মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোতে একাধিক বিয়ের প্রচলন আছে। সৌদি আরবে বিষয়টি যেন দেশটির সংস্কৃতিরই অংশ। বিশেষ করে সৌদি পুরুষদের মধ্যে একাধিক বিয়ের প্রবণতা দেখা যায়। তাদের জন্য বিশেষ এক কোর্সের ব্যবস্থাও করা হয়েছিলো। পরে সমালোচনার মুখে সেই কোর্স বাতিল করা হয়।
বিভিন্ন কারণে অনেকেই দ্বিতীয়বার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যু কিংবা বিবাহ বিচ্ছেদের পর আবারও বিয়ে করেন। এমনকি প্রথম স্ত্রী থাকতেও দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন কেউ কেউ।
প্রথমবারের ভুলগুলো শুধরে নিয়ে দ্বিতীয়াবার যেন সঙ্গীকে নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকতে পারেন সে জন্য পুরুষদের প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে সৌদি আরবের একটি প্রতিষ্ঠান।
এ সংক্রান্ত গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদি আরবে পুরুষদের দ্বিতীয় স্ত্রী বেছে নেওয়ার দক্ষতা শেখানোর জন্য রীতিমতো একটি প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছিল। তবে এ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হওয়ায় তা বাতিল করা হয়।
‘দ্বিতীয় স্ত্রীকে বেছে নেওয়ার দক্ষতা’ শিরোনামে ওই দুই দিনের ওই প্রশিক্ষণটি সৌদি আরবের আল-রাস গভর্নরেটে আলবীর সিভিল চ্যারিটেবল অর্গানাইজেশনের সদর দফতরে গত ১৬ ও ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। নেটিজেনরা আয়োজকদের বিরুদ্ধে বহুবিবাহ প্রথাকে উসকে দেওয়ার অভিযোগও তোলেন। পরে তোপের মুখে আয়োজকরা ওই প্রশিক্ষণ বাতিল করতে বাধ্য হয়।
সৌদি আরবে বহুবিবাহ আইনত বৈধ। সক্ষম কোনো পুরুষ যদি সমানভাবে তার সব স্ত্রীকে ভরণ-পোষণ দিতে পারেন তবে সে একের অধিক বিয়ে করার যোগ্যতা রাখেন। আর তাই দেশটিতে বহুবিবাহের ঘটনা অহরহই ঘটছে। এমনকি বিবাহিত পুরুষকে বিয়েতে রাজি আছেন সৌদি আরবের একটি বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া অধিকাংশ ছাত্রী। এক জরিপে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।
আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রিন্সেস নোরা ইউনিভার্সিটির টুইটার ব্যবহারকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক জরিপ চালানো হয়। এতে দেখা যায়, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শতকরা ৬১ ভাগ ছাত্রী বিবাহিত পুরুষকে বিয়ে করতে সম্মত হয়েছেন।
‘আপনি কি বিবাহিত পুরুষকে বিয়েতে রাজি আছেন?’— এই প্রশ্নের জবাবে শতকরা ৬১ ভাগ ‘হ্যাঁ’ ও ৩০ ভাগ ‘না’ বলেছেন। পাশাপাশি ৯ ভাগ ‘মন্তব্য নেই’ বলে জানিয়েছেন।
ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সাহিত্য বিশ্লেষক ইমাম মোহাম্মাদ বিন সৌদ মনে করেন, ক্ষেত্রবিশেষে বহুবিবাহ ‘পুরুষের অধিকার’।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সৌদি আরবে শাসনব্যবস্থা ও ধর্মীয় কারণে অনেকেই বহুবিবাহে রাজি না থাকলেও সরাসরি মুখ খুলতে পারেন না।
তবে অনলাইনে এর বিপক্ষে অনেকেই বক্তব্য দিয়ে থাকেন। বিবাহিত পুরুষকে বিয়েতে সৌদি নারীরা রাজি থাকায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
সৌদির বর্তমান পরিস্থিতি
সৌদি সমাজে শর্তহীন বা নামমাত্র বিয়ে ‘মিসইয়ার’-এর ঘটনা দ্রুত বাড়ছে। প্রচলিত বিয়ের খরচ মেটানোর সামর্থ্য না থাকা ব্যক্তিদের জন্য গোপনে এ ধরনের বিয়ে যেন ‘আশীর্বাদ’ হয়ে উঠছে।
তবে ইসলামি চিন্তাবিদেরা এ বিয়েকে ‘উচ্ছৃঙ্খলতাকেই বৈধতা দানের’ চেষ্টা বলে সমালোচনা করছেন। সেই সঙ্গে তারা বলছেন, বিধিসম্মত বিয়ের বাইরে শারীরিক সম্পর্ক ইসলামে নিষিদ্ধ।
সৌদি আরবে কয়েক দশক ধরেই অস্থায়ী বিয়ের প্রচলিত একটি ব্যবস্থা আইনি বৈধতা পেয়ে আসছে। এ ক্ষেত্রে সহাবস্থান এবং স্ত্রীর ভরণপোষণের খরচ বহন করার মতো কিছু অধিকার থেকে স্বামীকে অব্যাহতি দিয়ে থাকেন স্ত্রী।
তবে মিসইয়ার বিয়ের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে যেন কোনোরকম শর্ত বা দায়বদ্ধতাই নেই। যা আছে, তা হলো গোপনীয়তা ও লজ্জা।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এমন বিয়েতে নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঝুঁকি আছে। তারপরও কিছু নারীর কাছে এই পদ্ধতি পুরুষতান্ত্রিক প্রচলিত বিবাহব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার একটা উপায়। আবার অবিবাহিত দম্পতিরা একে নিজেদের যৌন চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে একধরনের বৈধতার আবরণ হিসেবে বিবেচনা করেন।
যদিও শর্তহীন এসব বিয়ে বেশি দিন টেকে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গড়পড়তা ১৪ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের মধ্য দিয়ে এ সম্পর্কের অবসান ঘটে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৮০৮
আপনার মতামত জানানঃ