সৌদি আরবে এই প্রথম সব নারী ক্রু নিয়ে একটি ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়েছে। রক্ষণশীল দেশটিতে এ ঘটনাকে নারীর ক্ষমতায়নের মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সৌদি আরবের কর্মকর্তারা শনিবার (২১ মে) একথা জানান বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি এবং সংবাদমাধ্যম আরব নিউজ।
সৌদি আরবে স্বল্প মূল্যের এয়ারলাইন ফ্লাইডেল ওই ফ্লাইট পরিচালনা করে। ফ্লাইটটি গতকাল রাজধানী রিয়াদ থেকে জেদ্দার উদ্দেশে রওনা হয়। ফ্লাইডেলের মুখপাত্র ইমাদ ইসকানদারানি বলেন, ওই উড়োজাহাজের সাতজন ক্রুর মধ্যে বেশির ভাগই সৌদি নারী। ক্রুদের মধ্যে ফার্স্ট অফিসার সৌদি নারী। তবে ফ্লাইটটির ক্যাপ্টেনের দায়িত্বে ছিলেন বিদেশি একজন নারী।
সব নারী ক্রু নিয়ে ফ্লাইট পরিচালনার বিষয়ে ফ্লাইডিলের এই দাবিকে শনিবার নিশ্চিত করে সৌদি আরবের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।
বার্তা সংস্থা আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘মধ্যপ্রাচ্যের রক্ষণশীল দেশটিতে এ ঘটনাকে নারীর ক্ষমতায়নের মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। সৌদি আরবে সাশ্রয়ী খরচে পরিচালিত এয়ারলাইনস ফ্লাইডেল এটি পরিচালনা করে। নতুন মডেলের এয়ারবাস এ-৩২০-এর ফ্লাইটটি শনিবার রাজধানী রিয়াদ থেকে উড্ডয়ন করে উপকূলীয় শহর জেদ্দায় পৌঁছায়।’
রক্ষণশীল এই আরব দেশটিতে গত কয়েক বছর যুবরাজ ও দেশটির কার্যত শাসক মোহাম্মদ বিন সালমান নারীদের গাড়ি চালনায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, পুরুষ অভিভাবক ছাড়া নারীদের বাইরে যাওয়ার ওপর থাকা বিভিন্ন বিধিনিষেধ তুলে দেন।
সৌদি কর্তৃপক্ষ অ্যাভিয়েশন খাতের উন্নয়নে চেষ্টা চালাচ্ছেন, যাতে দেশটি আকাশপথে বৈশ্বিক কেন্দ্রে পরিণত হয়। দেশটির বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফ্লাইট পরিচালনায় নারীদের ভূমিকা আরও জোরালো করার আশ্বাস দেয়।
এই ফ্লাইটে কো-পাইলটের দায়িত্বে ছিলেন ২৩ বছর বয়সী সৌদি নাগরিক ইয়ারা জান। তিনি দেশটির সবচেয়ে কম বয়সী নারী পাইলট।
তিনি বলেন, ‘দেশটির এমন ঐতিহাসিক মুহূর্তের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারায় নিজেকে অনেক গর্বিত মনে হচ্ছে। একজন সৌদি নারী হিসেবে আমি চাইব দেশের এমন সব অগ্রযাত্রার সঙ্গে নিজের নাম স্মরণীয় করে রাখতে।’
‘দেশটির এমন ঐতিহাসিক মুহূর্তের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারায় নিজেকে অনেক গর্বিত মনে হচ্ছে। একজন সৌদি নারী হিসেবে আমি চাইব দেশের এমন সব অগ্রযাত্রার সঙ্গে নিজের নাম স্মরণীয় করে রাখতে।’
ইয়ারা জান ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার একটি ফ্লাইট স্কুল থেকে পাইলট হিসেবে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ফ্লাইডেল এয়ারলাইনসে পাইলট হিসেবে তিনি চাকরি শুরু করেন ২০২১ সালের জুনে।
তিনি বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ এই ফ্লাইটটিতে কো-পাইলট হিসেবে পাইলটকে সহযোগিতা করতে নেভিগেশন ও বিভিন্ন চেকলিস্ট সম্পন্ন করতে হয়েছে আমাকে।’
‘যদিও একজন সৌদি নারীর জন্য পাইলট হওয়া নতুন তবে আমাদের প্রজন্মের জন্য এখন এটি আর অসম্ভব কিছু নয়। বিশেষ করে আমরা আমাদের প্রিয় দেশ এবং আমাদের সম্মানিত নেতাদের কাছ থেকে যে সমর্থন পাচ্ছি। এর ফলে আমি সৌদিতে সর্বকনিষ্ঠ নারী পাইলট হতে অনেক সহায়ক হয়েছে। আমি সব সময় একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের পক্ষে সহায়ক হয়ে কাজ করার সুযোগ পেলে আরও বেশি উচ্ছ্বসিত হব।’
সম্প্রতি সৌদি আরবে নারী পাইলটের সংখ্যা বাড়ছে।
এই ক্ষেত্রে আরও তিনটি নাম স্মরণীয় হয়ে আছে। হানাদি জাকারিয়া আল-হিন্দি যিনি সৌদি বাণিজ্যিক পাইলটের লাইসেন্স নিয়ে উড়োজাহাজ পরিচালনা করা প্রথম নারী পাইলট।
রাওয়াইয়া আল-রিফি প্রথম নারী যিনি সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে একটি আন্তর্জাতিক বেসামরিক ফ্লাইট এয়ারবাস এ-৩২০ পরিচালনা করে নিজ দেশ সৌদি আরবে নিয়ে আসেন।
ইয়াসমিন আল-মাইমানি, যিনি সৌদি আরবে প্রথম একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে নারী কো-পাইলট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সৌদি আরবের সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উড়োজাহাজ পরিচালনায় নারীদের ভূমিকা আরও জোরালো করার কথা বলেছে। ২০১৯ সালে ফ্লাইডেল কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দেয়, এটিই প্রথম ফ্লাইট যেখানে একজন সৌদি নারী কো–পাইলট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সৌদি কর্মকর্তারা অ্যাভিয়েশন খাতের উন্নয়নের চেষ্টা চালাচ্ছেন। যাতে দেশটি বৈশ্বিক ভ্রমণের কেন্দ্রে পরিণত হয়।
সৌদি আরবের সিভিল অ্যাভিয়েশন ২০৩০ সালের মধ্যে বছরে ৩৩ কোটি যাত্রীর যাত্রা নিশ্চিত করতে চায়। এ সময়ের মধ্যে বিমান খাতে ১০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে সৌদি অ্যাভিয়েশনের। এ ছাড়া রিয়াদে মেগা বিমানবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিবছর ৫০ লাখ টন কার্গো স্থানান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে সৌদি অ্যাভিয়েশনের।
তবে সৌদিভিত্তিক এয়ারলাইনসগুলো এমিরেটস ও কাতার এয়ারওয়েজের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে কি না, তা নিয়ে শিল্প বিশ্লেষকদের আশঙ্কা রয়েছে।
সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান গাড়ি চালনায় নারীদের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, পুরুষ অভিভাবক ছাড়া বাইরে বের হওয়াসহ বিভিন্ন বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯০৩
আপনার মতামত জানানঃ