দুই নারী পরস্পরকে বিয়ের স্বীকৃতি চেয়ে আবেদন করেছিলেন ভারতের এলাহাবাদ হাইকোর্টে। আদালত তাদের সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। একই সঙ্গে তাদের একজনের মায়ের আটকে রাখার অভিযোগও খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, সম্প্রতি এক নারীর মা, তার ২৩ বছর বয়সী মেয়ের জিম্মা চেয়ে পিটিশন দাখিল করেন। অভিযোগ ছিল, ২২ বছরের এক নারী তার মেয়েকে অবৈধভাবে আটকে রেখেছেন। পরে আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে তাদের দুইজনকে শুনানিতে হাজির করার জন্য উত্তর প্রদেশ রাজ্যের সরকারি আইনজীবীকে নির্দেশ দেন।
৭ এপ্রিল বিচারপতি শেখর কুমার যাদবের এজলাসে উপস্থিত হন ওই দুই নারী। তারা পরস্পরের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ বলে দাবি করেন। একটি বৈবাহিক চুক্তিপত্রও আদালতের কাছে জমা দিয়ে সেই বিয়ের স্বীকৃতি চান তারা। সমলিঙ্গ বিয়ে অপরাধ হিসাবে গণ্য না করার শীর্ষ আদালতের রায়ের কথাও উল্লেখ করেন এই দুই নারী। তারা দাবি করেন, হিন্দু বিবাহ আইন দুজনের বিয়ের কথা বলে, তাতে নারীর সঙ্গে নারীর বিয়ের ব্যাপারে বিরোধিতা করা হয়নি।
সরকারি আইনজীবী পাল্টা দাবি করেন, হিন্দু কৃষ্টিতে বিবাহ একটা সংস্কার আর সেটা শুধু নারী-পুরুষের মধ্যেই হতে পারে।
তার দাবি, নারী-পুরুষ ছাড়া অন্য কোনো ধরনের বিয়ে ভারতীয় পরিবারের ধারণাকে অস্বীকার করে আর তাই তা গ্রাহ্য করা যায় না।
তিনি উল্লেখ করে বলেন, হিন্দু বিবাহ আইন ১৯৫৫, বিশেষ বিবাহ আইন ১৯৫৪, এমনকি বিদেশি বিবাহ আইন ১৯৬৯ এমন বিয়ের স্বীকৃতি দেয় না। অনুমোদন করে না মুসলমান, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ প্রভৃতি ধর্মও।
সরকারি আইনজীবী বলেন, আমাদের দেশ ভারতীয় সংস্কৃতি, বিভিন্ন ধর্ম এবং ভারতীয় আইন অনুযায়ী চলে। অন্য দেশের মতো চুক্তিতে নয়, এখানে বিবাহ একটা পবিত্র সংস্কার বলে বিবেচিত।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, এ অঞ্চলের সমাজ পুরুষের যৌনতা প্রকাশ করার বিষয়টি যতো সহজভাবে গ্রহণ করে, নারীদের ক্ষেত্রে সেই গ্রহণযোগ্যতা সমাজে নেই বলে নারীদের জন্য ট্যাবুটা আরো বেশি কাজ করছে।
তারা বলেন, নারী যখন আমাদের দেখার অভ্যস্ততা বা বাইনারি চিন্তাধারার বাইরে গিয়ে সমকামিতার কথা বলে, তখন সেই বিষয়টি আরো মেনে নেয় না সমাজ। ফলে নারীরা নিজের যৌনতা লুকিয়ে রাখতে রাখতে বা বাধ্য হয়ে আরোপিত জীবনযাপন করতে করতে এক সময় মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হয়।
তারা বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, বিভিন্ন খাতে কর্মরত নারীদের মধ্যে, শহরে-গ্রামে গৃহিণীদের মধ্যেসহ সব ক্ষেত্রেই সমকামী নারীদের উপস্থিতি রয়েছে। আইনে সমকামিতা অবৈধ হওয়ায় এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এটি পাপ হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় নিরাপত্তার স্বার্থে সমকামীদের একটা বড় অংশ বিষয়টি গোপন রাখেন। ফলে সমকামীদের সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০৩৪
আপনার মতামত জানানঃ