মোজাম্বিকের বিদ্রোহীরা শত শত শিশুকে তুলে নিয়ে গিয়ে শিশু সৈনিক বানানোর প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে। তাদের হাতে জোরপূর্বক বন্দুক ও ছুরিও ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এদিকে মোজাম্বিকের বিদ্রোহে গত ৪ বছরে ৩,৩০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে— যাদের অর্ধেকই বেসামরিক মানুষ। অন্যদিকে নিজেদের বাড়ি থেকে কমপক্ষে ৮০০,০০০ জন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গতকাল বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) জানিয়েছে, মোজাম্বিকের উত্তরাঞ্চলে ইসলামিক স্টেট-সংশ্লিষ্ট জঙ্গিরা শত শত ছেলেকে অপহরণ করেছে এবং তাদের শিশু সৈনিক হিসেবে নিজেদের বিভিন্ন পদে যোগ দিতে বাধ্য করেছে।
স্থানীয়ভাবে আল-শাবাব নামে পরিচিত একটি জিহাদি গোষ্ঠী ২০১৭ সাল থেকে মোজাম্বিকের গ্যাস সমৃদ্ধ কাবো ডেলগাদো অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ চালিয়ে আসছে, খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গ্রাম ও শহরে অভিযান চালাচ্ছে।
স্থানীয় সূত্র হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে (এইচআরডব্লিউ) জানায়, সশস্ত্র জঙ্গিরা শত শত কিশোরকে অপহরণ করে (যাদের মধ্যে অনেকের বয়স মাত্র ১২ বছর) প্রশিক্ষণ শিবিরে নিয়ে যাচ্ছে।
২০২০ সালে প্রাদেশিক রাজধানী পেম্বা থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার উত্তরে এমবাউ শহরের একটি ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যাওয়া এক বালক বলে, “আমাদের আরও অনেক পুরুষ ও ছেলেদের সাথে যোগদান করানো হয়েছিল। আমাদের যুদ্ধ করার জন্য বন্দুক এবং ছুরি ব্যবহার করার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল।”
ওই বালক পরে টহলরত অবস্থায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও ভয়ে দিন কাটাচ্ছে। সে বলেছে, “তারা আমাদের বলেছিল যে আমাদের মাটির জন্য এবং আমাদের ধর্মের নিরাপত্তার জন্য (মানুষ) হত্যা করতে হবে এবং লড়াই করতে হবে।”
এদিকে এর আগে মোজাম্বিকের উত্তরাঞ্চলের একটি গ্রামে ইসলামপন্থী জঙ্গিরা অন্তত ৫২ জন বাসিন্দাকে হত্যা করে। কাবো ডেলগাডো প্রদেশের গ্রামবাসীদের ‘নির্বিচারে হত্যা’ করা হয়েছে বলে জানায় দেশটির পুলিশ। গ্রামবাসীরা জঙ্গি গোষ্ঠীতে যোগ দিতে অস্বীকার করার পর তাদের অনেককে শিরচ্ছেদ করা হয়।
কাবো ডেলগাডো প্রদেশে তিন বছর ধরে চলা সহিংস কর্মকাণ্ডে কয়েকশো’ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং অসংখ্য মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলে খবরে বলা হয়েছে।
এদিকে, মধ্যপ্রাচ্যে অপমানজনক পরাজয়ের পরে মোজাম্বিকে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে ইসলামিক স্টেট। আই এস মোজাম্বিকের সরকারের দুর্নীতি ও অদক্ষতাকে কাজে লাগাতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক পরামর্শদাতা এবং দ্য হিলের সেন্টার অফ পলিটিকাল অ্যান্ড ফরেন অ্যাফেয়ার্সের (সিপিএফএ) এর পরিচালক কেলি আলখৌলি এক রিপোর্টে মতামত প্রকাশ করে বলেন, এই গোষ্ঠীটি এখন হুমকি সরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে মোজাম্বিক সরকারের দুর্নীতি এবং অদক্ষতা ইসলামিক স্টেটের পক্ষে নিজেকে পুনঃস্থাপনের সবচেয়ে বড় সুযোগ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১২৩০
আপনার মতামত জানানঃ