দখল করা পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে শিরিন আবু আকলেহ নামের আল জাজিরার এক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিমতীরে ইসরায়েলি সেনারা তাকে গুলি করে হত্যা করে।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। বুধবার (১১ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার জেনিন শহরের কাছে ইসরায়েলি নিরাপত্তা অভিযানের মধ্যে দায়িত্বপালনের সময় ইহুদি এই দেশটির সেনাদের গুলিতে তিনি নিহত হন।
আলজাজিরার নিদা ইব্রাহিম বলেছেন, কোন পরিস্থিতিতে শিরীন আবু আকলেহের মৃত্যু হয়েছে সেটি এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এই ঘটনায় সামনে আসা একটি ভিডিওতে আবু আকলেহকে মাথায় গুলি করা হয়েছে বলে দেখা গেছে।
ফিলিস্তিনি শহর রামাল্লা থেকে ইব্রাহিম বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত যা জানি তা হলো- ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শিরীন আবু আকলেহের মৃত্যুর ঘোষণা দিয়েছে। ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরের উত্তরে অবস্থিত জেনিন শহরে ইসরায়েলি অভিযানের মধ্যে দায়িত্বপালনের সময় বুধবার তিনি মাথায় গুলিবিদ্ধ হন।’
নিদা ইব্রাহিম আরও বলেন, ‘এই ঘটনাটি শিরীন আবু আকলেহের সঙ্গে কাজ করা সাংবাদিকদের জন্য একটি ধাক্কা।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে ইব্রাহিম বলেন, আবু আকলেহ খুব সম্মানিত একজন সাংবাদিক ছিলেন। ২০০০ সালে দ্বিতীয় ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদার শুরু থেকে তিনি আলজাজিরার সাংবাদিক হিসেবে কাজ করছিলেন।
এদিকে আলজাজিরার শিরীন আবু আকলেহকে গুলি করে হত্যার সময় আরও এক ফিলিস্তিনি সাংবাদিককে গুলি করেছে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী। দায়িত্বপালনের সময় পেছন থেকে ইহুদি এই দেশটির সেনারা তাকে গুলি করে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
আলজাজিরা বলছে, আহত ওই সাংবাদিকের নাম আলি সামৌদি। তিনি জেরুজালেমভিত্তিক সংবাদপত্র কুদসে কাজ করেন। অবশ্য তার অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক এই সংবাদমাধ্যমটি।
এদিকে মেক্সিকোর পূর্বাঞ্চলের ভেরাক্রুজ প্রদেশে দুই সাংবাদিককে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। গত সোমবার অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা গাড়িতে বসে থাকা ইয়েসিনা মোলিনেডো ও সেইলা গার্সিয়া নামের দুই সাংবাদিককে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। খবর দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেলের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। রয়টার্সের।
মেক্সিকোতে সংবাদকর্মীদের হত্যার সবচেয়ে ভয়াবহ বছর এটি। বেসরকারি সংগঠন আর্টিকেল ১৯–এর তথ্য অনুযায়ী, দেশটির প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদরের শাসনামলে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর সহিংসতা বেড়েছে।
মেক্সিকোর সিনালোয়ো প্রদেশের একটি রাস্তার পাশ থেকে প্রখ্যাত সাংবাদিক লুইস এনরিক রামিরেজের লাশ উদ্ধারের চার দিনের মাথায় দুজন সাংবাদিককে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। রামিরেজের লাশ উদ্ধারের আগে দেশটিতে এ বছরেই আট সাংবাদিককে হত্যার ঘটনা ঘটেছিল।
অনেক দেশেই দুর্নীতি, পাচার, মানবাধিকার লঙ্ঘন কিংবা পরিবেশ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনুসন্ধানে গিয়ে সাংবাদিকদের জীবন ঝুঁকিতে পড়ছে। এছাড়া, অপহরণ, নির্যাতন, ডিজিটাল ও অন্যান্য মাধ্যমে গুজব রটানোসহ নানা হয়রানিতে পড়তে হচ্ছে সাংবাদিকদের। নারী সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে অনলাইন সহিংসতার মাত্রা বেশি বলেও জানিয়েছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, সাংবাদিকরা আরও অগুনিত হুমকির মুখোমুখি হচ্ছেন। যেমন—অপহরণ, নির্যাতন ও গুম থেকে শুরু করে গুজব রটানো ও হয়রানি, বিশেষত ডিজিটাল মাধ্যমে, অনেক ধরনের ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। নারী সাংবাদিকরা বিশেষত অনলাইন সহিংসতার ঝুঁকিতে বেশি।
তিনি বলেন, সমাজের ওপর সামগ্রিকভাবে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অপরাধের ব্যাপক প্রভাব পড়ে। কারণ তারা তথ্যপ্রাপ্তির মাধ্যমে মানুষকে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সহযোগিতা করেন। কোভিড-১৯ মহামারি এবং ভুল তথ্যের ছায়া মহামারি দেখিয়ে দিয়েছে যে সঠিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য সত্যিকার অর্থেই জীবন-মৃত্যুর পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। তথ্যপ্রাপ্তি যখন হুমকিতে পড়ে, তখন তা এমন বার্তা পাঠায়, যা গণতন্ত্র ও আইনের শাসনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, কোনও রাষ্ট্র যদি নিজেকে গণতান্ত্রিক দাবি করে, তবে সেখানে গণমাধ্যমের একশভাগ স্বাধীনতা থাকতেই হবে। যে গণমাধ্যম সরকারের সমালোচনা করবে, সেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আবার সেই সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে। জনসাধারণের কথাই উঠে আসে গণমাধ্যমে। তাই এই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত না করতে পারলে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪০৬
আপনার মতামত জানানঃ