এ বছরেও ভয়াবহ দাবানলের কবলে পড়েছে পৃথিবীর ‘ফুসফুস’ খ্যাত আমাজন। এ নিয়ে টানা তৃতীয় বছরের মতো দাবানলে পুড়েছে এই বন। ২০১৯ সাল থেকেই ভয়ঙ্কর দাবানলের গ্রাসে ব্রাজিলের আমাজন অরণ্য। বছরের শেষদিকে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও ২০২০ সালে নতুন করে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে আগুন। পরিবেশের পাশাপাশি বাস্তুতন্ত্রেরও বিপুল ক্ষতি হয় অগ্নিকাণ্ডে।
ঠিক কতগুলি প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে দাবানলে, এবার সেই পরিসংখ্যানও সামনে এল। সম্প্রতি সায়েন্স ডিরেক্ট পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সেই পরিসংখ্যান। আর তাতে দেখা গিয়েছে, সব মিলিয়ে প্রায় ১৭ মিলিয়ন প্রাণী মারা গিয়েছে আগুনে। এর মধ্যে রয়েছে অন্তত ৩০০টি প্রজাতি।
ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফাউন্ডেশনের ব্রাজিল শাখার গবেষক ড. মারিয়ানা ন্যাপোটিলানো ফেরেইরা এবং তাঁর সহযোগীরা ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকেই সমীক্ষার কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন। আগুন যখনই নতুন কোনো জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে, তখনই সেখানে গিয়ে হাজির হয়েছেন তারা।
কয়েক বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে মৃত প্রাণীদের সংখ্যা গণনা করে তারপর মোট আয়তনের হিসাবে একটা আনুমানিক সংখ্যা নির্ণয় করেছেন তাঁরা। জানুয়ারি মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত আগুন যেমন ছড়িয়েছে, তেমনই দুর্গম অরণ্য অঞ্চলে ছুটে বেরিয়েছেন গবেষকরা।
অন্তত ২২ হাজারটি এলাকায় সমীক্ষা চালিয়েছেন তারা। আর তাতে দেখা গিয়েছে, সব মিলিয়ে মৃত প্রাণীর সংখ্যা অন্তত ১৭ মিলিয়ন। যদিও এই পরিসংখ্যান কতটা নির্ভরযোগ্য, তাই নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
সামান্য অঞ্চলে সমীক্ষা চালিয়ে তাকে মোট আয়তন দিয়ে গুণ করার প্রক্রিয়া মেনে নিতে রাজি নন অনেকেই। তবে মোট সংখ্যাটা যে এই পরিসংখ্যানের চেয়ে কম হবে না, সে-বিষয়ে মোটামুটি বিশেষজ্ঞরা প্রত্যেকেই একমত।
আর তাই এই পরিসংখ্যানের তাৎপর্য অস্বীকার করার জায়গা নেই। পরিসংখ্যানে আরও দেখা গিয়েছে, আগুনে সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে নানা প্রজাতির সাপেদের। আর অরণ্য অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে সাপেদের ভূমিকা অনেকটাই। আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও বাস্তুতন্ত্রের এই ক্ষতি সহজে পূরণ হওয়ার নয়। আর এই বিপর্যয়ের কারণ যে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন, তাতেও সন্দেহ নেই।
ভৌগোলিকভাবে বিশ্বের বৃহত্তম অরণ্য আমাজনের জঙ্গল। পৃথিবীর ২০% অক্সিজেন সরবরাহ করে এটি। তাই দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠা এ গভীর রেইন ফরেস্টকে পৃথিবীর ফুসফুসও বলা হয়। কয়েকদিন ধরে নিঃশব্দে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে এ ফুসফুস।
আগস্ট মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আট মাসে ৭২ হাজার বারেরও বেশি আগুন লেগেছে এ অরণ্যের নানা প্রান্তে। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আমাজনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। এতে গোটা বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনেও প্রবল প্রভাব পড়তে পারে।
ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ (ইনপে) জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলেই এ বিপুল সংখ্যায় দাবানলে আক্রান্ত হচ্ছে আমাজনের জঙ্গল।
ইনপে জানায়, আমাজনের জঙ্গলে যে দাবানল হতো না তা নয়। তবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরে ৮৩ % বেশি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৮১০
আপনার মতামত জানানঃ