৭৭ হাজার বিঘা জমি দখল করে বিশাল একটি শিবমন্দির কমপ্লেক্স বানানোর লক্ষ্যে সেখানকার মুসলিমদের উপর দফায় দফায় উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে আসাম সরকার। এই অভিযানে পুলিশের বর্বরতায় নিহত এক মুসলিম আদিবাসীর উপর ফটো সাংবাদিকের নৃশংসতায় শিউরে উঠেছে গোটা বিশ্ব।
নিজের ভূমি রক্ষার্থে মানুষটা দৌড়ে এসেছিলেন প্রতিবাদের টগবগে রক্ত শরীরে নিয়ে। নিজের ভিটেমাটি বাঁচাতে রাষ্ট্রের সামনে সামান্য একটি লাঠি হাতে ছুটে এসেছিলেন। এরপর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পুলিশ সদস্যদের উপর্যপুরি লাঠির আঘাতে মাটিতে পড়ে যান তিনি।
কিন্তু সেখানেই শেষ হয়নি বিভৎসতা। নিথর দেহ যখন পড়ে আছে মাটিতে, তখন সেই দেহের ওপর যেন রাজ্যের জমানো ক্ষোভ উগড়ে দিলেন এক ফটো সাংবাদিক। দূর থেকে দৌড়ে এসে শূন্যে লাফিয়ে উঠে মাটিতে নিথর দেহের বুকে আছড়ে পড়ছেন একের পর এক। তাতেও যেন তার ক্ষোভ মিটছে না। একটু পর আবার দূর থেকে দৌড়ে এসে সজোরে মারছেন ঘুষি। তাকে আটকাতে পারছেন না পুলিশ সদস্যরাও।
What protocol orders firing to the chest of a lone man coming running with a stick @DGPAssamPolice @assampolice ? Who is the man in civil clothes with a camera who repeatedly jumps with bloodthirsty hate on the body of the fallen (probably dead) man? pic.twitter.com/gqt9pMbXDq
— Kavita Krishnan (@kavita_krishnan) September 23, 2021
গত বৃহস্পতিবার মর্মান্তিক এই দৃশ্য দেখা গেছে আসামের সিপাঝার এলাকায়। এই এলাকার কয়েক হাজার মুসলিম পরিবার যুগের পর যুগ ধরে সেখানে বসবাস করে এলেও রাজ্য সরকার তাদের উচ্ছেদ করে সেখানে বিশাল শিব মন্দির নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম স্ক্রল ইন লিখেছে, বৃহস্পতিবার আসামের সিপাঝারের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। এতে দেখা যায়, মাটিতে নিথর পড়ে থাকা এক ব্যক্তির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছেন একজন আলোকচিত্রী। ওই ব্যক্তির শরীর থেকে মাটিতে গড়িয়ে পড়ছে রক্ত।
স্ক্রল লিখেছে, আসাম এবং এর বাইরে যারা ওই ভিডিওটি দেখেছেন, তাদের বেশিরভাগই বানিয়ার হিংস্রতায় হতভম্ব হয়ে গেছেন। কোন ধরনের ক্ষোভ থাকলে এমন একজন মৃত মানুষ বা মৃত্যুর প্রহর গোনা একজন মানুষের ওপর অযৌক্তিক সহিংসতা চালাতে পারে? এটা কীভাবে হতে পারে?
ভারতীয় এই সংবাদমাধ্যম বলছে, বানিয়া বিচ্ছিন্ন কোনও অপরাধ করেননি বা বিচ্ছিন্ন কোনও বিদ্বেষ উগড়ে দেননি। আসামের কয়েক দশকের নোংরা রাজনীতি এ ধরনের উগ্রতার দিকে ঠেলে দিয়েছে তাকে। আদিবাসীদের স্বার্থ রক্ষার নামে তথাকথিত বিদেশিদের তাড়াতে সরকারের নেওয়া উদ্যোগ এ জন্য দায়ী। এতে কট্টর হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন সরকারের সমর্থন আছে।
আলোকচিত্রী যখন নিথর দেহের ওপর ঝাপিয়ে পড়ছিলেন, তখন তার আশপাশে ছিলেন পুলিশ সদস্যরাও। আসামের ডারাং জেলা প্রশাসনে কর্মরত আলোকচিত্রী বিজয় বানিয়াকে সিপাঝারে উচ্ছেদ অভিযানের ছবি তোলার জন্য আনা হয়েছিল।
আর মাটিতে যিনি পড়ে ছিলেন তার নাম মইনুল হক (৩৩)। ভিডিওর প্রথম কয়েক সেকেন্ডে দেখা যায়, মইনুল হক উচ্ছেদ অভিযান চালাতে আসা পুলিশ সদস্যদের দিকে একটি লাঠি হাতে তেড়ে আসছেন। এ সময় সশস্ত্র পুলিশ সদস্যরা তার ওপর ঝাপিয়ে পড়েন। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে গুলির শব্দও শোনা যায়।
Currently in Sipajhar, taking stock of the ground situation.
The cameraman who was seen attacking an injured man in a viral video has been arrested.As per wish of Hon. CM @himantabiswa I have asked CID to investigate the matter.
Cameraman Bijoy Bonia is in @AssamCid ‘s custody.— DGP Assam (@DGPAssamPolice) September 23, 2021
হামলায় মইনুল হক মারা যান। তিনি সিপাঝারের ঢলপুর-৩ এ বসবাস করতেন। পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়ার আগে বুধবার রাতে মুসলিম অধ্যুষিত ঢলপুরের বাসিন্দাদের উচ্ছেদের নোটিশ দেওয়া হয়।
বিবিসির সূত্র মতে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসাম রাজ্যের দরং জেলায় একটি সুবিশাল শিবমন্দির নির্মাণের লক্ষ্যে হাজার হাজার বাঙালি মুসলিমকে তাদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করার পর বৃহস্পতিবার সেই আশ্রয়চ্যুতদের বিক্ষোভে পুলিশ গুলি চালিয়েছে।
স্থানীয় সাংবাদিকরা পুলিশের গুলিতে অন্তত দুজনের মৃত্যু ও আরও বেশ কয়েকজনের আহত হওয়ার খবর জানাচ্ছেন। রাজ্যের বিরোধী দল কংগ্রেসের সভাপতিও এই হত্যাকান্ডের খবর টুইট করেছেন।
সূত্র মতে, গতকাল বৃহস্পতিবার রীতিমতো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে উচ্ছেদ অভিযানে নামে পুলিশ। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর এলাকার মানুষ বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। পুলিশের দাবি, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে অস্ত্র ছিল। তাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্রও ছিল।
Fact Asam: Oppressed peasants and hateful journalist!#asam pic.twitter.com/8eZwI24nP0
— Nur Nobi Dulal (@nndulal) September 25, 2021
যদিও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, বিক্ষোভকারীদের হাতে লাঠি এবং পাথর ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, প্রথমে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে শূন্যে গুলি চালানো হয়। কাঁদানে গ্যাসের শেলও ফাটানো হয়। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা পাল্টা পুলিশের উপর আক্রমণ চালায়। ফলে বাধ্য হয়েই গুলি চালাতে হয়। তাতেই দুইজনের মৃত্যু হয়।
আপনার মতামত জানানঃ