ইউক্রেন সংকট ইউরোপের জ্বালানি নিরাপত্তা বড় প্রশ্নের মুখে ফেলেছে৷ বিকল্প উৎস ও প্রযুক্তির সন্ধান জোরকদমে চলছে৷ এই অবস্থায় ফ্রান্সের দক্ষিণে একটি প্রকল্পকে ঘিরে প্রত্যাশা আরও বেড়ে গেছে৷ খবর ডয়েচে ভেলে।
সূর্য আমাদের জ্বালানি সংক্রান্ত সব সমস্যার সমাধান হতে পারে৷ সেটি আসলে বিশাল এক চুল্লির মতো, যার মধ্যে পারমাণবিক ফিউশন হয়ে চলেছে৷ দেড় কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তপমাত্রা ও প্রবল চাপের মধ্যে হাইড্রোজেন পরমাণু হিলিয়ামে ফিউজ হয়ে চলেছে, যার ফলে অকল্পনীয় পরিমাণ শক্তি বার হয়ে আসছে৷
পৃথিবীর বুকেই সূর্যের পারমাণবিক ফিউশন নকল করার তোড়জোড় চলছে৷ এই থার্মোনিউক্লিয়র চুল্লির মধ্যে কৃত্রিম সূর্য সৃষ্টি করা হচ্ছে৷
ফ্রান্সের দক্ষিণে ইটার নামের এই প্রকল্পে ৩৫টি দেশ যুক্ত রয়েছে৷ চুল্লির ভবনটি ইতোমধ্যেই তৈরি হয়ে গেছে, এখন ভেতরে নির্মাণের কাজ চলছে৷ ২০২৫ সালে চুল্লিটি চালু হবার কথা৷
ফার্স্ট লাইট ফিউশন প্রকল্পের নিকোলাস হকার বলেন, ‘‘ফিউশন আসলে প্রথাগত পরমাণু শক্তির সম্পূর্ণ বিপরীত ক্রিয়া৷ পরমাণু শক্তির ক্ষেত্রে একটি হেভি এলিমেন্ট বিভাজন করলে শক্তি বেরিয়ে আসে৷ শেষে যে পদার্থ অবশিষ্ট থাকে, সেগুলি সামলানো বেশ কঠিন৷ ফিউশন মোটেই চেন রিয়্যাকশন নয়৷ পালানোর কোনো পথ থাকে না বলে মেল্টডাউন ঘটে৷”
তাহলে কি নিউক্লিয়ার ফিউশন রিয়্যাক্টর প্রচলিত পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তুলনায় বেশি নিরাপদ? পারমাণবিক শক্তি ক্ষতিকর কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন না করলেও তেজস্ক্রিয় বর্জ্য সৃষ্টি করে৷ তাছাড়া দু্র্ঘটনাও ঘটে৷ তা সত্ত্বেও গোটা বিশ্বের অনেক প্রান্ত, বিশেষ করে এশিয়ার কিছু দেশ এখনো পরমাণু চুল্লিতে বিনিয়োগ করে চলেছে৷
জনরোষ সত্ত্বেও ইইউ কমিশন পরমাণু শক্তিকে পরিবেশবান্ধব ও অন্তর্বর্তী প্রযুক্তি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, যার সাহায্যে ইউরোপ তার জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারে৷
প্রশ্ন হলো, নিউক্লিয়ার ফিউশন কি জলবায়ু সংরক্ষণ করতে পারবে? ফ্রান্সের নতুন চুল্লিতে নিয়ন্ত্রিত এক সূর্য সৃষ্টি করার লক্ষ্য রয়েছে, যা জ্বালানির নির্ভরযোগ্য উৎস হয়ে উঠবে৷ সেই প্রক্রিয়ায় কোনো কার্বন-ডাই-অক্সাইড সৃষ্টি হবে না৷ প্রচলিত পরমাণু কেন্দ্রের তুলনায় কম বিকিরণ ও কম পরমাণু বর্জ্য তৈরি হবে৷
যে হাইড্রোজেন সেই ফিউশন ঘটাবে, সেটি সমুদ্র থেকে আসবে৷ কিন্তু প্রচলিত পরমাণু কেন্দ্রের তুলনায় এ ক্ষেত্রে ভিন্ন সমস্যা রয়েছে৷
ফার্স্ট লাইট ফিউশন প্রকল্পের জানলুকা পিসানেলো বলেন, ‘‘রিয়্যাকশন যাতে পালিয়ে না যায়, তা নিশ্চিত করতে বিশাল উদ্যোগের প্রয়োজন৷ ফিউশনের ক্ষেত্রে রিয়্যাকশন প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হলে অনেক বেগ পেতে হয়৷’’
এই প্রকল্পের ব্যয় শুরুতে ৫০০ কোটি ইউরো ধরা হলেও এখন সেই অঙ্ক চার গুণ বেড়ে গেছে৷ একবার চালু হলে ফিউশন প্রক্রিয়া শুরু করতে বিশাল পরিমাণ জ্বালানির প্রয়োজন হবে৷ প্রশ্ন উঠছে, বিশাল উত্তাপ কীভাবে নিরাপদে চুল্লি থেকে বার হবে?
গবেষকরা গোটা বিশ্বে বিকল্প পরমাণু প্রযুক্তির সন্ধান করছেন৷ চীন সম্প্রতি ইউরেনিয়ামের বদলে থোরিয়াম চালিত চুল্লি পরীক্ষার কাজ শুরু করেছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিল গেটস ‘ন্যাট্রিয়াম’ চুল্লি গড়ে তোলায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন৷ পানির বদলে তরল সোডিয়াম দিয়ে সেটির কেন্দ্রস্থল শীতল রাখা যাবে৷
প্রতিবাদ ও সমালোচনা সত্ত্বেও পরমাণু শক্তির প্রয়োগ বেড়েই চলেছে৷ মনে হচ্ছে ভবিষ্যতে এ ছাড়া যেন অন্য কোনো উপায় নেই৷
এসডব্লিউ/এসএস/১৫৫৭
আপনার মতামত জানানঃ