বক্সিং খেলতে এবার প্রস্তুত সৌদি আরবের নারীরা। পুরুষদের পাশাপাশি সৌদি নারীদের কাছেও সমান জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বক্সিং। নানা বাধা সত্ত্বেও নারীরা এগিয়ে আসছে এই খেলায়। এ খেলার সাথে সম্পৃক্ত হতে পেরে দারুণ উচ্ছ্বসিত সৌদি আরবের নারীরা। রক্ষণশীল সমাজ ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে বক্সিংয়ের সাথে নারীদের যুক্ত হওয়াকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন দেশটির নারীরা। খবর ডিডব্লিউ।
প্রথমবারের মতো নারীদের বক্সিং টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়েছে সৌদি আরবে। অনেক নারীই তার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে রিয়াদে একটি ‘ফাইট ক্লাবে’ প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বেশ কয়েকজন নারী বক্সার। ফাইট ক্লাব জিমটির অবস্থান রাজধানী রিয়াদে। নারীদের বক্সিং টুর্নামেন্ট আয়োজনে বেজায় খুশি ক্লাবটির মালিক বান্দার আলেসাওয়ি। তার এই জিম থেকেই সাতজন অংশ নিয়েছেন টুর্নামেন্টে।
সৌদি মেয়েরা যে আগে বক্সিং করতেন না, তা নয়। সারাহ আলশাহরানি নামের এক বক্সার জানান, তিনি চার বছর ধরে বক্সিং করেন। জিমের সুযোগ না থাকায় আগে প্রস্তুতিতে পাঞ্চিং ব্যাগের কাজ চালাতেন বালির বস্তায়।
ফাইট ক্লাবটি চালু হওয়ার পর অনেক মেয়েই বক্সিং শিখতে ও প্রশিক্ষণ নিতে যায় সেখানে। সেখানে আছে বিদেশি কোচ, রিং, সরঞ্জামসহ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে লড়াই করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব সুবিধাই।
সৌদি বক্সিং ফেডারেশনে নিবন্ধিত অর্ধশত নারী বক্সার আছেন। সারাহ আলশাহরানি বলেন, সৌদি মেয়েরা যে শক্তিমত্তায় কম যান না সেটিই প্রমাণ করে দেখাতে চান তারা।
এ বছরই প্রথমবারের মতো নারীদের জন্য জাতীয় পর্যায়ের বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজন করেছে সৌদি আরবের বক্সিং ফেডারেশন। সৌদি বক্সার ডোনা মোহাম্মদ আল-ঘামদি ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ জয় করেন। তার পুনরাবৃত্তি ঘটানোর স্বপ্ন এখন এই বক্সারদের।
শুধু বক্সিং নয়, সৌদি মেয়েরা চলতি বছর প্রথমবারের মতো জাতীয় ফুটবল টুর্নামেন্টেও অংশ নিয়েছে। রিয়াদ, জেদ্দাহ ও দাম্মাম শহরে গত মাসে ১৬টি দল এই প্রতিযোগিতায় লড়েছে। জাতীয় নারী ফুটবল দল গড়ে তুলতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে জার্মান কোচ মনিকা স্টাবকে।
সৌদি নারীর হাতে বক্সিং গ্লাভস— কিঞ্চিৎ বিস্ময়কর কিংবা অবাক হবার মতোই দৃশ্য। কেননা দেশটা যে সৌদি আরব। সম্প্রতি দেশটির প্রথা ভেঙে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে নারীরা। স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখার বিধিনিষেধ উঠে গেছে। গাড়ি চালানোর লাইসেন্সও পাচ্ছে সৌদি নারী। তারই ধারাবাহিকতায় এবার সৌদি নারীরা বক্সিং রিংয়ে।
সৌদি মেয়েরা যে শক্তিমত্তায় কম যান না সেটিই প্রমাণ করে দেখাতে চান তারা।
