ভারতীয় নারীদের প্রজনন হার কমেছে প্রায় অর্ধেক। ভারতের ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভিস-৫-এর (এনএফএইচএস) করা এক গবেষণায় এই তথ্য পাওয়া গেছে।
গত রোববার প্রকাশিত ভারত সরকারের এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে বলা হয়, সবচেয়ে বেশি কমেছে মুসলমান নারীদের প্রজননের হার।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৫-১৬ সালে ভারতীয় নারীদের প্রজননের হার ছিল ২ দশমিক ৬। ২০১৯-২১ সালে তা কমে হয়েছে ২ দশমিক ৩।
৩০ বছর আগে যে হার ছিল ৪ দশমিক ৪, সর্বশেষ সমীক্ষায় তা কমে ২ দশমিক ৩-এ দাঁড়িয়েছে। তবে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর তুলনায় মুসলমান নারীদের প্রজনন হার বেশি। হিন্দু নারীদের ক্ষেত্রে এই হার ১ দশমিক ৯৪।
তুলনামূলক যে হিসাব এনএফএইচএস-৫ প্রতিবেদনে দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রজননের হার সবচেয়ে কম বৌদ্ধ নারীদের—মাত্র ১ দশমিক ৩৯। জৈনদের ক্ষেত্রে তা ১ দশমিক ৬০, শিখদের ১ দশমিক ৬১ এবং খ্রিষ্টানদের ১ দশমিক ৮৮।
গবেষকেরা বলছেন, নারীশিক্ষার প্রসার যত ঘটছে, সচেতনতা তত বাড়ছে। ফলে প্রজননের হারও কমে চলেছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মুসলমান সমাজে দুটি বিষয় ঘটছে। মেয়েরা অনেক বেশি স্কুলে যাচ্ছে এবং সমাজে গর্ভনিরোধকের ব্যবহার বেশি হচ্ছে।
এই দুই কারণে গত এক দশকে মুসলমান নারীদের মধ্যে সন্তান নেওয়ার হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
২০১৫-১৬ সালে এনএফএইচ এস-৪-এর প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছিল, মুসলমান সমাজে ৩২ শতাংশ নারী স্কুলমুখী হন না। হিন্দু নারীদের মধ্যে স্কুলে না যাওয়ার হার ছিল ৩১ দশমিক ৪ শতাংশ।
আর গত রোববার প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২১ সালে মুসলমান নারীদের স্কুলে না যাওয়ার হার কমে হয়েছে ২১ দশমিক ৯ শতাংশ। তুলনায় হিন্দু নারীদের হার কমে হয়েছে ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ; অর্থাৎ মুসলমান নারীরা হিন্দুদের তুলনায় বেশি স্কুলে যাচ্ছেন।
শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে আবার শহর ও গ্রামের চিত্র ভিন্ন। শহরের নারীদের বিদ্যালয়ে যাওয়ার প্রবণতা গ্রামের নারীদের চেয়ে বেশি। সন্তান উৎপাদনের ক্ষেত্রেও তা প্রতিফলিত হয়।
শহরে প্রজননের হার গ্রামের তুলনায় কম। আর্থিক সচ্ছলতাও অন্য একটি কারণ। অপেক্ষাকৃত ধনী পরিবারের নারীদের সন্তান দরিদ্রদের তুলনায় কম।
নারীশিক্ষা বিস্তারের ওপর বিশেষজ্ঞ মহলের গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। দেখা গেছে, শিক্ষিত মেয়েদের সন্তানসংখ্যা কম। স্কুলে না যাওয়া নারীদের প্রজনন হার যেখানে ২ দশমিক ৮, সেখানে বিদ্যালয়ে যাওয়া নারীদের প্রজনন হার ১ দশমিক ৮।
নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের তৈরি প্রতীচী ট্রাস্টের জাতীয় গবেষণা সমন্বয়ক সাবির আহমেদ গতকাল সন্ধ্যায় এই সমীক্ষা সম্বন্ধে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই রিপোর্ট খুবই আশাব্যঞ্জক।
২০০৪-০৫ সাল থেকে দেশজুড়ে আশার স্বাস্থ্যকর্মীরা যে কাজ করে চলেছেন, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এবং শহরের দরিদ্রদের মধ্যে তৃণমূল স্তরে যেভাবে তারা স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াচ্ছেন, এটা তারই ফল।’
এদিকে, অন্য বিবিসিতে প্রকাশিত এক জরিপে দেখা যায়, ভারতের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে যাবার প্রবণতা অনেক বেশি স্পষ্ট। যদিও তারা আগেকার দশকগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে হিন্দুদের চেয়ে এগিয়ে ছিল।
সবচেয়ে চমকপ্রদ ব্যাপার হচ্ছে, ভারতে মুসলিমদের মাত্র এক প্রজন্মের মধ্যে উর্বরতার হার নেমে যাওয়া। দেখা যাচ্ছে, ২৫ বছরের কমবয়স্ক প্রতি মহিলার ক্ষেত্রে সন্তানের সংখ্যা প্রায় দুটি কমে গেছে বলছেন পিউ-এর সিনিয়র গবেষক স্টেফানি ক্র্যামার।
ভারতে ১৯৯০এর দশকে গড়ে প্রতি মহিলার সন্তানের সংখ্যা ছিল ৩.৪ – তবে ২০১৫ সালে তা কমে ২.২-এ নেমে এসেছে। কিন্তু এসময়ে মুসলিমদের মধ্যে গড় সন্তান সংখ্যা কমে গেছে আরো বেশি, ৪.৪ থেকে তা নেমে এসেছে ২.৬-এ।
গত ৬০ বছরে ভারতের জনসংখ্যায় মুসলিমদের অনুপাত বেড়েছে ৪ শতাংশ। অন্যদিকে হিন্দুদের সংখ্যার অনুপাত প্রায় একই পরিমাণ কমে গেছে। অন্য ধর্মীয় জনগোষ্ঠীগুলোর ক্ষেত্রে অনুপাত প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১২৩৫
আপনার মতামত জানানঃ