চরমপন্থা ছড়ানোর কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগ এনে ফ্রান্সে আরও ২১টি মসজিদ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর আগেও বেশ কয়েকটি মসজিদ বন্ধ করে দেয় ইউরোপের দেশটি। গত বছরে দেশটিতে সরকারি আদেশে প্রায় ৩০টি মসজিদ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এবার মসজিদ প্রসঙ্গে ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডারমানিন আরও জানান, বিচ্ছিন্নতাবাদী আইনের ওপর ভিত্তি করে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন রোববার দেশটির এলসিআই টেলিভিশন চ্যানেলের মাধ্যমে ঘোষণা দেন, দেশের আরও ২১টি মসজিদ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এসব মসজিদ চরমপন্থা ছড়ানোর কাজে লিপ্ত ছিল।
ডারমানিন আরও জানান, কথিত বিচ্ছিন্নতাবাদী আইনের ওপর ভিত্তি করে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি ৯৯ মসজিদে অভিযান চালিয়েছে দেশটির পুলিশ।
এদিকে দেশটিতে ৩৬টি মসজিদ খোলা রয়েছে। কারণ এ সমস্ত মসজিদ ফ্রান্সের এই আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো কাজকর্ম করছে না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন বলেন, বন্ধ হয়ে যাওয়া মসজিদগুলোকে বাইরের তহবিল গ্রহণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। আর একটি মসজিদের ইমামকে সন্দেহজনক চরমপন্থার সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে বহিষ্কার করা হয়েছে।
পরে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে দেয়া এক পোস্টে বলেছেন, মসজিদগুলোর বিরুদ্ধে ফরাসি সরকারের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এর আগে আরও আরও বেশ কিছু মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছিল ফরাসি সরকার।
ফ্রান্সে মুসলিম বিদ্বেষ
ফ্রান্সের জাতীয় মানবাধিকার বিষয়ক কর্তৃপক্ষের এক রিপোর্টে দেখা গেছে ফ্রান্সে মুসলিম বিরোধিতা বাড়ছে। গত বছর করোনা মহামারীতে মধ্যে কঠোর লকডাউনের মধ্যেও মুসলিমবিরোধী কর্মকাণ্ড বেড়েছে।
দেশটিতে মুসলিম ও ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কুসংস্কার ও অসহিষ্ণুতা বাড়ছে বলে জানিয়েছে দ্যা ন্যশনাল কনসালটেটিভ কমিশন অন হুম্যান রাইটস (সিএনসিডিএস)।
এ বছর করে সিএনসিডিএসর প্রকাশিত মুসলিম, ইহুদি ও বিদেশীদের বিরোধিতা প্রতিরোধ শীর্ষক ৩০তম বার্ষিক প্রতিবেদনে উঠে আসে এই তথ্য।
গত বছর ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতরের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ইসলাম, ইহুদি ও বর্ণবাদের বিরোধিতা বিষয়ক কর্মকাণ্ড ও হুমকির সাথে সংশ্লিষ্ট অভিযোগ এসেছে এক হাজার ৪৬১টি। আগের বছর ২০১৯ সালে এমন অভিযোগ ছিল এক হাজার ৯৮৩টি।
ওই প্রতিবেদনে ইহুদি ও বর্ণবাদের বিরোধিতা বিষয়ক কর্মকাণ্ড ও হুমকির সংখ্যা কমলেও মুসলিম ও ইসলাম ধর্মের বিরোধীতা বেড়েছে ৫২ শতাংশ। ২০১৯ সালে ২৩৪টি মুসলিমবিরোধী কর্মকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গত ২০২০ সালের শেষ চার মাসে মুসলমানদের লক্ষ্য করে বহু প্রতিহিংসমূলক ঘটনা ঘটানো হয়।
ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে ফ্রান্সের মানুষ সংখ্যালঘুদের প্রতি সহিষ্ণু আচরণ করলেও মুসলমানদের প্রতি তাদের বিদ্বেষ বাড়ছে। অনেক ফ্রেন্স নাগরিক মনে করেন, ইসলাম ধর্ম ফ্রান্সের জন্য হুমকি স্বরূপ।
এ সময় ফ্রান্সে বেশ কয়েকটি আক্রমণকে কেন্দ্র করে এসব প্রতিহিংসমূলক ঘটনার সূত্রপাত হয়। যেমন শার্লি হেবদো পত্রিকার প্রাঙ্গনে ছুরি হামলা, স্কুলশিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটি হত্যা ও অক্টোবর মাসে নিস শহরের গির্জায় হামলা। স্যামুয়েল প্যাটি হজরত মোহাম্মদ (সা:) এর ব্যঙ্গচিত্র দেখালে তাকে হত্যা করা হয়।
এসডব্লিউ/এসএস/১১৩৫
আপনার মতামত জানানঃ