ক্যান্সার! নীরব ঘাতক এক অসংক্রামক রোগের নাম। প্রতি বছর ক্যান্সারে বিশ্বে প্রায় এক কোটি মানুষের মৃত্যু হয়। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে ক্যান্সারের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। দুই-তৃতীয়াংশ মৃত্যুও ঘটে এসব দেশে। বাংলাদেশের অবস্থা ভয়াবহ।
বাংলাদেশের মানুষের মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর অন্যতম একটি হল ক্যান্সার। দেশে পুরুষদের তুলনায় নারীরা ক্যান্সারে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বলে উঠে এসেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমীক্ষায়।
প্যাথলজিভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি এবং মাসব্যাপী হাসপাতালভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি বিশ্লেষণ করে বিএসএমএমইউর পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগ বলছে, নারীদের ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সার এবং পুরুষদের মুত্রথলির ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা সবচেয়ে বেশি।
এক বছরে দেশে নতুন করে ক্যান্সার রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার ৭৮১ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ১ লাখ ৮ হাজার ১৩৭ জন। ক্যান্সার শনাক্ত ও মৃত্যুর হারে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যাই বেশি।
গবেষণায় দেখা গেছে, আক্রান্ত প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশই নারী এবং ৪০ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষ। ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৭৪ দশমিক ৮ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক এবং ২৫ দশমিক ২ শতাংশ শিশু। আবার পুরুষের তুলনায় নারীরা কম বয়সে ক্যান্সার আক্রান্তের হারও বেশি। বেশিসংখ্যক প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ফুসফুসের ক্যান্সার, লিউকোমিয়া, লিম্ফোমায় আক্রান্ত হন। অন্যদিকে প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার, থাইরয়েড ক্যান্সার এবং জরায়ুমুখে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। অপ্রাপ্তবয়স্ক নারীদের মধ্যে অর্ধেকই ৪৯ দশমিক ৬ শতাংশ প্রজননতন্ত্রের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। তবে ছেলে ও মেয়ে শিশুদের ক্ষেত্রে লিউকেমিয়ায় (ব্লাড ক্যান্সার) আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি।
এক বছরে দেশে নতুন করে ক্যান্সার রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার ৭৮১ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ১ লাখ ৮ হাজার ১৩৭ জন। ক্যান্সার শনাক্ত ও মৃত্যুর হারে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যাই বেশি।
গবেষণায় বলা হয়, নারীরা ১৫ বছর বয়স থেকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং ৪৬ বছরের মধ্যে বেশি রোগী পাওয়া যাচ্ছে। এদিক থেকে আবার পুরুষের বেশির ভাগই ২০ বছরের পর থেকে আক্রান্ত হচ্ছেন, আর ৫০ বছর বয়সের মধ্যেই বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে।
প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের প্রধান ক্যান্সারগুলোর মধ্যে রয়েছে- মূত্রথলির ক্যান্সার ১০.২ শতাংশ, প্রটেস্ট ক্যান্সার ৯.৯ শতাংশ ও মুখগহ্বরের ক্যান্সার ৮.৫ শতাংশ। অন্যদিকে, নারীদের ২৩.৩ শতাংশই আক্রান্ত হচ্ছেন স্তন ক্যান্সারে, ২১.৫ শতাংশ জরায়ু ক্যান্সারে এবং মুখগহ্বরের ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা ৮.৯ শতাংশ।
হাসপাতাল ভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি নিয়ে গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, মোট রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৬৫৬ জন। তাদের মধ্যে পূর্ণবয়স্ক ১ হাজার ২৩৮ জন এবং শিশু ৪১৮ জন। শিশু ছেলেরা প্রধানত লিউকেমিয়া (৭১.৫ শতাংশ) এবং লিম্ফোমা (১০.৩ শতাংশ) ক্যান্সারে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। আর শিশু মেয়েদের মধ্যে লিউকেমিয়াতে (৬৬.৫ শতাংশ) আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি এবং এরপরেই রয়েছে হাড়ের ক্যান্সার (১১.৬ শতাংশ)।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউ-এর উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শরফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিএসএমএমইউ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে সমন্বিতভাবে ক্যান্সার রেজিস্ট্রি কার্যক্রম বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। যাতে দেশে সঠিকভাবে ক্যান্সার রোগীদের সংখ্যা নির্ণয় করা যায়, পাশাপাশি ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ ও উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা যায়’।
বাংলাদেশের বর্তমান ক্যান্সার পরিস্থিতি উত্তরণে করণীয় সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলেন, “চিকিৎসা নয়, সেবা’এই মূলমন্ত্র ধারণ করে জাতীয় ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। প্রাথমিক প্রতিরোধের ওপর জোর দিতে সরকার, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তথা যাদের কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে, তাদের সম্পৃক্ত করতে হবে। সমাজের সকল শ্রেণিপেশার মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে যার যার জায়গা থেকে। একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আর জন্যই সুপরিকল্পিত কর্মসূচি গ্রহণ ও সফল বাস্তবায়ন।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৫২
আপনার মতামত জানানঃ