আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংলাপ শুরু করেছে নতুন নির্বাচন কমিশন৷ এই লক্ষ্যে গতকাল রোববার শিক্ষাবিদদের সাথে আলাপে বসেন কমিশনাররা৷ শিক্ষাবিদদের সাথে অনুষ্ঠিত এ সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হাবিবুল আউয়াল সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা জরুরি বলে মন্তব্য করেন৷
তা না হলে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দুরূহ হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে, হাবিবুল আওয়াল বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা না হলে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দুরূহ হয়ে পড়বে৷
তবে নির্বাচন কমিশনারের এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বলছে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার৷
সংলাপের শেষে বক্তৃতায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক সমঝোতার উপর জোর দিয়ে বলেন, দলগুলোর মধ্যে যদি মোটামুটি সমঝোতা না থাকে, পক্ষগুলো বিবাদমান হয়ে যায়, তাহলে আমাদের পক্ষে ভালোভাবে নির্বাচন করাটা দুরূহ৷ তাই রাজনৈতিক সমঝোতাটা গুরুত্বপূর্ণ৷ সমঝোতা হলে ইসির কাজ সহজ হবে৷
তিনি আরো বলেন, কিছু কিছু রাজনৈতিক দলকে দেখছি, তারা কোনোভাবেই নির্বাচন কমিশনকে আস্থায় নিচ্ছে না৷ তিনি সবার আস্থা অর্জনে সচেষ্ট থাকার কথাও বলেন৷
আছে আস্থার সঙ্কট
জানা গেছে, আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, শিক্ষাবিদ ও অন্যান্য অংশীজনের সাথে সংলাপ চালিয়ে যাবে৷
রোববার বিকেলে অনুষ্ঠিত সংলাপে ৩০জন শিক্ষাবিদকে আমন্ত্রণ জানানো হয়৷ তাদের মধ্যে সংলাপে ১৩ জন শিক্ষাবিদ উপস্থিত ছিলেন৷ জানা গেছে, উপস্থিত শিক্ষাবিদরা নির্বাচন কমিশনকে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর উপর জোর দেন৷ তাছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনে আনার ব্যাপারেও কার্যকর পদক্ষেপের আহ্বান তাদের৷
সংলাপে উপস্থিত শিক্ষাবিদদের একজন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘‘আমরা যারা ছিলাম তারা বলেছি নির্বাচন কমিশনকে সবার আগে গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে হবে৷ কারণ আস্থার সংকট আছে৷ আর নির্বাচনের স্টেকহোল্ডার যারা আছেন তাদের নির্বাচনে আনতে হবে৷ বিশেষ করে যারা মাঠের বিরোধীদল ও তাদের মিত্রদের নির্বাচনে আনতে হবে৷’’
এ ছাড়াও উপস্থিত শিক্ষাবিদরা নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন৷ তাদের যা ক্ষমতা আছে তা প্রয়োগ করে নির্বাচনের সময় প্রশাসনকে নিরপেক্ষ রাখার কথা বলেছেন৷
নির্বাচন কমিশনারও আন্তরিকতার সাথে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন৷ বলেছেন, সবাইকে নির্বাচনে নিয়ে আসার পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে৷ আর ইভিএম তাদের কাছেও স্পষ্ট নয়৷ তাই এটা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন তারা৷
রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য
সংলাপের পর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘‘এই ধরনের আলোচনা নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালে করেছে, ২০১৪ সালে করেছে৷ কোনো লাভ হয়নি৷ তাই এইসব ভাড়ামোপূর্ণ কাজ না করাই ভালো৷
আমরা আগেও বলেছি, এখনো বলছি নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমরা ভাবছি না৷ আমরা মনে করি নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়৷
তার কথা, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন যেখানেই পরিবর্তন করা হোক না কেন ভালো নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সম্ভব নয়৷ এটা প্রমাণিত হয়েছে৷
এর জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি জানে যে, তাদের পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেয়া সম্ভব নয়৷ তাদের দুই শীর্ষ নেতার একজন দুর্নীতির দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে ছিলেন৷ এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুকম্পায় বাসায় আছেন৷ আরেকজন শীর্ষ নেতা দণ্ডিত হয়ে পলাতক আছেন৷ তাদের কেউই নির্বাচনে অংশ নেয়ার যোগ্য নন৷ সে কারণেই বিএনপি নির্বাচনকে ভণ্ডুল করতে চায়৷
কারণ তারা জানে নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব নয়৷ তারা একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়৷ যদি একটি অসাংবিধানিক সরকার ক্ষমতায় আসে তাহলে তাদের কোনো সুবিধা হতে পারে৷ এ কারণেই তারা এসব করছে৷
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে সবার সাথে কথা বলে নির্বাচনব্যবস্থাকে আরো ভালো করতে পারবে তাহলে তারা সংলাপ করতেই পারে৷ এটা তাদের ব্যাপার৷ এই সংলাপকে আমরা স্বাগত জানাই৷
এসডব্লিউ/এসএস/১৫৫৩
আপনার মতামত জানানঃ