ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমে পশ্চিম ভারত মহাসাগরে রয়েছে গ্রেটার মালদ্বীপ রিজ। গবেষকরা গ্রেটার মালদ্বীপ রিজ (জিএমআর) এর টেকটোনিক বিবর্তনের সন্ধান পেয়েছেন, যা পশ্চিম ভারত মহাসাগরের একটি ভূ-গতিগত বৈশিষ্ট্য, যা মূল গন্ডোয়ানাল্যান্ড ভেঙে পুনর্গঠনে সাহায্য করতে পারে। এই বৈশিষ্ট্যটি মহাদেশের বর্তমান কনফিগারেশন, মহাদেশীয় খণ্ড এবং ভারত মহাসাগরে মহাসাগরের অববাহিকা গঠনের দিকে পরিচালিত করে। খবর রয়টার্স
ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমে পশ্চিম ভারত মহাসাগরে অবস্থিত, মালদ্বীপ রিজ অ্যাসিসমিক যা ভূমিকম্পের কার্যকলাপের সাথে সম্পর্কিত নয়। শৈলশিরাটি অনেকাংশে অনাবিষ্কৃত রয়ে গিয়েছে এবং এই কাঠামোর গঠন এবং ভূগতিবিদ্যা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নতুন গবেষণার সূত্রে বিজ্ঞানীরা বলছেন– মূল গন্ডোয়ানাল্যান্ড ভেঙে যেতে পারে বা তা পুনর্গঠিত হতে পারে। এই প্লেটটির যে বৈশিষ্ট্যটিকে চিহ্নিত করা গিয়েছে তা এশিয়া মহাদেশের বর্তমান কনফিগারেশনে বদল আনতে সক্ষম।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই বিবর্তনগত বৈশিষ্ট্য মহাদেশীয় ভূখণ্ড এবং ভারত মহাসাগরের অববাহিকা সংক্রান্ত বদলের সূচনা করতে পারে। যা আসলে ভূতত্ত্বগত এক ব্যাপক বদলেরই প্রকারান্তর।
গবেষক দলটি দেখে, মালদ্বীপ রিজটি মধ্য-মহাসাগরীয় রিজের কাছাকাছি এলাকায় গঠিত হতে পারে, যেখানে লিথোস্ফিয়ারিক প্লেট বা স্প্রেডিং সেন্টারের ভিন্ন গতির কারণে একটি নতুন মহাসাগরের তল তৈরি হয়। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, গভীর-সমুদ্র চ্যানেল অঞ্চল (ডিএসসি) সম্ভবত হটস্পট আগ্নেয়গিরির সঙ্গে যুক্ত।
গবেষক দলটি বৃহত্তর মালদ্বীপ রিজ এবং সংলগ্ন সমুদ্র অববাহিকা বরাবর একটি ত্রিমাত্রিক চিত্র তৈরি করে। সেখানে মাধ্যাকর্ষণ অসামঞ্জস্য, উপ-পৃষ্ঠের মধ্যে ঘনত্বের পার্শ্বীয় বৈচিত্র্য ইত্যাদিকেও মাথায় রাখা হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই বিবর্তনগত বৈশিষ্ট্য মহাদেশীয় ভূখণ্ড এবং ভারত মহাসাগরের অববাহিকা সংক্রান্ত বদলের সূচনা করতে পারে। যা আসলে ভূতত্ত্বগত এক ব্যাপক বদলেরই প্রকারান্তর।
এ-ও জানা গিয়েছে যে, মালদ্বীপ রিজ ‘আসিসমিক’ বা ভূমিকম্পপ্রবণ নয়। অর্থাৎ, এখানে ভূকম্পজনিত কোনও বিপত্তি ঘটার আশঙ্কা প্রায় নেই। এখনও পর্যন্ত এই রিজ নিয়ে খুব বেশি চর্চা হয়নি। বহুদিন ধরে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের বাইরে পড়ে থাকা এই ‘রিজ’ নিয়ে এখন নতুন করে আলোচনা চলছে। ভূগতিতাত্ত্বিক দিক থেকেও এই অনুসন্ধান খুব জরুরি। এই রিজের বিবর্তন সামুদ্রিক তলেরও বিবর্তন আনবে।
ভারত সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তরের আওতায় থাকা স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান মুম্বাইয়ের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ জিওম্যাগনেটিজম-এর গবেষণায় এই প্রথম উপগ্রহ থেকে পাওয়া উচ্চ রেজোলিউশনের ছবির সাহায্যে জিএমআর বরাবর সম্ভাব্য ভূতাত্ত্বিক প্রস্থচ্ছেদের উপর আলো ফেলা হয়েছে। গবেষকরা অনুমান করছেন যে জিএমআর মহাসাগরীয় ভূত্বকের নীচে থাকতে পারে। তাদের গবেষণার ফলাফল ভারত মহাসাগরে প্লেট-টেকটোনিক বিবর্তন আরও ভালোভাবে বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র দিতে পারে।
