কয়েক সপ্তাহ ধরে শ্রীলঙ্কায় দুর্নীতিবাজ ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে সাধারণ জনগণ। শ্রীলঙ্কার পর এবার উত্তাল মালদ্বীপ। যার পেছনে রয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিন। দুর্নীতিতে জড়িত থাকার কারণে দেশটির সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল্লাহ ইয়ামিনকে পুনরায় গ্রেপ্তারের আহ্বান জানিয়েছে দেশটির যুবসমাজ।
যুবকদের একটি দল দেশটির সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল্লাহ ইয়ামিনের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছে। এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এএনআই।
ইয়ামিনকে ২০১৯ সালে রাষ্ট্রীয় তহবিলে ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আত্মসাৎ করার জন্য পাঁচ বছরের জেল এবং ৫ মিলিয়ন ডলার জরিমানা করা হয়েছিল।
ইয়ামিন, যিনি ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি ঐতিহ্যগত মিত্র ভারতের ক্ষোভকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দেশটিকে চীনের কাছাকাছি আনার জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত। তিনি দ্বীপপুঞ্জের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট, মোহাম্মদ নাশিদকে ক্ষমতাচ্যুত করার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন, যিনি ২০১৮ সালে ফিরে আসার আগে নির্বাসনে পালিয়ে গিয়েছিলেন যখন ইয়ামিন একটি জাতীয় নির্বাচনে অপ্রত্যাশিতভাবে ক্ষমতা হারিয়েছিলেন।
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে মালদ্বীপ দেশ হিসেবে ছোট হলেও পাশাপাশি দুই বৃহৎ শক্তি চীন ও ভারতের দৃষ্টি রয়েছে রাষ্ট্রটির ওপর। ভৌগোলিক অবস্থানগত গুরুত্বের কারণে দেশ দুটি মালদ্বীপের ওপর যে প্রভাব বিস্তার করতে চায়, তা প্রভাবিত করে দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকেও। ফলে আবদুল্লাহ ইয়ামিন তার রাজনৈতিক দর্শনে যেমন ভারত বিরোধিতাকে লক্ষ্য বানিয়েছেন, তেমনি বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম সোলিহ তার পররাষ্ট্রনীতি সাজিয়েছেন ইন্ডিয়া ফার্স্ট নীতি দিয়ে।
২০১৬ সালে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার অনুসন্ধানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইয়ামিনের মেয়াদকালে দ্বীপ ইজারা দিয়ে মালদ্বীপ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রায় আট কোটি মার্কিন ডলার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে সরিয়ে নেওয়া হয়। এসব অর্থ নগদ উত্তোলন ছাড়াও রাজনীতিবিদদের ঘুষ দেওয়াতেও ব্যবহৃত হয়। গোপনে ধারণকৃত সাক্ষাৎকারে ইয়ামিনের সহযোগীরা তাকে চুরি করা অর্থ হস্তান্তরের কথা স্বীকার করেন। ইয়ামিনের বাসভবনে ওই অর্থ হস্তান্তরে জড়িত তিনজনের একজন বলেন, প্রেসিডেন্টের জন্য ওই ব্যাগ বহন করাও কষ্টকর ছিলো।
অর্থ পাচারের মামলা দায়ের করেছে দেশটির প্রসিকিউটররা। ইয়ামিনের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়, তার সাবেক সহযোগীর প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত এসওএফ প্রাইভেট লিমিটেডের মাধ্যমে কমপক্ষে ১০ লাখ মার্কিন ডলার গ্রহণ করেছেন ইয়ামিন। ২০১৫ সালের অক্টোবরে মালদ্বীপ ইসলামিক ব্যাংক-এ ইয়ামিনের অ্যাকাউন্টে হস্তান্তর করা হয়। তবে ইয়ামিন দাবি করে আসছেন নির্বাচনি প্রচারণার তহবিল হিসাবে এই অর্থ হস্তান্তর করা হয়েছিল।
তার বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে প্রায় ১৫ লাখ মার্কিন ডলার নগদ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭২৩
আপনার মতামত জানানঃ