ক্যারিবীয় দেশ হাইতিতে যুক্তরাষ্ট্রের খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক ও তাদের পরিবারের সদস্যসহ ১৭ জন অপহৃত হয়েছেন। অপহৃতদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে। দেশটির রাজধানী পোর্ট-অব-প্রিন্স থেকে স্থানীয় সময় শনিবার (১৬ অক্টোবর) তাদেরকে অপহরণ করে সন্ত্রাসীরা।
হাইতির নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে শনিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস। মার্কিন এই সংবাদমাধ্যম ও বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ক্যারিবীয় অঞ্চলের সংকটপীড়িত এই দেশটির একটি এতিমখানা ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় এসব ধর্মপ্রচারক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অপহরণ করা হয়। এতিমখানা থেকে বাসে করে বিমানবন্দরে যাওয়ার সময় এই ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য মতে, অপহরণের সঠিক কারণ সম্পর্কে এখনো জানা যায়নি তবে মিশনারিদের বিমানবন্দরের দিকে যেতে দেখা গিয়েছে। গেলো কয়েক দশকধরে রাজনৈতিক টানাপোড়েন চলছে হাইতিজুড়ে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি দেশটিকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। চলতি বছরের জুলাই মাসে, দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মোইসিকে তার বাড়িতে হত্যার পর আরো অশান্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় হাইতি জুড়ে। এই হত্যার কারণ এখনো রহস্যে ঘেরা।
এদিকে ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র জেনিফার ভিয়াও জানিয়েছেন, অপহরণের এই ঘটনা পর্যবেক্ষণ ও খতিয়ে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে কর্মঘণ্টার বাইরে এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি হাইতিতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস। তবে হাইতির পুলিশের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, অপহরণের বিষয়ে তারা খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।
উল্লেখ্য, ১৮০৪ সালে লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের প্রথম স্বাধীন দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয় হাইতি। দেশটি প্রথমে স্পেনীয় ও পরে ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল। ফরাসি ঔপনিবেশিকদের উৎখাত করে বিশ্বে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নেতৃত্বাধীন সরকার গঠিত হয় দেশটিতে। স্বাধীন হলেও বিগত দুই শতাব্দী ধরে দেশটি একের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা, সহিংসতা, আগ্রাসন আর দমনপীড়নের মধ্য দিয়ে গেছে। এর মধ্যে পরিবারতান্ত্রিক দুভেলিয়ারদের স্বৈরতান্ত্রিক কর্তৃত্বাবাদী শাসনের শিকারও হয়েছে দেশটির মানুষ।
প্রসঙ্গত, হাইতির জনসংখ্যা এক কোটি দশ লাখ, এটিকে পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ বলে গণ্য করা হয়। প্রেসিডেন্ট হত্যার জেরে হাইতির রাজনৈতিক সংকট চরমে, তার মধ্যেই দেশব্যাপী শক্তিশালী ভূমিকম্প লন্ডভন্ড করে দিয়ে গেছে সব কিছু, এসেছে ঝড়ও। ফলে বেঁচে থাকার তাগিদে বাধ্য হয়েই দেশটির চরম দরিদ্র মানুষেরা একটু নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পাড়ি জমাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। তবে তাদের গ্রহণ করতে নারাজ বাইডেন প্রশাসন। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে আশ্রয়প্রার্থী হাইতিয়ানদের ধরে-বেঁধে স্বদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া।
জানা যায়, হাইতিয়ান অভিবাসনপ্রত্যাশীরা দলবেঁধে মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে ঢোকার চেষ্টা করছেন। এ পর্যন্ত ১৩ হাজারের মতো আশ্রয়প্রার্থী সীমান্তের যুক্তরাষ্ট্র অংশে পৌঁছাতে পেরেছেন। এখনো হাজার হাজার হাইতিয়ান রয়ে গেছেন সীমান্তসংলগ্ন মেক্সিকান শহর টাপাচুলায়। অপেক্ষা করছেন, কবে তাদের আশ্রয় দেবে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু সেই আশায় গুড়েবালি। যারা সীমান্ত পার হয়ে গিয়েছিলেন, তাদের জোরপূর্বক স্বদেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে, নাহয় ঠাঁই হচ্ছে বন্দিশিবিরে।
এর মধ্যে মেক্সিকো সীমান্তের একটি নদী পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় হাইতির অবিবাসন প্রত্যাশীদের ঘোড়ার লাগাম দিয়ে চাবুকের মতো মারার চেষ্টা করে দেশটির সীমান্তরক্ষা বাহিনী। এমন কিছু ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে এ নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
ভাইরাল হওয়া ছবি ও ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তের রিও গ্র্যান্ডে নদী পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন হাইতির কিছু অভিবাসন প্রত্যাশী। এ সময় তাদের ভয় দেখাতে চাবুকের মতো করে ঘোড়ার লাগাম ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তরক্ষা বাহিনী।
জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের ডেল রিও শহরের এক অস্থায়ী শিবিরে প্রায় ১২ হাজার অভিবাসন প্রত্যাশী থাকেন। তাদের বেশিরভাগই হাইতির বাসিন্দা। শিবিরের কাছাকাছি খাবার ও পানির সঙ্কট থাকায় অভিবাসন প্রত্যাশী অনেকে নদী পাড়ি দিয়ে মেক্সিকোর সীমান্ত শহর সিওডাট আকুনিয়ায় যাওয়া-আসা করেন।
এসডব্লিউ/এসএস/১১৪০
আপনার মতামত জানানঃ