জলবায়ু সংকট, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং কোভিড মহামারী পুষ্টির অগ্রগতিকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে বলে জানায় ইউনিসেফ। অনেক উন্নয়নশীল দেশেও দুই বছরের নিচে মাত্র এক তৃতীয়াংশ শিশু তাদের সুস্থ বৃদ্ধির জন্য যা প্রয়োজন তা পাচ্ছে এবং গত এক দশকে তাদের পুষ্টিক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
ইউনিসেফের গতকাল বুধবারের প্রতিবেদন মতে, বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর ৬ থেকে ২৩ মাস বয়সী অর্ধেক শিশুকে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় নূন্যতম খাবার খাওয়ানো সম্ভব হয়নি, এমনকি তারা নূন্যতম চাহিদা পূরণের জন্য খুব স্বল্প খাবার পেয়েছে। তাছাড়া এ বয়সী শিশুদের যে রকম বৈচিত্র্যময় খাবার প্রয়োজন, তা খেতে পায় না অর্ধেকের বেশি শিশু। জলবায়ু সংকট, স্থানীয় বা আঞ্চলিক সংঘর্ষের পাশাপাশি করোনার কারণে এ সমস্যা আরও বেড়েছে।
খাদ্যাভাসের এই অপ্রতুলতার কারণে শিশুরা স্কুলে পিছিয়ে পড়তে পারে, অসুস্থতার ঝুঁকিতে পড়তে পারে এবং অপুষ্টির প্রভাবজনিত সমস্যা-অতিরিক্ত ওজন বা স্থুলকায় এবং স্বাভাবিক বৃদ্ধিজনিত সমস্যায় পড়তে পারে।
ইউনিসেফের মতে, বিশ্বে ২ বছর কম বয়সী ১ কোটি ১০ লাখ শিশু অপুষ্টিজনিত সমস্যার কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে। ইউনিসেফ-ইউকে এর স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শক জেনিভন বলেন, সারা বিশ্বে লাখ লাখ দরিদ্র শিশুর বিকাশ ও পরবর্তী জীবন সীমিত পুষ্টির দ্বারা প্রভাবিত হয়। গবেষণায় দেখা যায়, গ্রামীণ বা দরিদ্র পরিবারের শিশুদের পুষ্টি সবচেয়ে খারাপ। ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ৬ থেকে ২ মাস বয়সী ৬২শতাংশ শিশু নূন্যতম খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে পারে এবং আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ায় এই হার ১৯ শতাংশের কম।
আগামী ৫ বছরে ৫ কোটি শিশুর জন্য পর্যাপ্ত খাদ্যের জোগান দিতে দরকার ৬০ কোটি পাউন্ড। এ জন্য ইউনিসেফের তহবিলে যুক্তরাজ্যকে বরাদ্দ বাড়াতে আহ্বান জানিয়েছেন সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ নীতি নির্ধারক জেনি ভন। প্রসঙ্গত, ইউনিসেফের অন্যতম বড় দাতা দেশ যুক্তরাজ্য। চলতি বছরের মে মাসে দেশটি এ বাবদ বরাদ্দ কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। ফলে ২০১৯ সালের তুলনায় চলতি বছর সংস্থাটির তহবিল ১০ কোটি ডলার কমতে পারে বলে জানিয়েছে দেশটির দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন।
পরিসংখ্যানে জানা যায়, পুষ্টির অভাবে শিশুরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস ও অপুষ্টিতে ভোগার আশঙ্কায় বেশি থাকে। রক্তস্বল্পতাসহ নানা রোগেও আক্রান্ত হয়ে থাকে।পুষ্টি ও প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলেন, অপুষ্টির শিকার মা ও শিশুর সংখ্যা আগের তুলনায় কমলেও তা খুব বেশি ইতিবাচক নয়। পুষ্টির চাহিদা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে ভাতের ওপর চাপ কমবে এবং শিশুদের মেধার বিকাশ ঘটবে।
অপুষ্টির কারণে শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে শিশুদের। স্বাস্থ্যখাতে অগ্রগতি হলেও পুষ্টি পূরণের ক্ষেত্রে অনেক দেশ পিছিয়ে রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৬৪৬
আপনার মতামত জানানঃ