্ছে। উচ্চ তাপমাত্রা এবং লবণাক্ততার পাশাপাশি তীব্র আলোর সম্মুখীন হয়েও এটি টিকে আছে। অধিকাংশ উদ্ভিদের জন্য এই পরিবেশে টিকে থাকা কঠিন।’
সি–গ্রাসের এই প্রজাতি লন ঘাসের মতো বছরে ৩৫ সেন্টিমিটার বাড়ে। এ হিসাব ধরলে বর্তমান অবস্থায় পৌঁছাতে এ ঘাসটির সাড়ে চার হাজার বছর লেগেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০১৩
আপনার মতামত জানানঃ