ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসলামি বক্তা, গবেষক ও লেখক জাকির নায়েকের ইসলামিক গবেষণা ফাউন্ডেশনকে (আইআরএফ) নিষিদ্ধ করেছে। মুসলিম তরুণদের উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত করার অভিযোগে পাঁচ বছরের জন্য প্রতিষ্ঠানটির ওপর এ নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে এনডিটিভি।
এক প্রজ্ঞাপনে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, আইআরএফ মুসলিম তরুণদের চরমপন্থায় আসতে উসকানি দিচ্ছে। জাকির নায়েকের বক্তৃতা আপত্তিকর কারণ তাতে বলা হচ্ছে, প্রত্যেক মুসলিমের জঙ্গি হওয়া উচিত।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আরও বলা হয়, কম বয়সীদের জোর করে ধর্মান্তরিত করার জন্য উসকানি দিচ্ছেন জাকির নায়েক। আত্মঘাতী বিস্ফোরণকে সমর্থন করা, হিন্দু, দেবদেবী ও অন্যান্য ধর্মের প্রতি অসম্মানজনক মন্তব্য করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
তাছাড়া গুজরাট, কর্ণাটক, জম্মু-কাশ্মীর, ঝাড়খণ্ড, কেরালা, মহারাষ্ট্র ও ওড়িশায় এই সংগঠনের সদস্য ও সমর্থকরা সম্প্রতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বলেও জানায় মন্ত্রণালয়টি।
সলিসিটির জেনারেল জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তার অনুগামীদের উসকানিমূলক ভিডিও ও বক্তৃতা দিয়ে প্রভাবিত করছেন জাকির নায়েক। মুসলিম তরুণদের বিপথে যেতে লাগাতার উসকানি দিয়ে চলেছেন তিনি। এই কাজে আইআরএফকে হাতিয়ার করেছেন তিনি। তাই পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হলো প্রতিষ্ঠানটি।
আইআরএফ মুসলিম তরুণদের চরমপন্থায় আসতে উসকানি দিচ্ছে। জাকির নায়েকের বক্তৃতা আপত্তিকর কারণ তাতে বলা হচ্ছে, প্রত্যেক মুসলিমের জঙ্গি হওয়া উচিত।
জাকির নায়েক একজন ভারতীয় ইসলামি চিন্তাবিদ, একজন স্পিকার, দার্শনিক, এবং লেখক যিনি সারা বিশ্বের ইসলাম ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের সাথে কাজ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি একজন এমবিবিএস ডাক্তার ছিলেন, কিন্তু তিনি ১৯৯১সাল থেকে ইসলাম প্রচারের উপর মনোনিবেশ করেছেন। তিনি ধর্মতত্ত্বের উপর এক বিশাল শক্তিশালী স্মৃতিচারণকারী হিসাবে আবির্ভূত হন এবং বিশ্বজগতের খ্যাতি অর্জন করেন। নায়েক পিস টিভি নেটওয়ার্ক দ্বারা পরিচালিত একটি ইসলামি রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামে একটি অলাভজনক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন।
মুম্বাইয়ের মুসলমান অধ্যুষিত এলাকা ডংগ্রিতে ১৯৬৫ সালে এক ডাক্তার পরিবারে জাকির নায়েকের জন্ম। তার বাবা ছিলেন চিকিৎসক, তার বড়ভাইও চিকিৎসক।
সেন্ট মেরিস হাইস্কুলে লেখাপড়া শেষ করে তিনি মুম্বাইয়ের টোপিওয়ালা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়েন।
কিন্তু ১৯৯১ সালে ডাক্তারি পেশা ছেড়ে দিয়ে ডংগ্রিতেই তিনি গড়ে তোলেন ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থা।
২০১০ সালে ‘অগ্রহণযোগ্য ব্যবহার’ এবং বিতর্কিত বক্তব্য প্রদানের জন্য ব্রিটিশ সরকার তার বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
তবে তিনি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসেন ২০১৬ সালে ঢাকার হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর।
বাংলাদেশের গণমাধ্যম দাবি করেছিল যে, হামলাকারীদের একজন জাকির নায়েকের বক্তব্য শুনে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল। ওই মাসেই বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ তার ‘পিস টিভি’র সম্প্রচার নিষিদ্ধ করে।
২০১৬ সালের নভেম্বরে ভারতের কাউন্টার টেররিজম এজেন্সি ধর্মকে পূঁজি করে ঘৃণা ছড়ানো এবং অনৈতিক কার্যকলাপের জন্য জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ আনে। এরপর ২০১৭ মালে তিনি মালয়েশিয়ায় চলে যান।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০২০
আপনার মতামত জানানঃ