রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে আটকা পড়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) দুটি জাহাজ। প্রায় অর্ধশতাধিক নাবিক আতঙ্কিতভাবে দিন কাটাচ্ছে। জাহাজ দুটি হচ্ছে এম টি বাংলার অগ্রদূত এবং এম ভি বাংলার সমৃদ্ধি।
এর মধ্যে এম ভি বাংলার সমৃদ্ধি ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরে আটকা পড়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। সূত্র মতে, ইউক্রেনের অলভিয়া সমুদ্র বন্দরে এই জাহাজে আটকা পড়েছে ২৯ জন বাংলাদেশি নাবিক।
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’তে কর্মরত এসব নাবিক যুদ্ধ শুরুর আগে পণ্য নিয়ে ওই বন্দরে পৌঁছান। এরপর থেকেই তারা সেখানে আটকে আছেন।
বিশ্বজুড়ে জাহাজের গতিবিধি পর্যবেক্ষণকারী মেরিন ট্রাফিক ওয়েবসাইটে আজ বাংলাদেশ সময় ৩ টায় বাল্ক ক্যারিয়ার ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজের অবস্থান দেখানো হয়েছে কৃষ্ণসাগরের অলভিয়া বন্দরে কাছাকাছি।
আজ রোবাবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর আড়াইটার দিকে বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে থাকা বাংলাদেশি নাবিক ওমর ফারুক তুহিন গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মঙ্গলবার ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজটি ইউক্রেনে অবস্থান করছে বলে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে।
তুহিন জানান, ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজে ২৯ জন নাবিক আছেন। তাদের সবাই বাংলাদেশি। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর অলভিয়া বন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। তারা এখন আতঙ্কের মধ্যে জাহাজে অবস্থান করছেন। এই মুহূর্তে জাহাজ নিয়ে কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই তাদের কাছে।’
বন্দরের আশেপাশে যুদ্ধ হচ্ছে কি-না এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তুহিন জানান, দূর থেকে গোলাগুলি ও বোমার শব্দ শোনা যাচ্ছে। তবে বন্দরে এখনো বড় কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। সমুদ্রে মাইন পাতা থাকতে পারে এই আশঙ্কায় সব ধরনের জাহাজের মুভমেন্ট বন্ধ রয়েছে।
তিনি জানান, জাহাজে বর্তমানে যে পরিমাণ খাবার আছে তা দিয়ে তারা অন্তত ১০/১৫ দিন টিকে থাকতে পারবেন। তবে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে খাদ্যসঙ্কট ও হামলার শিকার হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন নাবিকরা।
সূত্র মতে, বাংলাদেশি নাবিকদের দ্রুত উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সরকার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং শিপিং করপোরেশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন আটকে পড়া নাবিকরা।
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুমন মাহমুদ সাব্বির বলেন, যুদ্ধ শুরুর আগ থেকে ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে অবস্থান করছিলো বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’। আমাদের চার্টারিং বিভাগ এ বিষয়টি দেখভাল করছে।
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক ক্যাপ্টেন মুজিবুর রহমান বলেন, গত ২১ ফেব্রুয়ারি জাহাজটি তুর্কি বন্দর এরেগলি ছেড়ে যায় এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের বন্দর অলিভিয়ায় পৌঁছে।
জাহাজটি সেখানে পৌঁছানোর পর পরিস্থিতির অবনতি হলে আমরা বন্দর থেকে পণ্য লোড করার পরিকল্পনা বাতিল করে দিই এবং জাহাজের মাস্টারকে অবিলম্বে বন্দর ছেড়ে আন্তর্জাতিক সমুদ্রে পৌঁছাতে বলি।
তিনি জানান, কিন্তু বন্দরের ছাড়পত্র পেতে কিছুটা সময় লেগেছিল এবং ততক্ষণে রাশিয়ার হামলার কারণে বন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তাই জাহাজটি বন্দর ছেড়ে যেতে পারেনি।
প্রসঙ্গত, বাংলার সমৃদ্ধি বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের একটি নতুন জাহাজ। ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর জাহাজটি উদ্বোধন করা হয়।
তবে এম টি বাংলার অগ্রদূত নামে আরও একটি জাহাজও ইউক্রেনে আটকা পড়েছে বলে জানা গেছে। যদিও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ বিষয়ে দুপুরে বিএসসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর দুটি জাহাজ আটকা পড়েছে। এর মধ্যে একটি ইউক্রেনের বন্দরে এবং আরেকটির অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এই অনিশ্চয়তা নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রশ্ন। জন্ম নিচ্ছে উদ্বেগের। ইউক্রেনে অবস্থিত বাংলাদেশিদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের যথাযথ উদ্যোগের অভাব চোখে পড়েছে। এখনও সেখানে আটকে আছে বাংলাদেশি নাবিকেরা। পোলান্ডে যাওয়ার নির্দেশ ছাড়া কার্যত আর কোন পদক্ষেপই নেই সরকারের।
এবার ইউক্রেন জলসীমায় দেশীয় দুটি জাহাজের উপস্থিতি নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব সরকারের কর্মদক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। পাশাপাশি এখনও উদ্ধারের কোনও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বন্দরে হামলা হলেই, রয়েছে প্রাণহানির সম্ভাবনা। নেই পর্যাপ্ত খাদ্য। এমন পরিস্থিতিতে যদি সরকার দেশের বাইরে নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে না পারে, তাহলে অকার্যকর এই প্রবাসী কল্যান মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কি তাদের গ্রহণযোগ্যতা হারায় না?
এসডব্লিউ/এসএস/২১০০
আপনার মতামত জানানঃ