সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সংঘাতপ্রবণ এলাকার বাইরে সংবাদকর্মীদের নিহত হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। অনেক দেশেই দুর্নীতি, পাচার, মানবাধিকার লঙ্ঘন কিংবা পরিবেশ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো অনুসন্ধান করতে গিয়ে সাংবাদিকদের জীবন ঝুঁকিতে পড়ছে। সাংবাদিক হত্যায় দায়মুক্তির প্রবণতা খুব বেশি। ইউনেসকোর তথ্য মতে, এ ধরনের ১০টি ঘটনার প্রায় নয়টিতেই কারও সাজা হয় না।
মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের দায়মুক্তি অবসানের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে এক বিবৃতিতে, সাংবাদিক হত্যায় দায়মুক্তির প্রবণতায় উদ্বেগ জানান জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
জাতিসংঘ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মহাসচিব সদস্য রাষ্ট্রগুলো ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশের পাশাপাশি সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম কর্মীর ওপর হওয়া অপরাধ আইনের সর্বশক্তি দিয়ে তদন্ত ও বিচারের আহ্বান জানিয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইউনেসকোর তথ্যমতে, গতবছর বিশ্বজুড়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনের কারণে ৬২ জন সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।সংঘাতের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেকে জীবন হারিয়েছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয়, সংঘাতপ্রবণ এলাকার বাইরে সংবাদকর্মীদের নিহত হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। অনেক দেশেই দুর্নীতি, পাচার, মানবাধিকার লঙ্ঘন কিংবা পরিবেশসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোয় অনুসন্ধান করতে গিয়ে সাংবাদিকদের জীবন ঝুঁকিতে পড়ছে।
ইউনেসকো বলছে, সাংবাদিক হত্যার ১০টি ঘটনার প্রায় ৯টিতেই কারও সাজা হয় না। সংঘাতের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু সম্প্রতি সংঘাত ছাড়াও সংবাদকর্মীদের মৃত্যুর ঘটনা বেড়েছে।
এতে আরও বলা হয়, সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অপরাধের ব্যাপক প্রভাব সামগ্রিকভাবে সমাজের ওপর পড়ে। কারণ তারা তথ্যপ্রাপ্তির মাধ্যমে মানুষকে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সহযোগিতা করেন। কোভিড-১৯ মহামারি এবং ভুল তথ্যের ছায়া মহামারি দেখিয়ে দিয়েছে যে সঠিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য সত্যিকার অর্থেই জীবন-মৃত্যুর পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। তথ্যপ্রাপ্তি যখন হুমকিতে পড়ে, তখন তা এমন বার্তা পাঠায় যা গণতন্ত্র ও আইনের শাসনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
গতবছর বিশ্বজুড়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনের কারণে ৬২ জন সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।সংঘাতের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেকে জীবন হারিয়েছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয়, সংঘাতপ্রবণ এলাকার বাইরে সংবাদকর্মীদের নিহত হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। অনেক দেশেই দুর্নীতি, পাচার, মানবাধিকার লঙ্ঘন কিংবা পরিবেশসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোয় অনুসন্ধান করতে গিয়ে সাংবাদিকদের জীবন ঝুঁকিতে পড়ছে।
অনেক দেশেই দুর্নীতি, পাচার, মানবাধিকার লঙ্ঘন কিংবা পরিবেশ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনুসন্ধানে গিয়ে সাংবাদিকদের জীবন ঝুঁকিতে পড়ছে। এছাড়া, অপহরণ, নির্যাতন, ডিজিটাল ও অন্যান্য মাধ্যমে গুজব রটানোসহ নানা হয়রানিতে পড়তে হচ্ছে সাংবাদিকদের। নারী সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে অনলাইন সহিংসতার মাত্রা বেশি বলেও জানিয়েছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, সাংবাদিকরা আরও অগুনিত হুমকির মুখোমুখি হচ্ছেন। যেমন—অপহরণ, নির্যাতন ও গুম থেকে শুরু করে গুজব রটানো ও হয়রানি, বিশেষত ডিজিটাল মাধ্যমে, অনেক ধরনের ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। নারী সাংবাদিকরা বিশেষত অনলাইন সহিংসতার ঝুঁকিতে বেশি।
