বরিশালে দুর্গামন্দিরে সন্ত্রাসীদের হামলায় প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় ২২ জনের নাম উল্লেখসহ ৮২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আসামীদের মধ্যে একজন শারীরিক প্রতিবন্ধীও আছে। আর এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা জটিল করছে পুরো পরিস্থিতিকে।
গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের ধুরিয়াইল শ্রী শ্রী কাজীরপাড় সর্বজনীন দুর্গামন্দিরে হামলায় গৌরনদী মডেল থানায় এ মামলা হয়েছে। সেই মামলার ৩ নম্বর আসামি উপজেলার ধুরিয়াইল গ্রামের রফিকুল ইসলাম ওরফে শাহীন (৫৬)। জন্মগতভাবেই তার এক পা খাটো, তিনি একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী।
সূত্র মতে, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ঘটনার সময় দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মন্দিরে হামলা ভাঙচুর করে দৌড়ে পালিয়ে যান তিনি।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, শারদীয় দুর্গা উৎসবের বিজয় দশমীর দিন রাত ৮টার দিকে ধুরিয়াইল শ্রী শ্রী কাজীরপাড় সর্বজনীন দুর্গামন্দিরে লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ৫০ থেকে ৬০ সন্ত্রাসী মন্দিরে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় পরের দিন মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুভাষ বৈদ্য বাদী হয়ে যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম ওরফে কাজল (৪০), গৌরনদী উপজেলার ধুরিয়াইল গ্রামের মৃত মাজাহারুল ইসলামের পুত্র উপজেলা বিএনপির সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম ওরফে শাহীন (খোঁড়া শাহীন), আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান জামিল (৪৬), যুবদল কর্মী সোহেল সিকদার (২৫), সবুজ ঢালী (২৮) সহ ৮২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
রফিকুল ইসলাম ওরফে শাহীন অভিযোগ করে বলেন, আমি জন্মগতভাবে একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। আমার একটি পা খাট। আমি ঠিকমতো হাটতে পারি না অথচ আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ! প্রতিহিংসাবসত হয়রানি করতে আমাকে আসামি করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের মতামত
এদিকে, প্রতিবন্ধীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরে ক্ষুব্ধ হয়েছে গ্রামের মানুষ। প্রতিবাদ জানিয়ে প্রতিবন্ধীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ পরিষদের নেতৃবৃন্দও।
স্থানীয় হারুন আর রশিদ (৬৫) বলেন, জন্মের পর থেকে দেখেছি রফিকুল ইসলাম শাহীন ঠিকমতো দুই কদম হাটতে পারে না। সে কীভাবে মন্দির ভেঙে দৌড়ে পালাল। তাঁর দৌড়ে পালানোর ঘটনা আর মরা মাইনষের ভোট দেওয়া একই কথা।
গ্রামের রুহুল আমিন গাজী (৫০) বলেন, ‘ছোট বেলা থাইক্কা দেইক্কা আইছি শাহীন কারও সঙ্গে কোন ঝগড়া বিবাদ করে নাই। ২০-২৫ বছর আগে শাহীন ঢাকা চইললা গেছে গ্রামে খুব একটা আসে না।’
বার্থী ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নং ওয়ার্ডের সদস্য স্থানীয় এইচ, এম, সরোয়ার হোসেন বলেন, একজন প্রতিবন্ধী মানুষ যার হাটা চলা করতেই কষ্ট হয় তাঁর দ্বারা মন্দিরে হামলা করা সম্ভব নয়। শাহীনের দ্বারা মানুষের ক্ষতির চিন্তা করাও ভুল।
এ বিষয়ে গৌরনদী উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সভাপতি দুলু রায় ও সাধারণ সম্পাদক মানিক মুখার্জি বলেন, একজন প্রতিবন্ধীকে মন্দিরে হামলা ভাঙচুর, লুটপাটের মামলায় জড়ানো অমানবিক। এটি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে বিতর্কিত করার শামিল। প্রতিবন্ধীকে মানবিক কারণে মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া উচিত।
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ
এ অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মামলার বাদী ও মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুভাষ বৈদ্য বলেন, হামলার সময় আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। আমি মামলার আসামিদের সম্পর্কে কিছুই জানি না বা চিনি না। বার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বার্থী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার আমাকে ধরে থানায় নিয়ে জোর করে কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে মামলা করেছে।
এ অভিযোগ অস্বীকার করে আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার বলেন, বাদী সুভাষ বৈদ্য স্বেচ্ছায় ও স্বপ্রণোদিত হয়ে থানায় উপস্থিত হয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।
এ প্রসঙ্গে গৌরনদী মডেল থানার উপপরিদর্শক মো. আব্দুল হক বলেন, বাদী মামলা দায়ের করেছে। তদন্ত চলছে, তদন্তে প্রতিবন্ধী নির্দোষ হলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৯০০
আপনার মতামত জানানঃ