আবারও শিরোনামে পেগাসাস। অভিযোগ ফ্রান্সের পাঁচ শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রীর মোবাইল ফোনে পাওয়া গিয়েছে পেগাসাস স্পাইওয়্যারের অস্তিত্ব। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু সূত্র ও একটি গোপন গোয়েন্দা নথির বরাতে অনুসন্ধানী ওয়েবসাইট মিডিয়াপার্ট এসব তথ্য জানিয়েছে।
মিডিয়াপার্ট বলেছে, পেগাসাস স্পাইওয়্যারের উপস্থিতি পাওয়া গেছে ফ্রান্সের শিক্ষা, আঞ্চলিক সংহতি, কৃষি, আবাসন ও বহির্বিশ্ববিষয়ক মন্ত্রীদের মোবাইল ফোনে। ২০১৯ সালে তাদের ফোনে স্পাইওয়্যারটি দিয়ে নজরদারি শুরু করা হয়। তবে সেই সময় তারা সবাই বর্তমান পদে ছিলেন না।
যাদের ফোনে আড়ি পাতা হয়েছিল তারা হলেন— শিক্ষামন্ত্রী জিন মাইকেল ব্ল্যাকুয়ের, সীমান্ত বিষয়ক মন্ত্রী (টেরিটোরিয়াল কোহেশন মিনিস্টার) জ্যাকলিন গোরল্ট, কৃষি মন্ত্রী জুলিয়েন দেনরম্য়ান্ডি, আবাসন মন্ত্রী ইমানুয়েল ওয়ারগন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেবেস্তেইন লেকরনু।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফরাসি প্রশাসনের এক পদস্থকর্তা এই পাঁচ মন্ত্রীর ফোনে আড়ি পাতার খবরের সত্যতা স্বীকার করেছেন।
গত জুলাইয়ে এ মন্ত্রীদের সেলফোনের ফরেনসিক বিশ্লেষণ করা হয়। সেখানেই স্পাইওয়্যারের সন্দেহজনক উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়। বিষয়টি এখন একটি দীর্ঘ ও জটিল তদন্ত প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে বলে জানান ইমানুয়েলের কূটনৈতিক উপদেষ্টা এলি প্যালেস। এ ঘটনার পর একজন মন্ত্রী তার টেলিফোন নাম্বরাও বদলে ফেলেছেন বলে জানা গেছে। তবে তদন্তের অন্য অগ্রগতি সম্পর্কে কিছুই জানাতে রাজি হয়নি প্রসিকিউটরের অফিস।
প্রায় দুই মাস আগে পেগাসাস কেলেঙ্কারির কথা জানা যায়। সে সময় ওয়াশিংটন পোস্ট, গার্ডিয়ানসহ বেশকিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর আসে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোসহ শীর্ষ ব্যক্তিদের ফোনে এ স্পাইওয়্যারটি রয়েছে এবং সেখান থেকে তথ্য পাচার হচ্ছে। পেগাসাস ইস্যুতে ভারতের জাতীয় রাজনীতিও উতপ্ত হয়ে উঠেছিল। অভিযোগ, মন্ত্রী-শিল্পপতি, সাংবাদিক, সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের ফোনে আড়িপাতা হয়েছিল।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে এক বিবৃতিতে এনএসও বলেছে, ‘ফরাসি কর্মকর্তাদের নিয়ে আমরা আমাদের ইতিপূর্বে দেওয়া বক্তব্যে অটল রয়েছি। তারা পেগাসাসের লক্ষ্যবস্তুতে নেই ও কখনো ছিলেন না। আমরা অজানা সূত্রের বরাতে প্রকাশিত খবর নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
এনএসও গ্রুপের দাবি, গুরুতর অপরাধ ও সন্ত্রাস প্রতিরোধের বাইরে পেগাসাস সফটওয়্যারকে কাজে লাগানোকে তারা এর অপব্যবহার হিসেবে বিবেচনা করে। চুক্তিতেও এর উল্লেখ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি আরও দাবি করেছে, কোনো ধরনের অপব্যবহার ধরতে পারলে তারা ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। এই প্রযুক্তির মূল লক্ষ্য মানবাধিকার রক্ষা। যার মধ্যে রয়েছে মানুষের জীবনযাপনের অধিকার, নিরাপত্তা, ব্যক্তির চলাচলের স্বাধীনতা।
এনএসও গ্রুপের একজন মুখপাত্র বলেন, বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ এই সফটওয়্যারের কল্যাণে রাতে ভালোমতো ঘুমাচ্ছে ও রাস্তায় নিরাপদে চলাচল করছে।
এ জন্য পেগাসাস ও এ ধরনের প্রযুক্তিকে ধন্যবাদ। কারণ, সেগুলো বিশ্বজুড়ে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে অপরাধ, সন্ত্রাসবাদ ও শিশু যৌন নিপীড়ক চক্রকে প্রতিরোধ ও তাদের বিষয়ে অনুসন্ধানে সাহায্য করছে। এসব চক্র এনক্রিপটেড অ্যাপগুলোর ছায়ায় থেকে গোপনে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।
২০১৯ সাল থেকে ‘দ্য পেগাসাস প্রজেক্ট’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে ইসরায়েলি স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে ফোনে নজরদারির বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের একটি অনুসন্ধানী টিম। ১৭টি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের অনুসন্ধানের একটি রিপোর্ট দুই মাস আগে প্রকাশিত হয়। এরপরই পুরো বিশ্বে তোলপাড় শুরু হয়।
ফরেনসিক বিশ্লেষণে উঠে আসে যে, স্মার্টফোনের তথ্য হ্যাক করে পেগাসাস স্পাইওয়্যার। ফলে নজরদারির শিকার হন মানবাধিকারকর্মী, রাজনীতিক, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এর মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে ৫০ হাজার ফোন হ্যাক করে নেওয়া হয়। আড়িপাতা হয় ১৮০ জন সাংবাদিকের ফোনেও।
পেগাসাস স্পাইওয়্যারের ফাঁদে পড়েন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁও। পরে ফোন বদলে ফেলেন এই ফরাসি প্রেসিডেন্ট।
যদিও বরাবরের মতোই পেগাসাস স্পাইওয়্যারের বিক্রেতা ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান এনএসও দাবি করে, এই হ্যাকিংয়ের সঙ্গে তারা যুক্ত নয়। তারা শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও বাছাইকৃত সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে এই প্রযুক্তি বিক্রি করে আসছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০০৯
আপনার মতামত জানানঃ