বাংলাদেশে সরকারি সেবা গ্রহণকারীদের চারভাগের এক ভাগ মানুষকে ঘুষ দিয়ে কাজ করতে হয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। টিআই গত ১২ মাসে দুর্নীতি নিয়ে এক সমীক্ষা চালায়। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাওয়া হয়। মূলত জরিপে জনগণকে পুলিশ, আদালত, সরকারি হাসপাতাল, পরিচয়পত্র পাওয়ার প্রক্রিয়া এবং বিদ্যুৎ, পানির মতো পরিষেবা পাওয়ার অভিজ্ঞতার বিষয় প্রশ্ন করা হয়।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) ‘গ্লোবাল করাপশন ব্যারোমিটার- এশিয়া ২০২০’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে গত ১২ মাসে সরকারি সেবা গ্রহণকারীদের ২৪ শতাংশ মানুষকে ঘুষ দিয়ে কাজ করতে হয়েছে। বাংলাদেশের ২৪ শতাংশ মানুষ বলেছে তারা ঘুষ দিয়ে সরকারি সেবা নিতে হয়েছে। আর ৭২ শতাংশ মানুষ মনে করে, সরকারের দুর্নীতিই দেশের প্রধান সমস্যা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি ঘুষ লেনদেনে ভারতের পর দ্বিতীয় স্থানে আছে কম্বোডিয়া। এ বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে এশিয়ার ১৭টি দেশের ২০ হাজার মানুষকে নিয়ে এক সমীক্ষা চালিয়ে প্রতিবেদনটি করে টিআই। ভারতে সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতে ঘুষ দিতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন সমীক্ষায় অংশ নেওয়া দেশটির ৩৯ শতাংশ মানুষ। এশিয়ার সর্বোচ্চ ঘুষের হার এটি, যা চীনে ২৮ শতাংশ, বাংলাদেশে ২৪, নেপালে ১২ ও জাপানে ২ শতাংশ।
সমীক্ষায় উঠে আসে, ভারতের কোনো সরকারি পরিষেবা পাওয়ার জন্য ওপর মহলে যোগাযোগ করেন ৪৬ শতাংশ মানুষ। তাদের মধ্যে ৩২ শতাংশ মনে করেন, উঁচু জায়গায় যোগাযোগ না করলে তারা পরিষেবা পেতেন না। এশিয়ার দুর্নীতি ও ঘুষ নিয়ে মূলত এই প্রতিবেদন। এই ১৭টি দেশের প্রতি চারজনে তিনজন মনে করেন দুর্নীতি তাদের দেশে প্রধান সমস্যা। দেশগুলো হলো- ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান, মালদ্বীপ, ভারত, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, জাপান, নেপাল, মালয়েশিয়া, বাংলাদেশ, মঙ্গোলিয়া, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ও শ্রীলংকা। এশিয়ার এই ১৭টি দেশে ভোট কেনাবেচাও সাধারণ বিষয় বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। গত পাঁচ বছরে এসব দেশে প্রতি ৭ জনে একজনকে ভোট কেনার জন্য অর্থের প্রস্তাব দেওয়া হয়। দেশগুলোর ৩৮ শতাংশ মানুষ মনে করেন দুর্নীতি তাদের দেশ বাড়ছে এবং ২৮ শতাংশ মানুষ মনে করে দুর্নীতি অপরিবর্তিত রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ঘুষ লেনদেনের ক্ষেত্রে এসব দেশে লিঙ্গগত ভিন্নতা রয়েছে। যেমন, নারীরা পাসপোর্ট কিংবা ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ঘুষ প্রদান করে। অপরদিকে পুরুষরা স্বাস্থ্যসেবা ও ইউটিলিটি সেবায় বেশি ঘুষ দেয়।এ জন্য তারা পুলিশের কাছে ধরনা দেয়। তবে শিক্ষাগ্রহণের ক্ষেত্রে পুরুষরা নারীদের চেয়ে বেশি ঘুষের আশ্রয় গ্রহণ করে। নারীদের চেয়ে ২.৫ গুণ বেশি ঘুষ পুলিশকে দেয় পুরুষরা।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) প্রতিবেদন প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গিয়েছে। আফজাল হোসেন লেখেন, আজকাল সরকারি ও বেসরকারি সেবা পেতে ঘুষ দিতে হয়, মিথ্যা নয়। টিআইবির তথ্যমতে ২৪% গ্রহীতাকে ঘুষ দিতে হয় কিন্তু সংখ্যা আরো বেশি হবে।
আহসান হাবিব নামে এক জন লেখেন, ২৪% মানুষ ঘুষ দিতে হয়। অর্থাৎ এদের সরকারি অফিসে কোনো মামা খালু নেই। তাই ঘুষ দেওয়া থেকে শুরু করে পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হয়। বর্তমানে ঘুষ আদায় করার ধরন পাল্টে গেছে। যারা নিয়মিত ঘুষ নেয়, তারা ঘুষ আদায়ের জন্য সহকারী রাখে। আর সে গ্রহীতার কানে কানে বলে দেয় ঘুষের ব্যাপারটি। কারণ অফিসারদের এত কথা বলার সময় নেই তো। অফিসের বাইরে তাদের কত কাজ! আসলে এদের একটিই কাজ তা হলো ঘুষ নেওয়া। সেবার নামে গ্রহীতাদের সর্বস্ব লুটে নেওয়া। সমাজে এরা মুখোশ পরে থাকে। এদের মুখোশ উন্মোচন না করলে ঘুষ গ্রহণ বন্ধ হবে না।
সাহাব উদ্দিন লেখেন, দুর্নীতি নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত টিআইবির রিপোর্টের সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত। সরকারি বা বেসরকারি প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঘুষ-দুর্নীতি এখন রীতিমত প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা চাই, এই ঘুষ দুর্নীতি অচিরেই বন্ধ হোক।
ফাআ/মিই/১৪৪২
আপনার মতামত জানানঃ