
‘১ কোটি ২০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে সিলেটের ছাত্রলীগ নিহত’— প্ল্যাকার্ড হাতে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেটের চৌহাট্টা মোড়ে প্রতীকী অবস্থান গ্রহণ করে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের একাংশ। সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের নতুন কমিটি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার এই বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি চলবে বলে জানা গেছে। ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে বিতর্ক অভিযোগ নতুন নয়। আওয়ামী লীগের ঘরের শত্রু এই বিভীষণ, দলটির ডুবতে থাকা জাহাজে আরও অজস্র ছিদ্র করছে প্রতিনিয়ত।
অবস্থান কর্মসূচি শুরুর আগে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড নিয়ে নগরীর সিটি পয়েন্ট, জিন্দাবাজার, তালতলা এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন একাংশের নেতা–কর্মীরা। গত মঙ্গলবার প্রায় চার বছর পর সিলেটে জেলা ও তিন বছর পর মহানগর ছাত্রলীগের নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে চারজনের নাম উল্লেখ করে কেন্দ্র থেকে আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য পদে সিলেট থেকে ছয়জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এর মধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদে স্থান পাওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠায় মঙ্গলবার বিকেলেই বিক্ষোভ শুরু করে ছাত্রলীগের একাংশ। এরপর গতকাল বুধবার বিকেলে ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ অংশটি সংবাদ সম্মেলন করে ‘টাকার বিনিময়ে’ নতুন কমিটি গঠনের অভিযোগ তুলে লাগাতার প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করে।
চৌহাট্টা মোড়ে অবস্থানকালে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ অভিযোগ করে বলেন, টাকার বিনিময়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে, এ বিষয়ে অনেক প্রমাণ প্রকাশ পাচ্ছে। তাঁরা শান্তিপূর্ণ ও ধারাবাহিকভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করার মধ্য দিয়ে এসব অভিযোগের প্রমাণ তুলে ধরবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘একটানা কয়েক বছর অপেক্ষা করে আমাদের প্রত্যাশা ছিল সিলেটে এমন এক নেতৃত্ব আসবে, সারা বাংলাদেশ তা অনুসরণ করবে। এই প্রত্যাশা টাকার লোভে মারা গেছে। টাকা দিয়ে যদি পদ কেনাবেচা হয়, তাহলে এই কমিটি চাঁদাবাজি ছাড়া তো কিছুই করবে না।’
স্থানীয় ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে জেলা ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটিতে শাহরিয়ার আলমকে সভাপতি ও এম রায়হান চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কমিটি গঠনের পর কমিটির পদপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে পদবঞ্চিত একটি অংশ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। এরপর একাধিকবার কমিটি স্থগিত করা হয়। পরে টিলাগড়ে ছাত্রলীগ কর্মী খুন হওয়াকে কেন্দ্র করে ২০১৭ সালের ১৮ অক্টোবর জেলা কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।
এদিকে ২০১৫ সালের ২০ জুলাই কেন্দ্র থেকে সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। আবদুল বাছিতকে সভাপতি ও আবদুল আলীমকে সাধারণ সম্পাদক করে ছয় মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে বলা হয়েছিল। তবে ২০১৮ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ছাত্রলীগের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ওই বছরের ২১ অক্টোবর কেন্দ্র থেকে মহানগর কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছিল।
গত মঙ্গলবার কেন্দ্র থেকে ঘোষিত জেলা ছাত্রলীগের নতুন সভাপতি হয়েছেন মো. নাজমুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছে রাহেল সিরাজ। মহানগরের সভাপতি হিসেবে কিশওয়ার ইবনে জাহান ও মো. নাঈম আহমদকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে সিলেট থেকে হোসাইন মুহাম্মদ সাগর, সঞ্জয় পাশী, জাওয়াদ ইবনে জাহিদ খান, বিপ্লব কান্তি দাস, মুহিবুর রহমান ও কনক পাল; এই ছয়জনকে কেন্দ্রীয় সদস্য পদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এর আগে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি বাতিলের দাবিতে লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা দেন বিক্ষোব্দ নেতাকর্মীরা। গত বুধবার (১৩ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এমন ঘোষণা দেন তারা।
কমিটি ঘোষার পরই পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবার বিকেলেই কমিটি বাতিলের দাবিতে নগরে বিক্ষোভ করে ছাত্রলীগের একটি অংশ। বিক্ষোভকারীরা অর্থের বিনিময়ে কমিটি প্রদানের অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে।
নিজেদের অবস্থান ব্যাখা করতে বুধবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করেন বিক্ষোভকারী নেতাকর্মীরা। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা ছাত্রলীগের বিগত কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উভয়ে ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে অছাত্র, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে বিদেশে ব্যাপক আলােচিত সিলেট এমসি কলেজের হােস্টেলে ধর্ষণ মামলার আসামিদের গডফাদার, বিভিন্ন চেক অবমূল্যায়ন (ডিজঅনার) মামালার আসামি, বিশেষ করে ফ্রিডম পার্টির নেতার নাতিকে নিয়ে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি ঘােষণা করা হয়েছে। এতে আমরা সিলেটের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা লজ্জিত, চরম হতাশ এবং বিভ্রত। আমরা ঘােষিত এই কমিটি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।
লিখিত বক্তব্যে সামাদ আরও বলেন, আমাদের অভিভাবক সংগঠন সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মানিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সাথে কোনো প্রকার যােগাযােগ বা অবহিত না করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ টাকার বিনিময়ে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের যে কমিটি ঘােষণা করেছে সেটি সিলেট ছাত্রলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছে। আমরা কোনোভাবেই অর্থের বিনিময়ে অছাত্র, অপরাধিদের নিয়ে ঘােষিত ছাত্রলীগের জেলা ও মহানগর কমিটি মেনে নিবাে না।
তিনি বলেন, আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে চরম অনিয়মের মাধ্যমে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের ঘােষিত কমিটি বাতিল করে প্রকৃত ত্যাগী ও গ্রহণযােগ্য ছাত্রলীগ কর্মীদের নিয়ে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি নতুন করে গঠনে আমরা আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এসডব্লিউ/এসএস/২১০৫
আপনার মতামত জানানঃ