তিনি বলেন, সমাজের ওপর সামগ্রিকভাবে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অপরাধের ব্যাপক প্রভাব পড়ে। কারণ তারা তথ্যপ্রাপ্তির মাধ্যমে মানুষকে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সহযোগিতা করেন। কোভিড-১৯ মহামারি এবং ভুল তথ্যের ছায়া মহামারি দেখিয়ে দিয়েছে যে সঠিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য সত্যিকার অর্থেই জীবন-মৃত্যুর পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। তথ্যপ্রাপ্তি যখন হুমকিতে পড়ে, তখন তা এমন বার্তা পাঠায়, যা গণতন্ত্র ও আইনের শাসনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের ওপর হওয়া অপরাধের দায়মুক্তি অবসানে আন্তর্জাতিক দিবস পালিত হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউট এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সাংবাদিকদের ওপর হওয়া সহিংস অপরাধের জন্য বিশ্বব্যাপী দোষী সাব্যস্ত হওয়ার প্রবণতা অত্যন্ত কম। এ ধরনের প্রায় ১০টি মামলায় অন্তত ৯টিতেই কেউ শাস্তি পায় না। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এটি সত্য।
১৯৯২ সাল থেকে বাংলাদেশে অন্তত ২৩ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে এবং এর মধ্যে মাত্র কয়েকটি মামলার রায় হয়েছে। যেসব মামলা এখনও আটকে আছে, তাতে মনে হয় কেবল নিহতদের পরিবারই ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। এর মধ্যে কয়েকজন সাংবাদিককে এক দশকেরও বেশি আগে হত্যা করা হয়েছিল, এখনও তাদের মামলা আদালতে ওঠেনি।
নিহতদের পরিবারের বিক্ষুব্ধ সদস্যরা গণমাধ্যমকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে তদন্তকারীদের ব্যর্থতা, কখনো কখনো তদন্তই না হওয়ার কথা জানিয়েছেন। এই মামলাগুলো এত দিন ধরে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, এতো দীর্ঘ সময় ধরে বিচার ব্যবস্থার আইনি গোলকধাঁধায় আটকে আছে যে একটি মামলায় এমনকি প্রসিকিউশনের আইনজীবীরও মামলার অবস্থা সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই।
কিছু ক্ষেত্রে আদালত মামলা খারিজ করে দিয়েছেন কিংবা অভিযুক্তদের খালাস দেওয়া হয়েছে। যে কয়টি মামলায় রায় হয়েছে, সেগুলোতেও সময় লেগেছে প্রায় এক দশকেরও বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দায়মুক্তির এই সংস্কৃতি এবং ন্যায়বিচারের প্রতি এমন উদাসীনতা নির্ভয়ে দায়িত্ব পালনে সাংবাদিকদের জন্য একটি গুরুতর হুমকি।
তারা বলেন, বাংলাদেশের সাংবাদিকরা ইতোমধ্যেই ক্রমবর্ধমান পুলিশিংয়ের মধ্যে কাজ করছে। তাদের মাথার ওপর ভয়ংকর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ঝুলছে। বর্তমানে যে ভয়ের পরিবেশে সাংবাদিকরা কাজ করছে এই ধরনের পরিস্থিতি সেই ভয় আরও বাড়িয়েছে।
আরও বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের ক্ষেত্রে দায়মুক্তির সংস্কৃতি অব্যাহত থাকলে এই ধরনের হামলার ঘটনা বাড়বে এবং স্বাধীন ও সমালোচনামূলক সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শেষ পর্যন্ত এটা শুধু সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপরই নয়, গণতন্ত্রের ওপরও আক্রমণ।
বাংলাদেশে যে সাংবাদিকদের হত্যা করা হয়েছে আমরা অতি দ্রুত তাদের হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি করছি এবং দেশে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য নিরাপদ ও উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৪৪
আপনার মতামত জানানঃ