হঠাৎই সীমান্ত নিরাপত্তায় বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। নেপাল, বাংলাদেশ এবং ভুটান সীমান্তে ৭টি সমন্বিত চেকপোস্ট (আইসিপি) তৈরি করতে যাচ্ছে ভারত। এগুলোর মধ্যে ৫টি-ই বানানো হবে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে। সেইসঙ্গে দুই দেশের সীমান্তে কাঁটাতারের ডাবল বেড়া দ্রুত তোলার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার।
গত শুক্রবার দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভাল্লা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য সচিব এইচ কে দ্বিভেদির সাথে ২ ঘণ্টার এক বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে সীমান্ত নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য উন্নয়নের নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এর পাশাপাশি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া তোলার বিষয়টি দ্রুত করার জন্য রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তাদের নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় স্বারাষ্ট্র সচিব।
নিউজ১৮-র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওইসব সীমান্তে চেকপয়েন্ট রয়েছে আগে থেকেই। তবে সবকিছুকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসতে চাইছে সরকার। এজন্যই এই পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনায় সমন্বিত চেকপোস্টে কাস্টমস এবং অন্যান্য বিষয়ও থাকবে।
আরও জানা যায়, ওই বৈঠকে ডাবল বেড়া দেয়ার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চোরাচালানের বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে সমন্বিত চেকপোস্টও প্রয়োজন।
এদিকে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশ, নেপাল এবং ভুটানের মতো তিনটি স্পর্শকাতর আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে। পাশাপাশি দেশের (ভারতের) উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একমাত্র ‘গেটওয়ে’ এই পশ্চিমবঙ্গ।
এই কারণে জাতীয় নিরাপত্তার নিরিখে এ রাজ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। যা বিবেচনা করেই শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভাল্লা পশ্চিমবঙ্গের শীর্ষকর্তা ও বিএসএফ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন।
প্রসঙ্গত, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ২৮৯ কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া তোলা প্রয়োজনীয় হলেও রয়েছে মাত্র ১৮২ কিলোমিটার। সীমান্তে জমি অধিগ্রহণের বাধায় বেড়া তোলার কাজটি আটকে রয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে সমস্যা দ্রুত মিটিয়ে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া তোলার জন্য রাজ্য প্রশাসন ও বিএসএফ কর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বারাষ্ট সচিব অজয় ভাল্লা। এছাড়া ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট গড়ে তোলারও কথা হয়েছে।
এর আগে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গত শুক্রবার (১২ নভেম্বর) ভোররাতে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর গুলিতে অন্তত দু’জন বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে জানা যায়। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার বুড়িরহাট সীমান্তের কাছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে এই দুজন বাংলাদেশি নিহত হন।
সীমান্তের ৯১৭ নম্বর মেইন পিলারের ৫ নম্বর সাব পিলারের কাছে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন— গোড়ল ইউনিয়নের মালগড়া এলাকার আলতাব হোসেনের ছেলে আসাদুজ্জামান ভাসানী ও ঈদ্রিস আলীর ছেলে মোসলেম উদ্দিন।
প্রসঙ্গত, সীমান্ত হত্যার সংখ্যা শূন্যতে আনা এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধের বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারত— দুই দেশই সম্মত হয়েছে কয়েক বছর আগে। এরপরও সেটা বন্ধ হয়নি। বরং বেড়েছে।
এর আগে গত ৩ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে দুই বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন।
তার দুইদিন আগে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী (বিএসএফ) ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার জগদল সীমান্তে বাংলাদেশের ভেতর থেকে এক কৃষককে ধরে নিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে। নির্যাতনের শিকার রুহুল আমিনকে (৩৭) ঠাকুরগাঁওয়ের একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।
মানবাধিকার সংস্থার মতে, ২০০০-২০১৯ সালের মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে কমপক্ষে ১,১৮৫ বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে বিএসএফ।
বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালে সীমান্তে মোট ৪৮ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করে বিএসএফ৷ এর মধ্যে ৪২ জনকে গুলি করে এবং ছয় জনকে হত্যা করা হয় নির্যাতন চালিয়ে৷ অপহরণ করা হয় ২২ বাংলাদেশিকে৷
ওই সময়ে ২৬ জন বিএসএফ-এর গুলি ও নির্যাতনে গুরুতর আহত হন৷ অপহৃতদের মধ্যে মাত্র পাঁচ জনকে ফেরত দেয়া হয়েছে৷ বাকিদের ভাগ্যে কী ঘটেছে জানা যায়নি৷
এসডব্লিউ/এসএস/১১৩০
আপনার মতামত জানানঃ