‘আমি যে নির্দোষ সেটা প্রমাণ করার জন্য এই কোর্ট, আইনজীবী বা কাগজের কোনো টুকরোর প্রয়োজন নেই’- খুনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ২০ বছর জেল খাটা তিরাশি বছরের বৃদ্ধ মুহাম্মদ আজিজ ভরা আদালত কক্ষে দাঁড়িয়ে যখন এ কথা বললেন, গোটা আদালত তখন হাততালিতে ফেটে পড়ছে। প্রসঙ্গত, ২০ বছর পর সেই খুন তিনি করেনইনি বলে গত শুক্রবার রায় দিয়েছেন নিউ ইয়র্কের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এলেন এন বাইবেন।
১৯৬৫ সালে আপার ম্যানহাটনে আততায়ীর গুলিতে খুন হয়েছিলেন আমেরিকার নাগরিক অধিকার রক্ষাকর্মী ম্যালকম এক্স। আফ্রো আমেরিকান বংশোদ্ভূত ও মুসলিম নেতার খুনে তখন গ্রেফতার করা হয়েছিল মুহাম্মদ আজিজ, খলিল ইসলাম ও মুজাহিদ আবদুল হালিমকে। ২০ বছরেরও বেশি সময় জেল খাটার পর ১৯৮৭ সালে প্যারোলে মুক্তি পেয়েছিলেন খলিল ইসলাম। ২০০৯ সালে মারা যান তিনি। গত শুক্রবার আজিজের সঙ্গে তাঁকেও যাবতীয় অপরাধ থেকে মুক্তি দিয়েছে আদালত।
যেভাবে ন্যায়বিচার পেলেন
আজিজ কুড়ি বছর জেল খাটার পরে ১৯৮৫ সালে মুক্তি পেয়েছিলেন। কিন্তু তার নামের সঙ্গে লেগে থাকা খুনির তকমা ঘোচেনি। শুক্রবার তিনি জানিয়েছেন, তিনি খুশি যে তার পরিবারের প্রতি এত দিনে ন্যায়বিচার হল।
ছাপান্ন বছরের পুরনো ওই হত্যা মামলার রায় নিয়ে আবার হইচই শুরু হয় গত বছরের জানুয়ারি থেকে। নেটফ্লিক্সের তথ্যচিত্রমূলক একটি সিরিজ ‘হু কিল্ড ম্যালকম এক্স’ দেখে ম্যানহাটন প্রদেশের অ্যাটর্নি সাইরাস আর ভান্স জুনিয়র বুঝতে পেরেছিলেন অন্যায়ভাবে জেল খেটেছেন দুই আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ। তথ্যচিত্রটিতে দেখানো হয়, ম্যালকমের হত্যায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া আজিজ ও খলিল কোনোভাবেই এ হত্যাকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন না।
বস্তুত এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চলাকালীনও ইতিহাসবিদ ও বহু নাগরিক অধিকার রক্ষাকর্মী জানিয়েছিলেন, যথাযথ সাক্ষ্যপ্রমাণ ও নথি জোগাড় না করেই দুই কৃষ্ণাঙ্গকে অন্যায়ভাবে দোষী প্রমাণিত করার চেষ্টা করেছিল পুলিশ।
এর পরেই আজিজের আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ভান্স। এতগুলো বছর পরে অর্ধেক সাক্ষীর মৃত্যু হয়েছে। হারিয়ে গেছে অর্ধেকের বেশি নথিও। তবু হাল না ছেড়ে এ মামলার রায় পুনর্বিবেচনা করার আবেদন জানান অ্যাটর্নি। এক অশীতিপর বৃদ্ধের সাক্ষ্যের পরে জানা যায়, ম্যালকমের খুনের সময় বাড়িতে ছিলেন আজিজ।
৪৩ পাতার রায়ে বিচারপতি বাইবেনও শুক্রবার স্পষ্ট জানিয়েছেন, এত বছর ধরে সম্পূর্ণ অবিচার হয়েছে আজিজ ও খলিলের সঙ্গে। তিনি আজিজকে বলেছেন, ‘আমি দুঃখিত যে, এ অবিচার আপনার বা খলিলের জীবনের ফেলে আসা দিনগুলো ফেরত দিতে পারবে না’।
অ্যাটর্নি ভান্সও গোটা পুলিশ বাহিনী ও বিচার ব্যবস্থার তরফে ক্ষমা চেয়েছেন আজিজ ও তার পরিবারের কাছে। খলিলের পরিবারের কাছেও ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।
রায়ের পরে আদালতে দাঁড়িয়েই তিনি বলেছেন, ‘আমি সরাসরি বলতে চাই যে, আমি ক্ষমাপ্রার্থী। এ দুই ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের প্রতি যে অবিচার হয়েছে, তা ফিরিয়ে দেওয়া যাবে না। কিন্তু আদালতের রেকর্ড সংশোধন করে অন্তত হারিয়ে যাওয়া বিশ্বাসটুকু ফেরত পাওয়া যাবে বলে আমি মনে করি’।
এদিকে, তিনি কৃষ্ণাঙ্গ বলেই নির্দোষ হওয়া সত্ত্বেও তাকে এভাবে হেনস্তা হতে হয়েছিল বলে খোলাখুলিই জানিয়েছেন আজিজ। তিনি বলেছেন, ‘২০২১ সালে আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গদের সঙ্গে যা হয়, তখনও তা-ই হত। আমি আশা করব ন্যায়বিচারের প্রতি যে প্রতারণা এত বছর ধরে হয়েছে, তা এখানকার সমাজ ব্যবস্থা এত দিনে বুঝতে পেরেছে’।
মামলায় আর এক দোষী সাব্যস্ত মুজাহিদ আবদুল হালিমও ২০ বছর জেল খেটে এখন মুক্ত। থাকেন ম্যানহাটনের শহরতলিতে। তিনি অপরাধ কবুল করেছিলেন, তাই এ রায়ে তার বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেননি বিচারপতি। আজিজ ও খলিলকে নির্দোষ ঘোষণা করায় তিনি খুশি বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন হালিম।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪৪৬
আপনার মতামত জানানঃ