
কাশ্মীরের প্রখ্যাত স্বাধীনতাকামী নেতা ইয়াসিন মালিককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ভারতের রাজধানী দিল্লির একটি আদালত। সন্ত্রাসীদের অর্থ জোগান দেওয়ার মামলায় তার বিরুদ্ধে এ রায় দেওয়া হলো। রায়ের পর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে তার অনুসারীদের মধ্যে। বিচ্ছিন্ন কিছু হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
ভারতীয় সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, রাজধানী দিল্লির একটি আদালত ৫৬ বছরের ইয়াসিন মালিককে দুইবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং পাঁচবার দশ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। সব সাজা একই সঙ্গে কার্যকর হবে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, জম্মু কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের (জেকেএলএফ) নেতা ইয়াসিন মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল বিচ্ছিন্নতাবাদী কাজকর্ম পরিচালনা ও প্রচারণার। তার সংগঠনকে আগেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ভারত সরকার। বিভিন্ন সময় ইয়াসিন মালিককে গৃহবন্দি করে রাখা হলেও তার প্রভাববলয় কমেনি। জঙ্গিদের মদত দেয়ার অভিযোগে দুই বছর আগে তাকে গ্রেপ্তার করে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)। তার পর থেকে তিনি জেলে আছেন।
বিচার চলাকালে এনআইএ ইয়াসিন মালিকের মৃত্যুদণ্ড দাবি করে। বিচারকের কাছে ইয়াসিনের আইনজীবী যাবজ্জীবন জেল দেয়ার ব্যাপারে আর্জি জানান।
ইয়াসিন আদালতকে জানান, তিনি ১৯৯৪ সালে অস্ত্র ছেড়েছেন। তার পর থেকে অহিংস পথেই চলেছেন। এরপর তিনি আর রাজনীতি করবেন না। তাই আদালত যদি তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়, তাতে তিনি আপত্তি করবেন না। নতুন আবেদন জানাবেন না।
দিল্লির এনআইএ আদালত গত ১৯ মে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিলেও বিচারক শাস্তির সিদ্ধান্ত রিজার্ভ রাখেন। তা বুধবার বেলা সাড়ে ৩টায় ঘোষণা করা হয়। দুটি মামলায় ইয়াসিনকে যাবজ্জীবন সাজার পাশাপাশি, ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
স্বাধীনতা চাওয়াকে যদি অপরাধ মনে করা হয়, তাহলে এ অপরাধ ও পরিণতি গ্রহণ করতে আমি প্রস্তুত।
২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর উপত্যকায় জোর ধরপাকড় শুরু করে ভারতীয় সেনা। তখনই ইয়াসিন মালিকসহ বেশ কিছু নেতার জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আসে। সে সময় গ্রেপ্তার করা হয় স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ইয়াসিন মালিককে।
উগ্রপন্থিদের আর্থিক ও অন্যান্য সুবিধা দেয়ার অভিযোগ তদন্তের পর ইয়াসিনকে চলতি মাসেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়। একই মামলায় লস্কর-ই-তাইয়েবার হাফিজ শাহিদ এবং হিজবুল মুজাহিদিনের সৈয়দ সালাউদ্দিনসহ বেশ কয়েকজনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ ধারা ছাড়াও ফৌজদারি দণ্ডবিধির ষড়যন্ত্র এবং রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে ইয়াসিনের সাজা ঘোষণার সংবাদে শ্রীনগরের পরিস্থিতি থমথমে হয়ে উঠেছে। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক দোকান-বাজার। আলোচিত এ উপত্যকার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। কয়েকটি স্থানে ইয়াসিনের সমর্থকদের হামলার শিকার হয়েছেন নিরাপত্তা রক্ষীরা।
ইয়াসিন মালিকের স্ত্রী মুশাল হোসেন এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, তার স্বামী কখনও আত্মসমর্পণ করবেন না। তিনি লেখেন, ‘ভারতীয় ক্যাঙ্গারু আদালত কয়েক মিনিটের মধ্যে দণ্ড দিয়ে দিয়েছে।’
জানা গেছে, ভারত শাসিত কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামীদের মধ্যে অন্যতম হলেন ইয়াসিন মালিক। বর্তমানে নিষিদ্ধ সংগঠন জম্মু ও কাশ্মীর লিভারেশন ফ্রন্টের প্রধান তিনি।
মালিক বিচারককে বলেছেন, স্বাধীনতা চাওয়াকে যদি অপরাধ মনে করা হয়, তাহলে এ অপরাধ ও পরিণতি গ্রহণ করতে আমি প্রস্তুত।
আদালতে শুনানির সময় ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ী তাকে কেন পাসপোর্ট দিয়েছিলেন, সেই বিষয়ে নিজের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন কাশ্মিরের এই নেতা। তিনি বলেন, অপরাধী হলে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাকে কখনই বিশ্বজুড়ে ঘুরে বেড়ানোর এবং কথা বলার সুযোগ দিতেন না।
২০১৬ সালে কাশ্মিরে ভারতীয় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে হিজবুল মুজাহিদীন কমান্ডার বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পরপরই ইয়াসিন মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতকে তিনি বলেছেন, বুরহান ওয়ানির এনকাউন্টারের ৩০ মিনিটের মধ্যে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অটল বিহারি বাজপেয়ী আমাকে পাসপোর্ট দিয়েছিলেন। আমি অপরাধী নই। যে কারণে ভারত সরকার আমাকে অনাপত্তিপত্র দিয়েছিল।
ভারত ও পাকিস্তানের কাছ থেকে কাশ্মিরের স্বাধীনতা চায় জেকেএলএফ। আমানুল্লাহ খানকে প্রধান করে ১৯৭৭ সালে এটি গঠিত হয়। তাকে সঙ্গে নিয়ে ইয়াসিন মালিক ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তাদের সহায়তা দেয় পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক শাসক জেনারেল জিয়া-উল-হকের সরকার।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৩৪
আপনার মতামত জানানঃ