লাশ কাটা ঘরে ময়নাতদন্তের জন্য আসা নারীর লাশের ওপর চালাতো বিকৃত যৌনচার। অবশেষে লাশ কাটা ঘরের সিরিয়াল ধর্ষক মো. সেলিমকে গ্রেফতার করেছে চট্টগ্রাম পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সোমবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার শাহ নেওয়াজ খালেদ জানান, ৩২ বছর বয়সী এক নারী এবং ১২ বছরের একজনের লাশের স্পর্শকাতর অঙ্গে অস্বাভাবিক কিছু দেখতে পেয়ে চমেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা লাশের ‘এইচভিএস’ পরীক্ষার জন্য সিআইডিতে পাঠান।
‘এইচভিএস’-এ অভিন্ন পুরুষের বীর্য পেলে সিআইডি তদন্ত শুরু করে। তদন্তে লাশ ঘরের প্রহরী সেলিমের সন্ধান মেলে। সোমবার তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় সিএমপির পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ৩২ বছর বয়সী এক নারীর লাশের ময়নাতদন্ত করতে চমেক হাসপাতালে আনা হয়। একই বছরের ২৫ এপ্রিল আনা হয় ১২ বছর বয়সী আরেক শিশুর লাশ।
দুটি লাশের বলপ্রয়োগজনিত কোনো আঘাতের চিহ্ন কিংবা মৃত্যুর পূর্বে ধর্ষণের কোন আলামত পাওয়া না গেলেও স্পশকাতর অঙ্গে পুরুষের বীর্যের উপস্থিতিতে চিকিৎসকদের সন্দেহ হয়।
তখন তারা লাশ দুটির এইচভিএস পরীক্ষার জন্য ঢাকা সিআইডিতে পাঠান। পরীক্ষায় লাশের শরীরে অভিন্ন পুরুষের বীর্যের উপস্থিতি পাওয়া যায়।
ফেব্রুয়ারির শুরুতে ঘটনাটির তদন্তে নামে চট্টগ্রাম সিআইডি। তদন্তকালে সিআইডি জানতে পারে লাশ দুটির ময়নাতদন্তের আগে পাহারায় ছিল লাশ ঘরের অস্থায়ী প্রহরী সেলিম। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে বের হয়ে আসে নারীর লাশের ওপর চালানো যৌন নির্যাতনের নির্মম কাহিনী।
সিআইডির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, চমেক হাসপাতালের লাশ ঘরের অস্থায়ী প্রহরী হিসেবে ১৫ বছর ধরে কর্মরত সেলিম। ময়নাতদন্তের জন্য আসা কোনো নারীদের লাশের ওপর তার লুলুপ দৃষ্টি পড়লেই নেশা করে লাশের ওপর চালাতো বিকৃত যৌনাচার।
প্রাথমিকভাবে দুই নারীর লাশের ওপর যৌনাচারের কথা স্বীকার করলেও সিআইডির ধারণা আরো নারীর লাশের ওপর অভিন্ন কায়দায় নির্যাতন চালানো হতে পারে।
লাশের ওপর যৌন নির্যাতন ছাড়াও আরেক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে ২০১৭ সালে পাঁচলাইশ থানায় ধর্ষণের অভিযোগে আরেকটি মামলা হয়েছে সিরিয়াল ধর্ষক সেলিমের বিরুদ্ধে।
নেক্রোফিলিয়া সম্পর্কে কিছু কথা
নেক্রোফিলিয়া একটি অন্যতম প্রচলিত প্যারাফিলিয়া বা বিকৃত যৌনাচার। নেক্রোফিলিকরা মৃতদেহের সাথে যৌনকার্যে লিপ্ত হয়। এ ক্ষেত্রে অবশ্য কর্মটি করে থাকে পুরুষরা এবং এর শিকার হয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারী মৃত দেহ।
নেক্রোফিলিয়া’ এক ধরণের মানসিক যৌন ব্যাধি। যারা এই ব্যাধিতে আক্রান্ত তাদের বলা হয় নেক্রাফাইল যারা মৃতদেহের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনে ১৯৮৯ সালে ১২২ জন নেক্রোফইল ব্যক্তির তথ্য পর্যালোচনা করে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ঐ গবেষণায় বলা হয়, ‘বাধা দেবে না বা প্রত্যাখ্যান করবে না’, মূলত এমন যৌন সঙ্গী পাওয়ার বাসনা থেকে মরদেহের সাথে যৌন সংসর্গ করে থাকে নেক্রোফাইলরা।
অনেক সময় তারা এমন পেশা নির্ধারণ করে, যেখানে মরদেহের আশেপাশে থাকার সুযোগ থাকে তাদের। তবে গবেষণার জরিপে পর্যালোচনা করা ১২২ জনের কয়েকজন মরদেহের আশেপাশে থাকার সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও হত্যা করার পর মৃতদেহের সাথ যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন বলে উঠে আসে প্রতিবেদনে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৯১০
আপনার মতামত জানানঃ