নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলার দাওয়াহ শাখার এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)। গ্রেপ্তার জেমবি সদস্যের নাম হাফেজ মো. ওয়াহিদুল ইসলাম (৩৮)। বুধবার (১২ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে রাজধানীর গাবতলী আরিচা হাইওয়ে এসএস ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এটিইউ এর মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস শাখার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
আসলাম খান বলেন, ‘গ্রেপ্তার ওয়াহিদুল ইসলাম দিনাজপুরের খানসামা থানার মণ্ডলের বাজার কুমুরিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসার হেফজখানার হাফেজ শিক্ষক। শিক্ষকতার আড়ালে তিনি দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলার জেএমবির দাওয়াহ শাখার অন্যতম প্রধান হিসেবে সাংগঠনিক কাজকর্ম পরিচালনা করে আসছিলেন।’
তিনি বলেন, গত ৪ ডিসেম্বর নীলফামারী জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির পাঁচজন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে নীলফামারী সদর থানায় মামলা হয়। পরবর্তীতে গ্রেপ্তারদের পুলিশ হেফাজতে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
গ্রেপ্তারদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের একটি গোয়েন্দা দল নীলফামারী ও দিনাজপুর অঞ্চলের সক্রিয় জেএমবি সদস্যদের গ্রেপ্তারের জন্য ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করতে থাকে। সেই অভিযানের অংশ হিসেবে গত ১১ ডিসেম্বর এটিইউ জেএমবির তিনজন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। পরে নীলফামারী সদর থানার মামলায় তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়।
এতে করে এলাকার সক্রিয় সদস্যরা ঢাকা এবং চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে চলে যান। এটিইউর একটি গোয়েন্দা দল নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার (১২ জানুয়ারি) রাতে ঢাকায় আত্মগোপনে থাকা দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলার দাওয়াহ বিভাগের অন্যতম প্রধান হাফেজ ওয়াহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে।
ওয়াহিদুল ইসলাম দিনাজপুরের খানসামা থানার মণ্ডলের বাজার কুমুরিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসার হেফজখানার হাফেজ শিক্ষক। শিক্ষকতার আড়ালে তিনি দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলার জেএমবির দাওয়াহ শাখার অন্যতম প্রধান হিসেবে সাংগঠনিক কাজকর্ম পরিচালনা করে আসছিলেন।’
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আফগানিস্তানে তালিবানরা ক্ষমতায় আসায় জঙ্গি নিয়ে হুমকির মুখে পড়তে চলেছে গোটা পৃথিবী। গোটা বিশ্বের আনাচে কানাচে লুকিয়ে থাকা জঙ্গিরা তালিবানদের ভরসায় আবারও সক্রিয় হয়ে উঠছে। এতে করে আবারও বোমা হামলাসহ শত শত মানুষের প্রাণহানিসহ ভয়ংকর ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তালিবানের উত্থান বাংলাদেশের উগ্র মৌলবাদীদেরও তাদের আদর্শগত অবস্থানকে সুসংহত করতে উদ্বুদ্ধ করছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের কেন্দ্র করেও ইতিমধ্যেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে একটি গোষ্ঠী। তারা ওই অঞ্চলে রীতিমত ত্রাস সৃষ্টি করেছে এর মধ্যেই।
বাংলাদেশে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী যে নেতিবাচক ধারণার জন্ম হয়েছে তার একটি হচ্ছে এ অঞ্চলকে ঘিরে জঙ্গি নেটওয়ার্ক বিস্তার। সিরিয়া-ইরাকে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) কার্যক্রম সীমিত হয়ে আসছে। আইএস নিয়ন্ত্রিত অনেক শহর এখন সিরিয়া তথা ইরাকের বাহিনীর দখলে। ওই সব এলাকায় যেসব জিহাদি ছিল, তারা এখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, বিশেষ করে ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া কিংবা মালয়েশিয়ায় পালিয়ে গেছে বলে পূর্ব থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে অনেকে। সেই আশঙ্কা নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে তালিবানের আফগানিস্তান দখলকে কেন্দ্র করে।
সম্প্রতি মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ছয়টি দেশে আত্মঘাতী হামলার সতর্কতা জারি করেছে জাপান। এজন্য ওই ছয় দেশে অবস্থান করা জাপানিদের জনসমাগম থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে টোকিও।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে লড়াই করে আফগানিস্তানকে দখল করার ঘটনা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের সন্ত্রাসবাদী ও জঙ্গি দলগুলোর জন্য প্রেরণা হিসেবে কাজ করছে বলে বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে এএফপি।
নিউ ইয়র্কভিত্তিক সুফেন সেন্টার থিংকট্যাংকের গবেষণা প্রধান কলিন ক্লার্ক এএফপিকে বলেন, ‘তালিবানের এই জয় বিশ্বের অন্য জিহাদি দলগুলোর জন্য প্রেরণা হয়ে দেখা দেবে। এটা তাদের বিশ্বাস করতে সহায়তা করবে যে, বিদেশি শক্তিকে চাইলে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা যায়, এমনকি সেটা যুক্তরাষ্ট্রের মতো ক্ষমতাধর রাষ্ট্র হলেও। আমি মনে করি ৯/১১’র ঘটনার ২০ বছর পূর্তিতে উল্লেখযোগ্য প্রোপাগান্ডা দেখতে পাব। এতে উত্তর আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জিহাদিদের নৈতিক শক্তি বৃদ্ধি করবে।’
ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির প্রোগ্রাম অন এক্সট্রিমিজমের ফেলো আয়মন জাওয়াদ আল তামিমির মতে, ‘তালিবানদের ধৈর্যের এই উদাহরণ বিশ্বের অন্য অঞ্চলের জিহাদি যারা লড়াই করছে তাদের উদ্বুদ্ধ করবে। যদিও আফগানিস্তানের উগ্রবাদীদের সঙ্গে ইসলামিক স্টেটের মতো দলের মতাদর্শিক দ্বন্দ্ব রয়েছে। ইসলামিক স্টেটের নেতৃত্ব আফগানিস্তানে তালিবানদের উত্থানে খুশি হোক বা না হোক, অন্য জিহাদিরা একে মাইলফলক হিসেবে নেবে। অন্য দলগুলো যখন তালিবানদের আনন্দ উদযাপন করতে দেখছে, এতে তারা মনে করছে যে, তারাও যদি ধৈর্য ধরে লড়াই চালিয়ে যেতে পারে তাহলে হয়তো পশ্চিম আফ্রিকা অথবা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ওই উদযাপন তারাও করতে পারবে।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৫২
আপনার মতামত জানানঃ