ইসরায়েলি সেনারা যেভাবে ফিলিস্তিনিদের আটক করতে, তাদের ছুঁড়ে দেওয়া ইট পাথরের মোকাবেলা করতে ফিলিস্তিনিদেরই মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করতো, গাড়ির সামনে ফিলিস্তিনি শিশুদের বেঁধে নিতো; সেই একই ঘৃণ্য কাজ করল কাশ্মীরের ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী। তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও ২০১৭ সালে জম্মু-কাশ্মীরে উপ-নির্বাচনের সময় বিক্ষোভকারীদের পাথর বৃষ্টি ঠেকাতে স্থানীয় এক বাসিন্দাকে মানব ঢাল হিসেবে সেনা জিপের বনেটে বেঁধে ঘোরানো হয়েছিল।
সম্প্রতি ভারতশাসিত জম্মু-কাশ্মীরে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে চারজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দু’জন ব্যবসায়ী। তাদের পরিবারের দাবি, এক জনকে ‘মানব ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করেছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী। অন্য জনকে হত্যা করা হয়েছে ‘সাজানো’ সংঘর্ষে।
বুধবার (১৭ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি ও আনন্দবাজার। মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় কাশ্মিরের শ্রীনগরের হায়দারপোরায় এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হায়দারপোরায় একটি বাণিজ্যিক ভবনে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সংঘর্ষ হয়। সেখানে চারজন নিহত হয়েছেন। নিহত চারজনের নাম আলতাফ বাট, ডা. মুদাসির গুল, আমির মাগরে এবং হায়দার।
পুলিশের বক্তব্য
বুধবার সকালে জম্মু-কাশ্মির পুলিশের আইজি বিজয় কুমার জানান, সংঘর্ষে চার জন নিহত হয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানি সন্ত্রাসী হায়দার ও তার এক স্থানীয় সঙ্গী আমির মাগরে। মাগরে কাশ্মিরের বানিহালের বাসিন্দা। তার পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে।
বিজয় কুমার আরও জানান, নিহত বাকি দু’জনের নাম আলতাফ বাট ও ডা. মুদাসির গুল। তাদের মধ্যে আলতাফ ওই বাণিজ্যিক ভবনের মালিক। তারও ওই ভবনে একটি অফিস ছিল। মুদাসির গুল দন্ত চিকিৎসক ও ব্যবসায়ী। হায়দারপোরার ওই ভবনে তার একটি কম্পিউটার সেন্টার ছিল।
বিজয় কুমারের দাবি, মুদাসির গুল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহযোগী। তিনিই হায়দর ও তার সঙ্গীকে আশ্রয় দিতে আলতাফের বাণিজ্যিক ভবনে একটি ঘর ভাড়া নিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় দিচ্ছিলেন। উত্তর ও দক্ষিণ কাশ্মির থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের যাতায়াতের ব্যবস্থাও তিনি করতেন বলে দাবি করেন বিজয়।
কাশ্মির পুলিশের আইজি বিজয়ের বক্তব্য, ‘গত রোববার শ্রীনগরের জামলতা এলাকায় গুলিতে আহত হন এক কনস্টেবল। সেই ঘটনায় হায়দার জড়িত। মুদাসির হায়দারকে সেখান থেকে হায়দারপোরায় নিয়ে আসার কাজেও জড়িত থাকতে পারেন।’
বিজয়ের দাবি, আলতাফ বাট দু’পক্ষের গুলির মধ্যে পড়ে নিহত হয়েছেন। তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের গুলি নাকি নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন, তা স্পষ্ট নয়। তার ভাষায়, ‘হায়দরপোরার ওই ভবনে বসে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছিলেন। তাদের কাছ থেকে পিস্তল, ম্যাগাজিন ছাড়াও কম্পিউটার ও মোবাইল উদ্ধার হয়েছে।’
নিহতদের পরিবারের দাবি
কিন্তু পুলিশের এই দাবি মানতে রাজি নন আলতাফ বাট ও ডা. মুদাসির গুলের পরিবারের সদস্যেরা। আলতাফের বড় মেয়ে জানান, ‘প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন- আমার বাবাকে নিয়ে সংঘর্ষের সময়ে তিন বার ওই ভবনে ঢুকেছিল নিরাপত্তা বাহিনী। দু’বার তাকে ফিরতে দেওয়া হয়। তৃতীয় বার তিনি নিহত হন।’
নিহত আলতাফের পরিবার বলছেন, তাকে ‘মানব ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করেছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী।
অন্যদিকে চিকিৎসক মুদাসির গুলের মা বলছেন, আমার ছেলে ডাক্তার। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা ছিল না। মুদাসিরের বোনের বক্তব্য, ‘বেশিরভাগ সময়েই দিল্লিতে থাকতেন মুদাসির। সোমবার জম্মু হয়ে এখানে এসেছিলেন তিনি। মুদাসিরের সম্পর্কে পুলিশ যা বলছে তা সত্য নয়।’
বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন কাশ্মিরের রাজনীতিকরাও। কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এবং পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি জানিয়েছেন, ‘নিরীহ নাগরিকদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে পরে তাদের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহযোগীর তকমা দেওয়া ভারত সরকারের নতুন কৌশল।’
অন্যদিকে ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাহ বলছেন, ‘এই সংঘর্ষ ও তাতে নিহত ব্যক্তিদের নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। অতীতে বহু বার সাজানো সংঘর্ষ হয়েছে। দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত করে এই সংঘর্ষ নিয়ে ওঠা প্রশ্নের জবাব দেওয়া প্রয়োজন।’
এসডব্লিউ/এসএস/১৪২৫
আপনার মতামত জানানঃ