মধ্যপ্রাচ্যে দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি ইয়েমেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত সেই ইয়েমেনেই কমপক্ষে ৭৩ লাখ লোকের জরুরি আশ্রয় ও অন্যান্য সহায়তা দ্রুততার সাথে প্রয়োজন বলে জানিয়েছে জাতিসঙ্ঘ। আজ মঙ্গলবার জাতিসঙ্ঘের শরণার্থী সংস্থা এসব তথ্য জানিয়েছে।
ইয়েমেনে জাতিসঙ্ঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলেছে, অন্তত প্রায় ৭৩ লাখ ইয়েমেনির জরুরি আশ্রয় ও অন্যান্য বস্তুগত সাহায্য দরকার। যাদের মধ্যে ৭৫ শতাংশই হলেন নারী ও শিশু।
সূত্র মতে, ইয়েমেনের রাজধানী সানায় এ বিষয়ে একটি প্রদর্শনী হয়। ওই প্রদর্শনীতে জরুরি আশ্রয়ের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, ইয়েমেনে ২০১৪ সাল থেকেই অস্থিরতা বিরাজ করছে। ওই সময়টাতে ইরান সমর্থিত বিদ্রোহীরা ইয়েমেনের রজধানী সানাসহ দেশটির অধিকাংশ এলাকা দখল করে। পরে সৌদি আরব সমর্থিত সামরিক জোট ইয়েমেনের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ শুরু করলে পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়।
দু’পক্ষের সঙ্ঘাতে ইয়েমেনের ২ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ মারা যায়। বর্তমানে তিন কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে ৮০ শতাংশ মানুষের জরুরি সহায়তা দরকার। এর পাশাপাশি ইয়েমেনের এক কোটি ৩০ লাখ লোক চরম খাদ্য সঙ্কটে আছে।
সৌদি ও পশ্চিমাদের ধ্বংসাত্মক ভূমিকা
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে হুতিরা সানা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার বেশ কয়েক বছর আগেই আরব বসন্তের ঢেউ আছড়ে পড়ে ইয়েমেনে। এর ফলে ইয়েমেনের দীর্ঘদিনের কর্তৃত্বপরায়ণ নেতা আলী আবদুল্লাহ সালেহ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। ২০১১ সালে তিনি তার সহযোগী আব্দরাব্বুহ মানসুর হাদির কাছে দায়িত্ব ছেড়ে দেন। এরপর সংকটের এক পাহাড়ের সামনে এসে দাড়ান হাদি।
দেশের সাধারণ সমস্যাগুলোর পাশাপাশি জিহাদি ও দক্ষিণাঞ্চলীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন শুরু হয়। সেনাবাহিনীতে তখনও সালেহর অনুসারীর সংখ্যাই বেশি। এর সুযোগ নেয় ইয়েমেনের জাইদি শিয়া মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী ‘হুতি’। বিদ্রোহী নামেই বেশি পরিচিত।
হুতিরা সাদা প্রদেশ এবং এর আশপাশের এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়। ২০১৫ সালের শুরুর দিকে সানার নিয়ন্ত্রণ নেয় হুতি বিদ্রোহীরা। তখন সৌদি আরব সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ বেশকিছু দেশকে নিয়ে জোট গঠন করে। এরপর ২০১৫ সালের মার্চে ইয়েমেনে সামরিক অভিযান শুরু করে। এর মধ্যে হুতি বিদ্রোহীদের সাথে সালেহর সঙ্গে হুতিদের এক ধরনের সমঝোতা তৈরি হয়। যদিও দুই পক্ষ এর আগ পর্যন্ত শত্রুই ছিল। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার লোভ থেকে হুতিদের সঙ্গে হাত মেলান সালেহ।
হুতি বিদ্রোহী এবং সালেহ সমর্থিত বাহিনী ওই সময়ে আক্রমণ জোরদার করে। পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করে তারা। তাদের আক্রমণের মুখে ২০১৫ সালের মার্চে ইয়েমেন থেকে বিদেশে পালিয়ে যান প্রেসিডেন্ট হাদি।
মূলত হুতিদের এই উত্থানেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে সৌদি আরব। ধারণা করা হয় হুতিরা ইরানের কাছ থেকে সামরিক সহায়তা ও সমর্থন পেয়েছে। ইরান মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশ। নানাভাবেই ওই অঞ্চলে তাদের সক্ষমতা বাড়ছে। মূলত ইরান আতঙ্কের কারণেই আরো আটটি সুন্নি দেশকে সঙ্গে নিয়ে ইয়েমেনে বিমান হামলা শুরু করেছিল সৌদি আরব।
ওই সময় সৌদির উদ্দেশ্য হাদি সরকারকে আবার সানায় প্রতিষ্ঠিত করাই। সৌদি জোটকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্স। যদিও শুরুর দিকে সৌদির ধারণা ছিল কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হবে এই যুদ্ধ। তবে এখনও চলছে এই লড়াই।
এই যুদ্ধে সৌদি আরবের জড়িয়ে যাওয়া ইরানের কারণেই। অন্যদিকে পশ্চিমা কয়েকটি দেশ এই যুদ্ধে জড়িয়েছে তেলস্বার্থ এবং নিরাপত্তার কারণে। লোহিত সাগর ও আদেন উপসাগর দিয়ে বিশ্বের তেল বাণিজ্য অনেকটাই পরিবাহিত হয়। এই অংশটি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়লে তেল পরিবহনও হুমকির মুখে পড়বে বলে ধারণা পশ্চিমাদের।
হজ্বের টাকায় যুদ্ধ
কোনো ধরনের বিনিয়োগ ছাড়াই বছরে হাজার হাজার কোটি ডলার আয় করে সৌদি আরব। মূলত আয় করেন সৌদির রাজ পরিবার। তবে এই টাকা কোনো গরীব-অসহায় কিংবা দুস্থ মানুষের অবস্থার উন্নতির জন্য ব্যয় হয় না। ব্যয় হয় না কোনো ধর্মীয় কাজেও। এই টাকা খরচ হয় সৌদির যুদ্ধে।
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম দেশে হামলা চালাচ্ছে সৌদি আরব। পাশাপাশি দেশটি অস্ত্র ক্রয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে। আর এই কারণেই তিউনিসিয়ার প্রধান ইমাম সৌদির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেন। পাশাপাশি তিনি হজ্ব যাত্রীদের খরচ কমানোর দাবি জানান।
ওই ইমামের নাম ফাদেল আশর। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, সৌদির সরকার যে টাকা হজ্ব থেকে আয় করছে, তার সবই ব্যয় করছে অস্ত্র ক্রয়ে। শুধু তাই নয় হজ্বের মাধ্যমে টাকায় কেনা অস্ত্র মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করছে সৌদির সরকার।
তিনি সরাসরি অভিযোগ করে বলেন, হজ্বের টাকা দিয়ে কেনা অস্ত্র দ্বারা তিউনিসিয়া, ইয়েমেন ও সিরিয়ার মতো মুসলিম প্রধান দেশে সৌদি আরব হামলা চালাচ্ছে।
এসডব্লিউ/এসএস/২২২৫
আপনার মতামত জানানঃ