মুসলিম ভেবে মানসিক ভারসাম্যহীন এক বৃদ্ধকে মারধরের পর তার মৃত্যু হয়। পরে দেখা যায় সে মুসলিম নয়। ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের এমনি ঘটনা ঘটেছে।
এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, এক ব্যক্তি ওই বৃদ্ধকে জিজ্ঞেস করছে তোমার নাম মোহাম্মদ? তোমার আধার কার্ড দেখাও। বৃদ্ধ লোকটিকে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু লোকটি তাকে একের পর এক থাপ্পড় মারতে থাকেন।
এই ঘটনা ঘটেছে ভারতে মধ্য প্রদেশে। সম্প্রতি ওই বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এভাবে মারধরের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।
তাকে যখন নাম জিজ্ঞেস করা হয় তখন উত্তর দেওয়ার সুযোগটাও পাননি ওই অসুস্থ বৃদ্ধ। ক্রমাগত চড়-থাপ্পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি।
তাকে যখন নাম জিজ্ঞেস করা হয় তখন উত্তর দেওয়ার সুযোগটাও পাননি ওই অসুস্থ বৃদ্ধ। ক্রমাগত চড়-থাপ্পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। এই ঘটনায় মধ্য প্রদেশের নিমুচ জেলায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ ভিডিও দেখে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছে। তার নাম দীনেশ কুশওয়াহা। সে নিমুচের এক বিজেপি নেত্রীর স্বামী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এনডিটিভি জানায়, উপর্যুপরি থাপ্পড়ে বৃদ্ধ মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েন। পরে পুলিশ এসে তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত দীনেশ কুশওয়াহা একজন বিজেপি কর্মী। তাকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নারোত্তম মিশ্র জানিয়েছেন, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে।
পুলিশ জানায়, ৬৫ বছর বয়সী ওই বৃদ্ধের নাম ভানওয়ারলাল জৈন। তিনি রতলাম জেলার বাসিন্দা। গত ১৫ মে রাজস্থানে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গিয়ে বৃদ্ধ নিখোঁজ হয়েছিলেন। তিনি কিছুটা মানসিক অসুস্থও ছিলেন। নিখোঁজের অভিযোগ পেয়ে পুলিশ বিভিন্ন থানায় তার ছবি সরবরাহ করে।
গতকাল শনিবার পুলিশ নিমুচ জেলার রাস্তার পাশে তার মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে। লাশ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে ভিডিওতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি বৃদ্ধের নাম মোহাম্মদ কিনা জানতে চান। লোকটি বারবার একই প্রশ্ন করছেন আর বৃদ্ধের গালে একের পর এক চড় মারছেন। বৃদ্ধ তার পরিস্থিতির কথা বোঝাতে চাচ্ছিলেন কিন্তু লোকটি কোনো কথাই শুনছিলেন না।
মুসলিম ভেবে ওই বৃদ্ধকে এমন নির্যাতন করা হলেও ওই ব্যক্তি আসলে মুসলিম নন। তার নাম ভবরলাল জৈন। নিহতের মৃতদেহ শনাক্ত করেন তার ভাই রাকেশ জৈন। তিনি রাতলাম জেলার সারসি এলাকার বাসিন্দা। রাজস্থানে একটি ধর্মীয় উৎসবে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর গত ১৫ মে থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন।
তার স্বজনরা থানায় জিডি করায় পুলিশও এ বিষয়ে সতর্ক ছিল এবং তাকে খুঁজে বের করতে কাজ করছিল। এর মধ্যেই শুক্রবার নিমুচ জেলায় একটি রাস্তার পাশে তার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরবর্তীতে তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এই ভিডিও বৃদ্ধের পরিবারের লোকজনের নজরে আসলে তারা থানায় গিয়ে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
ভিডিওটি বৃহস্পতিবার ধারণ করা হয়েছে বলে পুলিশ ধারণা করছে।
এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর ক্ষমতাসীন বিজেপির সমালোচনা করছে বিরোধী দলগুলো। বিজেপি ঘৃণার আগুন জ্বালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন কংগ্রেস এমএলএ জিতু পাটওয়ারী।
রাজ্যের বিজেপি সেক্রেটারি রাজেশ আগারওয়াল জানিয়েছেন, ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। অপরাধী অপরাধীই; এর সঙ্গে দলীয় রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। এই ধরনের কাজে যেই জড়িত থাকুক রাজ্য সরকার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বলে জানান তিনি।
বিশিষ্টরা বলছেন, বিজেপি শাসিত দেশটিতে ধর্মীয় নির্যাতনের ভয়াবহতা বেড়েছে। সবসময় আতঙ্কে থাকে সংখ্যালঘুরা। প্রায় প্রতিদিনই দেশটির কোথাও না কোথাও সংখ্যালঘু নির্যাতনের এই দৃশ্য দেখা যায়। দেশটিতে সংখ্যালঘুরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে আফগানিস্তানের উত্তাল পরিস্থিতিতে ভারতে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি আরও উত্তেজিত করে তুলেছে। আর এসবের দায় বিজেপি সরকারের ঘাড়েই দিতে চান বিশিষ্টরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫২৯
আপনার মতামত জানানঃ