রাশিয়ার সঙ্গে ফিনল্যান্ডের সীমান্ত ক্রসিং ভ্যালিমা। এলাকাটি হেলসিঙ্কি থেকে ১২০ মাইল পূর্বে। সেখানে পাসপোর্ট এবং কাস্টমস চেকের জন্য বাস এবং গাড়ি থেমে আছে। এসব পরিবহনে থাকা লোকেরা ইউক্রেনীয় নয়। তারা সবাই রাশিয়ান। সংখ্যাটা বেশি না হলেও ক্রমাগত বাড়ছে। লোকগুলো রাশিয়া থেকে চলে যাচ্ছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু লোক রাশিয়া থেকে বেরিয়ে আসতে উদ্বিগ্ন। কারণ, গুজব রয়েছে যে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সরকার শীগগিরই ইউক্রেনের আক্রমণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মোকাবিলায় নিজ দেশে সামরিক আইন চালু করতে পারে।
প্রসঙ্গত, ইউক্রেনে রুশ সেনাদের হামলা শুরুর পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ হচ্ছে। খোদ রাশিয়ায় এই হামলার বিরুদ্ধে ৫৩ শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। এসব বিক্ষোভ থেকে প্রায় ২ হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে রাশিয়ার পুলিশ।
রাশিয়ার পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে ওভিডি-ইনফো নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ৫৩টি শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। এসব বিক্ষোভ থেকে ১ হাজার ৮০০ জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের অধিকাংশই মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরের। এই দুই শহরে বড় জমায়েত হয়েছিল।
রাশিয়ায় বিক্ষোভে যারা অংশ নেন, তারা সবাই যুদ্ধের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছেন। মস্কোয় এমন বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন আলেকসান্দার বেলভ।
তিনি বলেন, ‘পুতিন মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন। আমার ধারণা ছিল, একবিংশ শতাব্দীতে এমন কোনো যুদ্ধ দেখব না।’
আরেকজন বিক্ষোভকারী শিক্ষক নিকিতা গোলুবেভ (৩০) বলেন, ‘আমার দেশ ইউক্রেনে যা করছে, তাতে আমি বিব্রত। সত্যি কথা বলতে, আমি বাকরুদ্ধ। যুদ্ধ সব সময় ভয়ের। আমি এই যুদ্ধ চাই না।
রাশিয়ার সঙ্গে পুরো ইউরোপের ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। এমন অবস্থায় দেশটি থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায় হলো গাড়ি বা ট্রেন দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করা।
রাশিয়ান এক নারীর সঙ্গে কথা হয় বিবিসি সংবাদদাতার। তিনি নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার আগে ইইউ ভিসা পেয়েছিলেন। এখন দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। যা কিছু ঘটছে তা নিয়ে হতাশায় আছেন এই যুবতী।
তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনের মানুষরা আমাদের লোক, আমাদেরই পরিবার। তাদের হত্যা করা উচিত নয়।’
সে কি আবার নিজ দেশে ফিরে যাবে? জিজ্ঞেস করায় এই নারী বলেন, ‘এই খারাপ সরকার (পুতিন) থাকাকালীন নয়। এটা খুবই দুঃখজনক।’
তিনি আরও বলেন, ‘বেশিরভাগ রাশিয়ান এই যুদ্ধ চায় না। তবে তারা পুতিনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলে জেলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।’
সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে ট্রেন হেলসিঙ্কিতে যাচ্ছে। সেটি রাশিয়া থেকে পালাতে উদ্বিগ্ন আরও শত শত লোককে নিয়ে যাচ্ছে। টিকিটের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেশিরভাগ ট্রেনই সম্পূর্ণ বুক করা। রাশিয়া ছেড়ে আসা যাত্রীরা খুবই সীমিত পরিমাণ অর্থ আনতে পারছে। কারণ, বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটির অর্থনীতি ভেঙে পড়ায় শঙ্কায় রয়েছে।
পুতিন কি ক্ষমতা হারাবেন?
টানা ১০ দিনের মতো চলছে ইউক্রেন-রাশিয়ার সংঘাত। দুই দেশের মধ্যে এই সংঘাত কতদূর পর্যন্ত গড়াতে পারে তা অনুমান করা বেশ কঠিন। এর মধ্যেও বিশ্লেষকরা বুঝে ওঠার চেষ্টা করছেন আগামী দিনগুলোতে ইউক্রেনের এই সংঘাত ঠিক কোন দিকে যেতে পারে। এর মধ্যে একটি একটা গুরুতর প্রশ্ন, রুশ ভ্লাদিমির পুতিনের ক্ষেত্রে কি হবে?
ইউক্রেন অভিযান শুরু করার সময় তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা যে কোন পরিণতির জন্য তৈরি।’ কিন্তু সে পরিণতি যদি এই হয় যে পুতিনকেই ক্ষমতা হারাতে হলো?
এখন হয়তো মনে হচ্ছে যে ব্যাপারটা অচিন্ত্যনীয়। কিন্তু এখন দুনিয়া বদলে গেছে, এরকম একটা সম্ভাবনার কথাও ভাবা হচ্ছে।
লন্ডনের কিংস কলেজের ওয়ার স্টডিজের অধ্যাপক স্যার লরেন্স ফ্রিডম্যান এ সপ্তাহেই এক নিবনন্ধে লিখেছেন, ‘এটা এখন খুবই সম্ভব যে কিয়েভ এবং মস্কো- যে কোনোখানেই ক্ষমতার পটপরিবর্তন হতে পারে।’
কেন তিনি একথা বলছেন? এর কারণ সম্ভবত এটাই যে পুতিন এক বিপর্যয়কর যুদ্ধে নেমেছেন। এতে হাজার হাজার রুশ সৈন্য মারা যেতে পারে। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ডেকে আনতে পারে দুর্ভোগ। পুতিন জনসমর্থন হারাতে পারেন।
হয়তো একটা গণবিপ্লবের হুমকিও সৃষ্টি হতে পারে। তিনি হয়তো বিরোধীদের দমনের জন্য রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যবহার করতে পারেন।
কিন্তু এটা তিক্ততা সৃষ্টি করতে পারে এবং রাশিয়ার সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক এলিট শ্রেণী পুতিনের বিপক্ষে চলে যেতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্ব এটা স্পষ্ট করে দিতে পারে যে যদি পুতিন বিদায় নেন ও তার জায়গায় একজন অপেক্ষাকৃত মধ্যপন্থী নেতা আসেন, তাহলে রাশিয়ার ওপর থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হতে পারে, স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্কও পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
হয়তো রাশিয়ায় একটা রক্তাক্ত প্রাসাদ অভ্যুত্থান ঘটে যেতে পারে পুতিন উৎখাত হতে পারেন।
তবে এক্ষুণি হয়তো এমন কিছু ঘটবে বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু পুতিনের কারণে যারা লাভবান হয়েছেন তারাই যদি মনে করেন যে তিনি আর তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারছেন না- তাহলে সেরকম কিছু ঘটে যেতেই পারে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৬৪৫
আপনার মতামত জানানঃ