নরসিংদীতে মসজিদে শিশু কন্যাকে নেওয়ার জেরে সংঘর্ষ, এক জন নিহতও হয়েছে। সূত্র মতে, কন্যা শিশুকে মসজিদে নিয়ে যাওয়ায় শুরু হওয়া তর্ক থেকে সহিংসতা শুরু হলে নরসিংদীর রায়পুরায় একজন নিহত হয়েছেন।
নরসিংদীর রায়পুরা থানার উত্তর বাখরনগর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে গত বৃহস্পতিবার ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে গতকাল রবিবার।
জানা যায়, রায়পুরায় ওই মসজিদে ইমামের পেছনের সারিতে এক কন্যা শিশু দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষ বাধে। এক কৃষককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। আজ রবিবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর উত্তরার শিন শিন জাপান হাসপাতালে লাল চান (২৮) নামে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) বাহাদুরপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম ও তার চার বছরের মেয়ে নুসরাতকে নিয়ে মাগরিবের ওয়াক্তে বাড়ির পাশের মসজিদে আসেন। পরে জামাত শুরু হলে মেয়ে ও তিনি ইমামের পেছনের সারিতে দাঁড়ান।
ওই সময় ইমামের পেছনে মেয়ে শিশু দাঁড়ানো নিয়ে আপত্তি তোলেন প্রতিবেশী আলাউদ্দিন। এরই জেরে দুজনের মধ্যে তর্ক হয়। এক পর্যায়ে আলাউদ্দিনকে মারধর করে নুরুল।
এদিকে মামা আলাউদ্দিনকে মেরে আহত করার সংবাদ শুনে ওই রাতে ভাগ্নে লাল চান তাঁকে দেখতে মামাবাড়িতে আসেন। পরে মামার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বাড়ি ফেরার পথে রাত ১০টার দিকে প্রতিপক্ষ নুরুল ইসলাম, জুয়েল, মুক্তার ও অলি মিলে লাল চানের মাথায় উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে।
পরে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে নরসিংদী সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। তারপর সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা লাল চানকে ঢাকায় রেফার্ড করে। সেখানে রাজধানীর উত্তরার শিন শিন জাপান হাসপাতালে তিন দিন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
নিহত লাল চানের মামা আলাউদ্দিন বলেন, নাবালক একটি মেয়ে ইমামের পেছনে দাঁড়ানো নিয়ে কথা বলায় মেয়েটির বাবা নুরুল আমাকে প্রথমে গালি দেয়। পরে চরথাপ্পড় ও মারধর করে। রাতে ভাগ্নে লাল চাঁন আমাকে দেখে বাড়ি যাওয়ার পথে নুরুল ও তার লোকজন মিলে তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে।
আড়ো প্রধানবাড়ির মসজিদের ইমাম মো. মোফাজ্জল বলেন, একটি মেয়ে শিশু আমার পেছনের সারিতে দাঁড়ানো নিয়ে দুজন মুসল্লির মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছে। এ মসজিদে আমি নতুন তাই ওই দুজন ব্যক্তির নাম পরিচয় জানি না। পরে রাত ১০টার দিকে মসজিদের বাহিরে ঝগড়ার শব্দ শুনেছি। তারপর কি হয়েছে তা জানি না।
অভিযুক্ত নুরুলের মা মনোয়ারা জানান, রাতে ছেলের সঙ্গে চার বছরের নাতি নুসরাত মসজিদে গিয়েছিল। এনিয়ে আলাউদ্দিনের সঙ্গে ঝগড়া হয়। এ ঘটনায় আমার ছেলে নুরুল, মেয়ে আমেনা ও ভাসুরের ছেলে জুয়েল আহত হয়েছে। এর বেশি কিছু জানি না।
ওই ঘটনায় মামলা হওয়ার পর পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ প্রসঙ্গে নরসিংদীর রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিজুর রহমান বলছেন, বৃহস্পতিবার বাহাদুরপুর গ্রামের একটি মসজিদে স্থানীয় একজন ব্যক্তি তার শিশুকন্যাকে সাথে নিয়ে ইফতার করতে গিয়েছিলেন।
কন্যা শিশুকে মসজিদে নিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে সেখানকার আরেকজন ব্যক্তির সঙ্গে তার তর্ক হয়। দুই পরিবারের সদস্যরা সেই সংঘর্ষে অংশ নেন। এক পর্যায়ে গ্রামের আরো মানুষ এই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
নিহতের পরিবার থানায় যে লিখিত অভিযোগ করেছে, সেখানে তারা লিখেছেন নিহত লাল চান মিয়া সংঘর্ষে অংশ নেননি, তিনি শুধু সংঘর্ষ থামানোর চেষ্টা করছিলেন। এসময় দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে তিনি গুরুতর আহত হন।
সেদিন রাতেই তাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর রবিবার দুপুরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় হয় লাল চান মিয়ার। ওই সংঘর্ষের পরদিন লাল চানের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় একটি অভিযোগ দেয়া হয়েছিল।
ওসি আজিজুর রহমান জানান, এ ঘটনায় ১২ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। একজনকে তারা গ্রেপ্তার করেছেন। গ্রামটির বহু মানুষ এ ঘটনার পর পালিয়ে আছে বলে জানা যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের অক্টোবর মাসেই এই রায়পুরার পাড়াতলী ইউনিয়নের কাচারিকান্দি নামে একটি চরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুজন নিহত আর অন্তত ২০ জন আহত হয়েছিল।
এসডব্লিউ/এসএস/২০৩০
আপনার মতামত জানানঃ