সৌদি আরবে গত কয়েকবছর ধরে নারী অধিকারসহ নানা বিষয়ে সংস্কারকাজ চলছে৷ ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মেদ বিন সালমানের সংস্কার কর্মসূচি ‘ভিশন ২০৩০’ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সৌদি নারীরা বিভিন্ন সুবিধা পাচ্ছেন৷ গাড়ি চালানো থেকে শুরু করে সৌদি নারীরা পুরুষ সঙ্গীর অনুমতি ছাড়াই ব্যবসা শুরু করতে পারছেন৷ কর্মক্ষেত্রে সৌদি নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোরও পরিকল্পনা করা হয়েছে৷ ২০৩০ সালের মধ্যে মোট জনশক্তির এক তৃতীয়াংশ নারী করতে চায় দেশটি৷ এ সব ছাড়াও সম্প্রতি প্রথম নারী রেস্তোরাঁ মালিক, প্রথম নারী পশু চিকিৎসক, প্রথম নারী ট্যুর গাইড পেয়েছে সৌদি আরব৷
অতীতে সৌদিতে নারীদের খেলাধুলা অনৈতিক কাজের অংশ হিসেবে দেখতো রক্ষণশীলরা। এখন সময় বদলেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সৌদির নারীরাও রাজপথে সাইকেল চালাতে পারছেন। আর জেদ্দা শহরে এই দৃশ্য এখন স্বাভাবিক।
সব প্রতিকূলতা পেছনে ফেলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সৌদির নারীরাও এগিয়ে চলছেন। বর্তমানে সৌদি আরবের নারীদের সাইকেল চালানোর ঘটনা চোখে পড়ার মতো। সৌদির কঠিন শাসন উপেক্ষা করেই এই দুই চাকার বাহন নিয়ে ছুটে চলছেন নারীরা।
২০১৭ সালের পর সৌদির পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে। যুবরাজ সালমান দেশটির সামাজিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনায় আগের চেয়ে স্বাধীনভাবে চলতে ফিরতে পারছেন নারীরা।
২০১৮ সালে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয় দেশটি। ফলে গাড়ি চালাতে সৌদি নারীদের আর কোনো পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি নিতে হবে না। এছাড়া গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পাচ্ছেন তারা।
ওজন ও উচ্চতার শর্ত পূরণ করে নারীরা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে পারবে। তবে অন্তত উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করা লাগবে তাদের।
২০২০ সালে সৌদি আইন মন্ত্রণালয় ১০০ নারীকে পাবলিক নোটারি হিসেবে নিয়োগ দেয়। চলতি বছর জানুয়ারিতে ঘোষণা দেওয়া হয়, শিগগিরই আদালতে নারী বিচারকও নিয়োগ দেওয়া হবে।
গত ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো নারী বিমানবালা নিয়োগ দেয় সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস। দেশটিতে নারী যাত্রীদের সেবার জন্য ৫০ জন বিমানবালা নিয়োগ করা হয়।
সৌদি আরবকে আরও আধুনিক, উদার এবং ব্যবসা ও পর্যটনবান্ধব করতে ২০১৬ সালে ‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণা করেছিলেন ক্রাউন প্রিন্স মোহামেদ বিন সালমান৷ এরপর বেশ কিছু আইনে পরিবর্তন করা হয়৷ ফলে সেদেশের নারীরা এখন গাড়ি চালানো, একা সিনেমা হলে যাওয়া, ঘুরতে যাওয়াসহ নানান কাজ করতে পারছেন৷
সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলোও ভিশন ২০৩০ এর অংশ বলে বিবেচনা করা যেতে পারে৷ এমনও কথা শোনা যাচ্ছে, সেখানে অ্যালকোহল পান বিষয়ে সীমিত পরিসরে হলেও অনুমোদন দেয়া হতে পারে৷
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কট্টর রক্ষণশীল দেশ হিসেবে পরিচিত সৌদি আরব দেরি হলেও নিজেদের বুঝতে পারার চেষ্টা করছে। বক্সিং, ফুটবল, রাস্তায় সাইকেল চালানো সৌদি নারীদের জন্য যুগান্তকারী এক ব্যাপার বটে। বিশ্বের অন্যান্য স্বাধীন নারীদের মতো সৌদি আরবের নারীরাও নিজেদের স্বাধীনতা ফিরে পাবেন এমন প্রত্যাশা লক্ষণীয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৪০
আপনার মতামত জানানঃ