হত্যাকাণ্ডের এক মাস পেরিয়ে গেল। এখনো রাজধানীর সবুজবাগে গৃহবধূ জান্নাতুল ফেরদৌসী হত্যার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। স্বজনদের অভিযোগ, জান্নাতুলের স্বামী ও ভাশুরের স্ত্রী ভাড়াটে খুনি দিয়ে এই হত্যাকাণ্ডে ঘটিয়েছেন। কিন্তু পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করছে না।
তবে পুলিশ বলেছে, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা রক্তমাখা ছুরিসহ বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক মনির হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মনির চুরি করতে গিয়ে খুন করার কথা স্বীকার করলেও ওই বাসা থেকে চুরি হয়নি কিছুই। খুনের ঘটনায় জান্নাতুলের স্বামী ও তাঁর ভাবির সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাঁদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।
সবুজবাগের দক্ষিণগাঁওয়ের ভাড়া বাসায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর জান্নাতুলের গলা কাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই ভবনের ছাদ থেকে ওই দিনই রক্তমাখা ছুরিসহ মনির হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পারিবারিক সূত্র জানায়, জান্নাতুল একটি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ থেকে ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জন (বিডিএস) কোর্স সম্পন্ন করেছিলেন। সাত বছর আগে জান্নাতুল একটি রেস্তোরাঁর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানকে বিয়ে করেন। এই দম্পতির জারীফ নামের দুই বছরের একটি ছেলে আছে। তাঁরা দুই মাস আগে দক্ষিণগাঁওয়ের বাসায় ওঠেন। ওই ভবনটি মোস্তাফিজুরের স্বজনদের।
জান্নাতুলের বাবা রুস্তম আলী প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন, জান্নাতুলকে তার জা দেখতে পারতেন না। জান্নাতুলের স্বামীও তাঁর ভাবির কথায় চলতেন। এ নিয়ে জান্নাতুল ও মোস্তাফিজুরের মধ্যে কথাকাটাকাটিও হয়েছে। রুস্তম আলী দাবি করেন, মনিরকে গ্রেপ্তার করে সবুজবাগে থানায় নেওয়ার পর তিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বলেছিলেন, জান্নাতুলকে খুন করতে তাঁর জা তাঁকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। এরপরও পুলিশ জান্নাতুলের ভাশুরের স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করছে না।
রুস্তম আলীর দাবি, ঘটনার পরদিন জান্নাতুলের লাশ দাফনের জন্য চাঁদপুরে তাঁদের বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছানোর পরই সবুজবাগ থানা-পুলিশ তাঁকে ঢাকায় ফিরতে বাধ্য করে। এরপর পুলিশের করা মামলায় তাঁর স্বাক্ষর নেওয়া হয়। মামলার তথ্যও পুলিশ তাঁকে পড়েও শোনাননি। পুলিশ তাঁকে কিছু বলার সুযোগও দেয়নি। এরপর জান্নাতুলের দাফন শেষে ঢাকায় ফিরে তিনি জানতে পারেন, পুলিশ তাদের মনগড়া মামলা সাজিয়েছে। এতে পুলিশ উল্লেখ করেছে, মনির হোসেন চুরি করতে গিয়ে জান্নাতুলকে খুন করেছেন। তবে পুলিশ চুরির কথা বললেও বাসা থেকে কিছু খোয়া যায়নি। মোস্তাফিজুর ও তাঁর ভাবিকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন রুস্তম আলী।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জান্নাতুলের স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ও তাঁর ভাবি কোনোভাবেই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন। বিয়ের আগে তাঁর সঙ্গে জান্নাতুলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তিনি আরও বলেন, মনির প্রথমে হত্যাকাণ্ডে তাঁর ভাবির জড়িত থাকার স্বীকার করলেও পরক্ষণেই পুলিশ কর্মকর্তাদের সামনেই তা অস্বীকার করেন।
মোস্তাফিজুর অভিযোগ করেন, তাঁর দুই বছরের শিশু সন্তানকে আটকে রেখেছেন তাঁর শ্বশুর। তাঁরা একবারের জন্যও তাঁকে সন্তানের মুখ দেখতে দিচ্ছেন না। মনির জুয়াড়ি। টাকা চুরি করতে তাঁর বাসায় ঢুকেছিল। কিন্তু জান্নাতুল চিৎকার দেওয়ায় তিনি কিছুই নিতে পারেননি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সবুজবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাসির উদ্দিন অবশ্য বলছেন মনির মাদকাসক্ত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মাদকের জন্য টাকা চুরি করতেই তিনি বাসায় ঢুকেছিলেন। এরপর তিনি জান্নাতুলকে খুন করেন। মামলার বাদীর অভিযোগের বিষয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, খুনি ধরা পড়ায় পুলিশ তড়িঘড়ি করে মামলা গ্রহণ করে। মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। মোস্তাফিজুর ও তাঁর ভাবি পুলিশের নজরদারিতে আছেন। হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাঁদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।
পুলিশের মনগড়া মামলা সাজানোর বিষয়ে রুস্তম আলী যে অভিযোগ করেছেন, সে বিষয়ে জানতে চাইলে অবশ্য নাসির উদ্দিন কোনো জবাব দেননি।
গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন
জান্নাতুল হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে তাঁর দুই বছরের সন্তানকে নিয়ে শনিবার সকাল ১০টা থেকে দুই ঘণ্টা মানববন্ধন করেন তাঁর পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনেরা।
জান্নাতুলের বাবা রুস্তম আলী প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আসামির জবানিতে জান্নাতুলকে হত্যায় তাঁর স্বামী ও জা’র নাম এলেও পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করছে না।
আপনার মতামত জানানঃ