ডঃ এসপি আনন্দের তত্বাবধানে ডঃ প্রিয়েশ কুন্নুম্মালের এই গবেষণায় বৃহত্তর চাগোস-লাকাডিভ রিজের বৃহত্তর মালদ্বীপ রিজ অংশের ভূত্বক এবং পৃথিবীর ভূত্বকের মধ্যে মহাকর্ষীয় ভারসাম্য এবং মহাকর্ষীয় ভারসাম্যের বিষয়টি বিশেষভাবে দেখা হয়েছে। প্রধানত মাধ্যাকর্ষণের অসংগতির ব্যাখ্যা (উপভূতলের মধ্যে ঘনত্বের বিভিন্নতার কারণে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির পার্থক্য) এবং ভূকম্প সম্পর্কিত ব্রডব্যান্ড ও প্রতিসরণ তথ্যের উপর ভিত্তি করে এই প্রথম বৃহত্তর মালদ্বীপ রিজ ও সংলগ্ন সামুদ্রিক অববাহিকায় মোহো-র বিভিন্নতার উপর একটি ত্রিমাত্রিক ছবি দেওয়া হয়েছে। পৃথিবীর ভূত্বক এবং ম্যান্টলের মধ্যে সীমার গভীরতা বা জিএমআর-এর উপর মোহো-র শেষ হয়ে যাওয়া বিজ্ঞানসম্মতভাবে মাপা হয়েছে। এরসঙ্গে বিভিন্ন স্থানে কার্যকর স্থিতিস্থাপক বেধের (টিই) পরিবর্তনও নির্ণয় করা হয়েছে। টিই-র বিভিন্নতা এবং আইসোস্ট্যাটিক ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত এই গবেষণা পত্রটি সম্প্রতি গন্ডোয়ানা রিসার্চ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
আইআইজি-র দলটি দেখেছে মালদ্বীপ রিজ অংশের উপর মোহো গভীরতর এবং দক্ষিণ দিকে গভীর সমুদ্র চ্যানেল অঞ্চলে এটি অগভীর। তবে, গভীর সমুদ্র চ্যানেল অঞ্চলের তুলনায় মালদ্বীপ রিজের উপর কার্যকর স্থিতিস্থাপক বেধ (লিথোস্ফিয়ারের শক্তির বিকল্প)-এর মান কম। মালদ্বীপ রিজ এবং গভীর সমুদ্র চ্যানেল অঞ্চল সম্ভবত মহাসাগরীয় প্রকৃতির। এখানে প্লেটের নীচের পদার্থের সঙ্গে আগ্নেয়গিরির সংযোগ থাকতে পারে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, মালদ্বীপ রিজ মধ্য মহাসাগরীয় রিজের সংলগ্ন এলাকায় গঠিত হয়ে থাকতে পারে (যেখানে লিথোস্ফিয়ারিক প্লেট বা স্প্রেডিং সেন্টারের গতির বিভিন্নতার জন্য মহাসাগরের একটি নতুন তল তৈরি হয়)। এদিকে, গভীর সমুদ্র চ্যানেল অঞ্চল একটি দীর্ঘ রূপান্তর ফল্টের তলায় ছিল (স্প্রেডিং সেন্টারগুলির মধ্যে চাপা পড়ে থাকা, যা লিথোস্ফিয়ারের সৃষ্টি বা ধ্বংস কোনোটাই করে না)। যা গলে যেতে বাধা দেয় এবং প্লাম-রিজ মধ্যবর্তী অঞ্চলে চাগোস ও মালদ্বীপ রিজের মধ্যেকার ব্যবধান বাড়িয়ে দেয়।
যেখানে ভূ-পদার্থগত তথ্য পাওয়া যায় না অথবা অপ্রতুল, সেখানে উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত মাধ্যাকর্ষণের এই অসংগতিগুলি ভূত্বকের গঠন সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে বিশেষ সহায়ক হয়।
ডঃ প্রিয়েশ বলেছেন, এই গবেষণা ভূত্বকের গঠন, আইসোস্ট্যাটিক ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা এবং গ্রেটার মালদ্বীপ রিজের টেকটোনিক বিবর্তনের বিষয়ে নতুন তথ্য দেবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪২২
আপনার মতামত জানানঃ