ইউক্রেন সমস্যার জেরে আরো অনিশ্চিত হয়ে পড়ল আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের ভবিষ্যৎ। রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকসমস-এর তরফে জানানো হলো, পৃথিবীর কক্ষপথে মহাকাশ স্টেশনকে ধরে রাখার ব্যাপারে তারা আর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে না। সে ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাকাশ স্টেশন যদি হুড়মুড়িয়ে এসে পড়ে পৃথিবীতে, তার কোনো দায় নিতে রাজি নয় রাশিয়া।
রসকসমস-এর ডিরেক্টর জেনারেল দিমিত্রি রোগোজিন তার টুইটে লিখেছেন, ভারতের ওপরেও পড়তে পারে। চীনেও। অথবা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কক্ষপথ থেকে বেরিয়ে এসে হুড়মুড়িয়ে আমেরিকা বা ইউরোপের ওপরেও পড়তে পারে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন।
তিনি লেখেন, আমাদের সঙ্গে যদি অন্য দেশগুলো না সহযোগিতা করে (ইউক্রেন ইস্যুতে) তা হলে পৃথিবীর কক্ষপথে মহাকাশ স্টেশনকে বাঁচাবে কে? আমরাও আর মহাকাশ স্টেশনকে কক্ষপথে ধরে রাখার জন্য কোনো সহায্য করব না।
রোগোজিন এও লিখেছেন, সে ক্ষেত্রে ৫০০ টন ওজনের মহাকাশ স্টেশন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কক্ষচ্যুত হয়ে আমেরিকা বা ইউরোপের ওপর এসে পড়তেই পারে। এমনকি, তা পড়তে পারে ভারত বা চীনের ওপরেও।
ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার উপরে মহাকাশ স্টেশন দিনে ১৫ থেকে ১৬ বার প্রদক্ষিণ করে পৃথিবীকে। সেখানে এখনো রয়েছেন আমেরিকার চার জন ও রাশিয়ার তিন জন মহাকাশচারী।
একটি আন্তর্জাতিক ফুটবল মাঠের দৈর্ঘ্যের মহাকাশ স্টেশনে রাশিয়ার জন্য রয়েছে আলাদা একটি মডিউলও। স্টেশনটিকে কক্ষপথে ধরে রাখার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে রুশ মহাকাশ গবেষণা সংস্থার। রয়েছে সর্বাধুনিক প্রোপালশন ব্যবস্থা।
টুইটে রসকসমস-এর প্রধান রোগোজিন লিখেছেন, মহাকাশ স্টেশন তো আর রাশিয়ার উপর দিয়ে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে না। তাই তা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাশিয়ার উপর এসে আছড়ে পড়বে না। আছড়ে পড়বে আমেরিকা বা ইউরোপের ওপর। তা আছড়ে পড়তে পারে ভারত বা চীনের ওপরেও।
ইউক্রেন সমস্যার জেরে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৃহস্পতিবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে কড়া অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারির পদক্ষেপ করেন। তার মধ্যে ছিল মহাকাশ প্রযুক্তি খাতে রাশিয়ার জন্য বহু আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা। এর পরেই রসকসমস প্রধানের এই টুইট।
তবে মহাকাশ স্টেশন নিয়ে এই পরিস্হিতিতে যাবতীয় উদ্বেগের মধ্যেও কিছুটা আশার আলো মিলেছে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্হা নাসা ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (এসা)-র প্রধানের মন্তব্যে।
নাসা-র তরফে অবশ্য আশ্বস্ত করা হয়েছে, এই সব নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে না রাশিয়ার সঙ্গে আমেরিকার মহাকাশ সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলি। ওই সংক্রান্ত অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তার ক্ষেত্রগুলি।
নাসা-র তরফেও আশাপ্রকাশ করা হয়েছে, মহাকাশ গবেষণা ও মহাকাশচারীদের কথা মাথায় রেখে রাশিয়াও হয়তো হঠাৎ কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না।
২০২৫ সালেই মহাকাশ স্টেশনের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কথা ছিল, তার পরেই মহাকাশ স্টেশনকে ছুড়ে ফেলা হবে প্রশান্ত মহাসাগরে।
কিন্তু গত বছরেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেন কক্ষপথে মহাকাশ স্টেশনের মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা করেন। রাশিয়া অবশ্য তা মেনে নিতে চায়নি। রাশিয়া তখন জানিয়েছিল মহাকাশ স্টেশনের সঙ্গে থাকতে চায় ২০২৪ পর্যন্ত।
তাই মহাকাশ স্টেশনের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা যে উত্তরোত্তর বাড়ছে, তা বলাই বাহুল্য।
প্রসঙ্গত, শিগগিরই অবসরে পাঠানোর কথা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনকে। ১৯৯৮ সাল থেকে মহাকাশে কাজ করছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন। অনেক বয়স হয়েছে এই স্টেশনের। ২০০০ সাল থেকে আইএসএস পৃথিবীর ১৯টি দেশের অনেক নভোচারীর বাড়িই বলা চলে।
এই স্টেশনে মাইক্রোগ্র্যাভিটি গবেষণার জন্য একটি গবেষণাগার আছে। এখানে বৈজ্ঞানিক বিভিন্ন উন্নয়ন নিয়ে গবেষণা হয়, পানি বিশুদ্ধ করাসহ ক্যানসারের মতো রোগের চিকিৎসা নিয়েও গবেষণা হয়।
একবিংশ শতকের শুরু থেকে মহাকাশে তিন হাজারের বেশি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে এই স্টেশনে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত আইএসএসের কার্যক্রম পরিচালনার কথা ছিল। তবে পাঁচটি মহাকাশ সংস্থা এই স্টেশনের কার্যক্রম ২০৩০ সাল পর্যন্ত চালিয়ে নেওয়ার বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়।
এসডব্লিউ/এসএস/১২৪৬
আপনার মতামত জানানঃ